সাঘাটায় ইউনিয়ন বিএনপি’র কাউন্সিল স্থগিত,দুই গ্রুপের পাল্টাপাল্টি অবস্থান

আনোয়ার হোসেন রানা,গাইবান্ধা‌ প্রতিনিধিঃ গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ৩ নং সাঘাটা ইউনিয়ন বিএনপি’র কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে কাউন্সিল স্থগিত করা হয়েছে। গত রোববার রাতে জেলা বিএনপি’র সভাপতি মৌখিকভাবে নির্বাচন কমিশনকে কাউন্সিল স্থগিতের কথা জানান।

সাঘাটা ইউনিয়নের নেতৃত্ব ও নির্বাচনকে ঘিরে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি অবস্থান,মিছিল ও সমাবেশ করেন সাঘাটা বাজার এলাকায়। এতে উত্তেজনা বিরাজ করেছে পুরো এলাকায়। রোববার সকালে সাঘাটা ইউনিয়ন বিএনপি’র (একাংশ) মানববন্ধন বিক্ষোভ ও কর্মসূচি পালন করলে, ঐদিন বিকেলে অপরপক্ষ সাঘাটা বাজারে পাল্টা বিক্ষোভ মিছিল ও সংবাদ সম্মেলন করেন মৌলভীবাজার এলাকায়। ফলে জেলা বিএনপি’র হস্তক্ষেপে সোমবার নির্ধারিত কাউন্সিল মৌখিক ভাবে স্থগিত করে দেন উপজেলা বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ। 

জানা যায়,৩ নং সাঘাটা ইউনিয়ন বিএনপি’র একাংশ অভিযোগ করেন,স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার ঘনিষ্ঠ রেজাউল করিম রনিকে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হওয়ায় অপর পক্ষের দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পরিচালনা কমিটির মতে, রনির আ.লীগে সংশ্লিষ্টতা না থাকায় কাউন্সিল পরিচালনা কমিটি তাকে বৈধ প্রার্থী ঘোষণা করেন। এতে আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয়। একই সঙ্গে সভাপতি পদে দুইজন মনোনয়ন ক্রয় করেন তারা হলেন, নজরুল ইসলাম বাবু ও রবিউল আউয়াল সুজন। নির্বাচন কমিশনার মনোয়নপত্র দেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই উপজেলা বিএনপি’র আহবায়ক মোহাম্মদ আলী, সুজনের উদ্দেশ্যে বলেন, “তুমি ইউনিয়ন কৃষকদলের আহবায়ক,তোমার ইউনিয়নে নির্বাচন করা ঠিক হবে না!” এই বলে তার মনোনয়নটি পুনরায় জমা নিলে,সেখানে বাক-বিতণ্ডের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে,সভাপতি পদে রবিউল আউয়াল সুজন তার মনোনয়নপত্র ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেন ঐ কমিটির বিরুদ্ধে। এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইউনিয়ন বিএনপি’র একপক্ষ কাউন্সিল বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। 

এসময় বক্তব্য রাখেন,সাঘাটা ইউনিয়ন বিএনপি’র আহবায়ক ইদ্রিস আলী ঠান্ডু, সদস্য সচিব আতিকুর রহমান,জাহাঙ্গীর আলম, রবিউল আউয়াল সুজনসহ আরও অনেকে। 

বক্তারা বলেন,“সাঘাটা ইউনিয়ন কাউন্সিলের ভোটে সাধারণ সম্পাদক পদে আওয়ামী লীগের সাথে সংশ্লিষ্টতা আছে এমন ব্যক্তির প্রার্থীতা বৈধ করা হয়েছে এবং সভাপতি পদে সুজনের মনোনয়নপত্র ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। এই অনিয়মে আমরা কাউন্সিল স্থগিত চাই।”

অপরদিকে,একইদিন (সোমবার) সাঘাটা ইউনিয়ন বিএনপি’র আরেক পক্ষ দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন বানচাল চেষ্টার প্রতিবাদে সাঘাটা বাজারের সোনালী ব্যাংকের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন। রোববার ১৩ (জুলাই) বিকালে ৩ নং সাঘাটা ইউনিয়ন বিএনপি’র আয়োজনে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন,যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম রিমেট,কারানির্যাতিত সাবেক ছাত্রনেতা রেজাউল করিম রনি,সাঘাটা ইউনিয়ন বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক ও শ্রমিক দলের সভাপতি সফের আলী,সাঘাটা ইউনিয়ন বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবু,রোকনুজ্জামান রোকন,ইউনিয়ন যুবদল সদস্য সচিব সোহেলসহ ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সকলস্তরের নেতৃবৃন্দ।

এ সময় বক্তারা বলেন,“দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন দলের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দল আরও সক্রিয় ও গতিশীল হবে। সম্মেলনকে ঘিরে যেকোনো বাধা চক্রান্ত মোকাবিলায় নেতাকর্মীরা প্রস্তুত রয়েছে।”

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত অভিযোগে বক্তরা আরো বলেন,“সব নিয়ম কানুন মেনে যাচাই-বাচাই শেষে,সোমবার ১৪(জুলাই) ইউনিয়ন বিএনপি’র কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু বিএনপি’র একটি অংশ এই দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে কাউন্সিলরদের ভোটে জয়ী হতে পারবেনা জেনে ইউনিয়ন বিএনপির এ দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন বানচালের চেষ্টা করছে।”

সাবেক ছাত্রনেতা রেজাউল করিম রনি বলেন, “আমি দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি’র রাজনীতি করেছি। সাঘাটায় সর্বোচ্চ হামলা-মামলার শিকার হয়েছি, এখনো আমার নামে বেশ কয়েকটি মামলা চলমান। নির্বাচন কমিশন যাচাই-বাছাই করে আমার প্রার্থিতার বৈধতা দেন,তারপরও কিছু কুচক্রী মহল আমার সাথে হেরে যাওয়ার ভয়ে বিভিন্ন প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে।”

তারা আরও বলেন,“রোববার দুপুরে যে অভিযোগ তুলে ধরে বিএনপি’র যে অংশ বিক্ষোভ মিছিল,মানববন্ধান ও সংবাদ সম্মেলন করেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা,বানোয়াট,ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রনোণীত। তারা অন্যান্য ইউনিয়ন থেকে লোকজন নিয়ে এসে কাউন্সিলকে পন্ড করার জন্য পরিকল্পিতভাবে এই বিক্ষোভ মিছিল করেন,আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।সেই সাথে নির্বাচন কমিশন যে দিন যে সময় দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনের ঘোষণা দিয়েছেন তার আমারা বাস্তবায়ন চাই। কুচক্রী মহলের যেকোন বাধা,চক্রান্ত উপেক্ষা করে নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন সফল করতে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সজাগ থাকার আহ্বান করছি।”

এ বিষয়ে,কাউন্সিল পরিচালনা কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট সাহাদুল আলম বলেন,“অভিযোগুলো তার কাছে এসেছে,এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।”

সাঘাটা উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক আলহাজ্ব মোহাম্মদ আলী বলেন,“তিনি এসব বিষয়ে অবগত নন এবং হতাশ প্রকাশ করেছেন।”

গাইবান্ধা জেলা বিএনপি’র সভাপতি অধ্যাপক ডা.মইনুল হাসান সাদিক বলেন,“অভিযোগ শুনেছেন এবং বিস্তারিত জানার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে তিনি স্পষ্ট করেছেন যে,আওয়ামী লীগের কোনো কর্মী বিএনপি’র প্রার্থী হতে পারবেন না। সেইসাথে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় কাউন্সিল স্থগিত রাখার পরামর্শ দেন।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *