চ্যানেল7বিডি ডেক্স: ঢাকা, ২৮ জানুয়ারি ২০২৫ (বাসস): স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনা সরাসরি গুম ও হত্যার নির্দেশ দিতেন, এমন ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) প্রতিবেদন থেকে।
আজ ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এইচআরডব্লিউ’র এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ইলেইন পিয়ারসনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। তারা ‘জুলাই বিপ্লব’ নিয়ে তৈরি প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করেন। প্রতিবেদনে শেখ হাসিনার শাসনামলে ঘটে যাওয়া গুম, হত্যাসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
শেখ হাসিনার নির্দেশেই গুম ও হত্যা
এইচআরডব্লিউ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, শেখ হাসিনার শাসনামলে গুমের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা সংস্থাটিকে জানিয়েছেন যে, “নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে শেখ হাসিনা বা সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানতেন এবং কিছু ক্ষেত্রে হাসিনা সরাসরি গুম ও হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন।”
মানবাধিকার উন্নয়নে সংস্কারের প্রশংসা
এইচআরডব্লিউ’র প্রতিনিধি দল দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার কর্মসূচির প্রশংসা করেছে। এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ইলেইন পিয়ারসন বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ মানবাধিকারের গুরুত্ব আরও ভালোভাবে উপলব্ধি করছে। আপনারা যে সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছেন, তা প্রশংসনীয়।”
র্যাব বিলুপ্তির সুপারিশ
এইচআরডব্লিউ র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) বিলুপ্তির সুপারিশ করেছে। সংস্থাটি বলেছে, “গুম ও হত্যার জন্য দায়ী কর্মকর্তাদের আইনের আওতায় এনে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।”
প্রধান উপদেষ্টার প্রতিশ্রুতি
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “গত ১৬ বছরের স্বৈরাচারী শাসনের অপরাধগুলো উন্মোচনে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আমরা উন্মুক্ততা এবং স্বচ্ছতায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জনগণের চাহিদা অনুযায়ী সংস্কার কার্যক্রম পরিচালিত হবে।”
তিনি আরও বলেন, “র্যাব তাদের অপরাধের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছে, তবে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং গুমের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি পেতে হবে।”
প্রতিষ্ঠানিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা
ইলেইন পিয়ারসন বলেন, “২০০৯-২০২৪ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনার শাসনামলে নিরাপত্তা বাহিনী রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত ছিল। এটি বন্ধ করতে এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার অত্যন্ত জরুরি।”
রোহিঙ্গা সংকট ও নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠা
প্রধান উপদেষ্টা রাখাইনে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য একটি নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান। তিনি আশা প্রকাশ করেন, জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি এই অঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
উপসংহার
এইচআরডব্লিউ’র প্রতিবেদন শেখ হাসিনার শাসনামলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছে। একই সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার কর্মসূচি দেশের মানবাধিকার পুনরুদ্ধারে একটি নতুন দিগন্তের সূচনা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তথ্যসূত্র: বাসস