নিজস্ব প্রতিবেদক : সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের আওতায়ধীন সওজ’র নওগাঁ জেলার উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. রায়হান মিয়া ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে বাড়ি, ফ্ল্যাট, গাড়ি, জমিসহ গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। রয়েছে অবৈধভাবে ঘুষ বাণিজ্য, দুর্নীতি, সরকারি রাস্তার কাজ না করে ঠিকাদারদের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করে ভাগবাটোরা মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও। তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যেন নিরব দর্শক।
প্রকৌশলী রায়হান মিয়া রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার সরহাট্টা দুর্গাপুর গ্রামের মোহাম্মদ মোস্তাব আলীর ছেলে।
৫আগস্ট ছাত্রজনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৭ অক্টোবর সোলাইমান মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ সুলতান মিয়া নওগাঁ সদর জেলার, প্রকৌশলী রায়হানের অবৈধ সম্পদের তথ্য দিয়ে সড়ক জনপদ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছে তার বিরুদ্ধে একটা লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, প্রকৌশলী রায়হান মিয়া চাকরির শুরু থেকে তদবির বাণিজ্য, ঘুষ-দুর্নীতি ও অবৈধভাবে সরকারি টাকা আত্মসাৎ সহ বিভিন্নভাবে অর্থ উপার্জন করে বাড়ি, ফ্ল্যাট, জমি, গাড়ি সহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। তিনি সিন্ডিকেট করে সংশ্লিষ্ট বিভাগের উচ্চ পর্যায়ে কর্মকর্তাদেরকে ম্যানেজ করে এসব কাজ করছেন।
অভিযোগের উল্লেখ করা হয়, ২০২৩-২০২৪ সালের করবর্ষে আয়কর রিটার্ন মূলে তার স্থায়ী সম্পদে ২০৩ শতাংশ জমি রয়েছে, যার মূল্য দেখিয়েছেন ১০ লাখ ১২ হাজার টাকা। রয়েছে একটি এফজেড-ভি-৩ গাড়ি (রেজিস্ট্রেশন নম্বর নওগাঁ- ল-১২১৬/৮১) যার মূল্য দেখিয়েছেন ২ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। রয়েছে ৪১ ভরি স্বর্ণ, যার মূল্য দেখিয়েছেন ১ লাখ ৫০হাজার টাকা। এছাড়াও তার বহিঃর্ভূত নগদ অর্থ ও তহবিল প্রদর্শন করেছেন ৫০ লাখ ৯০ হাজার ৫৫৪ টাকা। তিনি ২০২৩ ও ২০২৪ সালের অর্থবছরের তার নিকট নিট সম্পদ আয়কর নথিতে প্রদর্শন করেছেন ৭৭ লাখ ৬৮ হাজার ৫৫৪ টাকা। অথচ; এসবের বাইরেও রায়হান অনেক সম্পদের মালিক। সেগুলো তার স্ত্রী, আত্মীয়-স্বজনের নামে রেখেছেন। এইসব সম্পদ ঘুষ-দুর্নীতি, তদবির বাণিজ্য ও সরকারি টাকা আত্মসাৎ করে উপার্জন করেছেন। অভিযোগে আরো জানা গেছে, তার গ্রামের বাড়ি দুর্গাপুর বাজার সংলগ্ন আজগর আলী কাছ থেকে ২০ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। যার বাজার মূল্য ৬০ লক্ষ টাকা। তার স্ত্রীর নামে বিলাশবহু গাড়ি রয়েছে। যার নাম্বার ঢাকা মেট্রো- চ- ৫২- ১১ ২০। উল্লেখ্য রায়হান মিয়ার বিরুদ্ধে শত শত অভিযোগ ও দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ের জমা প্রদান করা হলেও তা দুর্নীতি দমন কমিশনের কার্যালয় এর অসাধু-কর্মচারীদের দিয়ে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে অভিযোগ গুলো ধামাচাপা দিয়ে রাখেন। এমনকি অভিযোগগুলো গোপনে তুলে নেন। রায়হান সাংবাদিকদের কে বলেন, আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই। যেসব অভিযোগ রয়েছে অর্থের বিনিময় ম্যানেজ করে রেখেছি। তাই আমার বিরুদ্ধে পত্রিকা লেখালেখি করে কোন প্রকার লাভ হবে না। অভিযোগকারী জানান, তার খুঁটি জোর কোথায় ? রায়হান মিয়া একের পর এক দুর্নীতি ও