জেলা প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ার ঐতিহ্যবাহী মোহিনী মিলের মুল্যবান যন্ত্রাংশের চুরি বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছেন মোহিনী মিলস এলাকার স্থায়ী বাসিন্দারা। গতকাল বিকেলে স্থানীয় বাসিন্দাদের একটি প্রতিনিধি দল জেলা প্রশাসক মো. তৌফিকুর রহমানের সাথে সরাসরি সাক্ষাত শেষে অর্ধ শতাধিক এলাকাবাসীর স্বাক্ষর সম্বলিত আবেদন পত্রটি জমা দেন।
সাক্ষাতে অংশ নেওয়া প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন স্থানীয় বাসিন্দা আলম মালিথা। দলের অনান্য সদস্যরা হলেন- মো. রিপন, আব্দুল আলিম, খোকন গুপ্তা, যুবরাজ হোসেন বাপ্পি, হেলাল উদ্দিন প্রমুখ।
আবেদন পত্রের বরাত দিয়ে জানা যায়, ১৯৮২ সালে মিলটি বন্ধ করে দেওয়ায় পর লোকসানের দায়ে ১৯৮৪ সালে প্রথমবার মিলটি এক শিল্পপতির কাছে বিক্রি করে দেয় সরকার। এরপর বিভিন্ন সময় ৬ বার হাত বদল হলেও মিলটি আর সরকারের পক্ষে চালু করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে মিলটি পাট মন্ত্রণালয়ের অবসায়ন শাখার তত্ত্বাবধানে রয়েছে। সঠিক নজরদারী ও তদারকির অভাবে এরই মধ্যে কারখানার প্রায় অর্ধেক জমি বেদখল হয়ে গেছে। এখনো কারখানার মূল অংশসহ বাইরের কিছু জায়গা মিলে প্রায় ৫০ বিঘা জমি সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে। এছাড়া মিলের অনেক মুল্যবান যন্ত্রাংশ ইতিমধ্যে চুরি হয়ে গেছে। ৫ আগষ্ট সরকার পতনের পর থেকে এই মিলে যন্ত্রাংশ চুরির হিড়িক লেগেছে।
আবেদন পত্রে এলাকাবাসীরা আরো উল্লেখ করেছেন, মিলের মূল্যবান যন্ত্রাংশ ভর্তি গোডাউন গুলোর অধিকাংশ ইতিমধ্যে ফাঁকা হয়ে গেছে। যে গোডাউন গুলোতে এখনো মালামাল রয়েছে সেগুলোতেও প্রতিনিয়ত চুরির ঘটনা ঘটেই চলেছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে সেগুলোও ফাঁকা হওয়ার পথে। কোন ভাবেই চোরের লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হচ্ছে না। নিরাপত্তার দায়িত্বে যারা নিয়োজিত আছেন তারাই যদি আর্থিকভাবে অতিরিক্ত লাভবান হওয়ার আশায় চুরি করতে সহযোগিতা করেন তাহলে মূল্যবান যন্ত্রাংশ ভর্তি গোডাউন গুলো ফাঁকা হওয়াটাই স্বাভাবিক। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর মিলের মুল্যবান মটর, মটরের ভিতরের অংশের তামা, স্প্রিং, ঢালাই, প্রিমিয়াম ভর্তি ৩ বস্তা মালামালসহ চোরদের আটক করে এলাকাবাসীরা। এ ঘটনার কিছুদিন আগে ১শ কেজি তামার তার চুরি করে পালানোর সময় এলাকাবাসীদের একাংশ চোরদের ধাওয়া করে। চোর বস্তাগুলো ফেলে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে উদ্ধারকৃত মালামাল মোহিনী মিল ক্যাম্পে দিয়ে আসে এলাকাবাসীরা। তারপরও নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত রক্ষীদের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। লক্ষ লক্ষ টাকার মূল্যবান এসব সম্পদের চুরি রোধ করা অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে। তাছাড়া মিল ও মিলের চারপাশের এলাকাগুলোতে চরমভাবে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত চুরি ও ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটছে।
জেলা প্রশাসকের সাথে সাক্ষাত শেষে প্রতিনিধি দলের প্রধান আলম মালিথা প্রতিবেদককে জানান, জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। জনগণের এই সম্পদ রক্ষার্থে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।