সাঘাটায় এলজিইডি-পাউবোর টানাপোড়নে ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক

আনোয়ার হোসেন রানা,গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরের (এলজিইডি) দায়িত্ব নিয়ে টানাপোড়েনের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে গাইবান্ধার সাঘাটা-জুমারবাড়ি সড়ক। পাউবো বাঁধের উপর এলজিইডির নির্মিত ৫ কিলোমিটার অংশের পাকা সড়কের প্রায় অর্ধশত স্থানে ধসে গেছে। এর মধ্যে একটি স্থানে বড় আকারে ধসে যাওয়া যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

সাঘাটার ডাকবাংলা থেকে জুমারবাড়ি পর্যন্ত সড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়কপথ। এই সড়কটি একদিকে যেমন বন্যা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। অন্যদিকে গাইবান্ধা থেকে বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও মোকামতলা হয়ে বগুড়ার যাতায়াতের অন্যতম যোগাযোগ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। প্রতিদিন সিএনজি,বাস,ট্রাকসহ বিভিন্ন ধরণের পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল করলেও গত সপ্তাহ থেকে বৃষ্টির পানি জমে সড়কের প্রায় অর্ধশত স্থানে ভেঙ্গে ধসে

যাওয়ায় বড় যানবাহন চলাচল পুরোপুরিভাবে বন্ধ হয়ে পড়েছে। কোনোমতে মোটরসাইকেল, অটোরিকশা চললেও গত একমাসে ১৬ দুর্ঘটনায় ৪০ জন আহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।

সাঘাটার সিএনজি চালক হাফিজার রহমান বলেন, সাঘাটা ডাকবাংলা থেকে প্রতিদিন নিয়মিত ৪০ থেকে ৫০টি সিএনজি জুমারবাড়ি হয়ে বগুড়ায় চলাচল করে। কিন্তু সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে চলাচল এখন প্রায় বন্ধ।এতে করে যাত্রীদের বিড়ম্বনার সাথে আমাদের আয় রোজগারও বন্ধ হয়েছে।

সাঘাটা বাজারের ব্যবসায়ী আকতার হোসেন বলেন, ঢাকা থেকে মালামাল ট্রাকে করে সাঘাটা বাজারে আনতে জুমারবাড়ি সড়কটি ব্যবহার করা হতো। কিন্তু এখন চলাচল বন্ধ হওয়ায় গোবিন্দগঞ্জ, পলাশবাড়ি, গাইবান্ধা, ভরতখালী হয়ে ৭০ কিলোমিটার ঘুরে আসতে সময় ও অর্থ দুটোই বেশি লাগছে।

জুমারবাড়ি বাজারের লিটন মিয়া বলেন, গতবছর সড়কটি সংস্কার হয়েছে আর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি মেরামত কাজ চললেও দেখে মনে হবে না এটিতে আসলে কি হয়েছে। কাজের মধ্যেই ধসে যাচ্ছে। শেষ হলে তো আর কেউ দেখবে না। তবে, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় সড়কটি দুর্বল হয়ে পড়ে এক বছরের মধ্যে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে বলে তিনি জানান। স্থানীয়রা ধসে যাওয়া স্থানে বালুর বস্তা ও লাল কাপড় দিয়ে সতর্ক সংকেত করে দিয়েছেন।

সাঘাটা বাজারের জাকির হোসেন জানান, জুমারবাড়ির সাথে সাঘাটা থানার একমাত্র সড়ক এটি। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের তদারকির অভাবে সড়ক আরো বেশি ঝুঁকিপর্ণ হয়ে উঠছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডসূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালে সাঘাটার বাঁশহাটা থেকে জুমারবাড়ি পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি সংস্কারের ২৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পগ্রহণ করে। প্রথমে বাঁধের পাশ থেকে মাটি তুলে সংস্কার করা হলেও পরবর্তীতে যমুনা নদী থেকে বালু এনে সংস্কার করা হয়। তবে, বাঁধের পাশের মাটি কেটে বাঁধে দেওয়ায় বাঁধটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান।

এলজিইডির সাঘাটা উপজেলা প্রকৌশলী নয়ন রায় জানান, এই মুহূর্তেসংস্কার বা মেরামত করার সুযোগ নেই, কেন না এই বাঁধটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পানি উন্নয়ন বোর্ডের। এলজিইডি শুধুমাত্র পাকা রাস্তা সংস্কার করতে পারবে কিন্তু বাঁধের বড় বড় গর্তসংস্কারের দায়িত্বও তাদের। এজন্য তিনি পাউবোকেই এগিয়ে আসার কথা জানান।

এদিকে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক বলেন, বৃষ্টির কারণে বাঁধটির ক্ষতি হয়েছে এবং ইতোমধ্যে এটির সংস্কার কাজ শুরু করা হয়েছে। এটির পরবর্তী দায়িত্ব এলজিইডিকেই নিতে হবে। কেন না আগে বাঁধের দুপাশেই পানি নামতো। কিন্তু এখন পূর্বপাশে উচু করে দেওয়ায় পানি একদিকে গড়ছে এতে করে ধসে যাচ্ছে। এজন্য এলজিইডির উচিত পানি নিষ্কাশনে পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *