স্টারলিংক বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবস্থায় বিপ্লব আনতে পারে: প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মতামত

চ্যানেল7বিডি ডেক্স: বাংলাদেশে দ্রুতগতির ও স্বল্প-বিলম্বিত ইন্টারনেট সংযোগের নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে স্টারলিংক। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নন-জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট অরবিট (NGSO) প্রযুক্তি দেশের ডিজিটাল পরিকাঠামোকে আধুনিক করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

উচ্চগতির ইন্টারনেটের সম্ভাবনা
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্টারলিংকের মাধ্যমে ডাউনলোড গতি ২৫ থেকে ২২০ এমবিপিএস পর্যন্ত হতে পারে, যেখানে অধিকাংশ ব্যবহারকারী ১০০ এমবিপিএসের বেশি গতি পেতে পারেন। আপলোড গতি সাধারণত ৫ থেকে ২০ এমবিপিএস পর্যন্ত হতে পারে।

বাংলাদেশে স্টারলিংকের সম্ভাব্য কার্যক্রম
সম্প্রতি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্পেসএক্সের মালিক ইলন মাস্কের সঙ্গে এক ভিডিও আলোচনায় অংশ নেন। সেখানে বাংলাদেশের জন্য স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়।

টেলিকম বিশ্লেষক মোস্তাফা মাহমুদ হুসাইন বলেন, বাংলাদেশ ডিজিটাল সংযোগ বৃদ্ধির জন্য NGSO স্যাটেলাইট প্রযুক্তির দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। নমনীয় নীতিমালা বাস্তবায়ন করা গেলে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা এবং সামাজিক অন্তর্ভুক্তি আরও সম্প্রসারিত হবে।

প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগের বিকল্প সমাধান
টেলিকম বিশেষজ্ঞ লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ জুলফিকার বলেন, স্টারলিংক বাংলাদেশের প্রত্যন্ত ও দুর্গম অঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগের একটি কার্যকর সমাধান হতে পারে।

মোবাইল অপারেটর বাংলালিংক এবং দুবাই-ভিত্তিক একটি টেলিযোগাযোগ কোম্পানি ইতোমধ্যে স্টারলিংকের সঙ্গে পার্টনারশিপের সম্ভাবনা পরীক্ষা করছে। স্পেনের মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে এ সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে।

স্টারলিংক ইন্টারনেট পরিষেবার মূল্য ও সরঞ্জাম

স্টারলিংকের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, পরিষেবা পেতে স্টারলিংক কিট কিনতে হবে, যার মধ্যে অ্যান্টেনা, রাউটার, কেবল ও পাওয়ার সাপ্লাই অন্তর্ভুক্ত। এর দাম ৩৪৯ থেকে ৫৯৯ ডলার হতে পারে।

বাংলাদেশে স্টারলিংকের মূল চ্যালেঞ্জ হতে পারে সেবার মূল্য। রেসিডেনশিয়াল গ্রাহকদের জন্য মাসিক ফি ১২০ ডলার। তবে আফ্রিকার কিছু দেশে স্টারলিংক মাত্র ১০-৩০ ডলারে সেবা দিচ্ছে, যা বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের জন্যও সম্ভাব্য হতে পারে।

বাংলাদেশে স্টারলিংকের আগ্রহ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
২০২৩ সালে পরীক্ষামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে স্টারলিংক বাংলাদেশে তাদের প্রযুক্তি নিয়ে আসে। ২০২৪ সালের অক্টোবরে তাদের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করে এবং বিটিআরসি (BTRC) নন-জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট পরিষেবার জন্য একটি খসড়া নির্দেশিকা প্রস্তুত করে।

অধ্যাপক ইউনূস ও ইলন মাস্কের আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় তরুণ উদ্যোক্তা, গ্রামীণ জনগোষ্ঠী ও সুবিধাবঞ্চিত নারীদের জন্য স্টারলিংকের সম্ভাব্য ইতিবাচক প্রভাবের ওপর। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পরিষেবা বাংলাদেশের ডিজিটাল বিভাজন কমিয়ে আনবে এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অর্থনীতিতে বিপ্লব ঘটাতে পারে।

তথ্যসূত্র: বাসস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com