অনিয়মের করে তার নিকটতম অফিসের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছে। অভিযোগে আরো জানা গেছে, রায়হানকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করে থাকেন নওগাঁ জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী সড়ক জনপদ বিভাগ এর রাশেদুল ইসলাম ও আরো কয়েকজন প্রভাবশালী সড়ক জনপদ বিভাগের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। এছাড়াও তার নানা সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর বলে তিনি সাংবাদিকদের হুমকি দেন। রায়হান সাংবাদিকদের হয়রানি করার জন্য পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনী সদস্যদের সহযোগিতা নিয়ে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হামলা করে তার অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানের বিষয়ে বাধা প্রদান করেই যাচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে এত অভিযোগ থাকার সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা কেন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না এই নিয়ে জনগণের মনে বিভ্রান্তিকর সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগে আরও জানান, তিনি নিজস্ব পছন্দের ঠিকাদার ও কমিশন ছাড়া কোনো কাজ প্রদান করেন না। কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত অফিস কর্মকর্তাদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন নিজস্ব একটি সিন্ডিকেট। করেন নিজ বিভাগ ছাড়াও বিভিন্ন বিভাগের নিয়োগ তদবির।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, প্রকৌশলী রায়হান মিয়ার সিন্ডিকেটের কাছে নওগাঁ সড়ক ও জনপথ বিভাগটি জিম্মি হয়ে আছে। এই বিভাগের উচ্চ পর্যায়ে কর্মকর্তারই যে কোনো টেন্ডার, মেরামতের কাজসহ বিভিন্ন কাজে তার দ্বারস্থ হয়। বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও রায়হানের মাধ্যমে অবৈধভাবে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এহেন কার্যকলাপে সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঠিকাদারাও এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন। এতে করে সব দিকে লাভবান হচ্ছেন রায়হান।
তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, রায়হানের পছন্দের নিয়োজিত ঠিকাদার ছাড়া কোন ঠিকাদার এখানে কাজ করতে পারেন না। তার শক্তিশালী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলতেও সাহস পায় না। প্রতিবাদ করতে গেলে তাকে মারধর বা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়। শক্তিশালী সিন্ডিকেটের কমিশন বাণিজ্যে রায়হান মিয়া অল্প দিনে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে।
রায়হানের বাড়ি মিঠাপুকুরের সরহাট্টা দুর্গাপুর গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, চাকুরির আগে তার বাবা সংসার চালাতে হিমশিম খেলেও চাকরি পাওয়ার পর থেকে যেন তাদের ভাগ্য খুলে যায়। এলাকার মানুষকে কোন পরোয়াই করেন না রায়হান ও তার পরিবারের সদস্যরা। এলাকায় কোনো জমি বেচাকেনায় তার জন্য কেউ কিনতে পারেনা। একারণে এলাকার মানুষ রায়হান মিয়াকে টাকার কুমির বলে আখ্যা দিয়েছে।
এলাকাবাসীরা জানান, দুর্গাপুর বাজারের আজগর আলী ও বকুল মিয়া তাদের জমি বিক্রি করতে চাইলে এলাকার কয়েকজন জমিটি ক্রয়ের প্রস্তাব করেন। তারা জমিটি ক্রয়ে দাম করে চুড়ান্ত করলেও রায়হান মিয়া বিষয়টি জানাতে পেরে চুড়ান্ত দামের দিগুন টাকা দিয়ে ওই জমিটি কিনে নেয়।
এসব অভিযোগের বিষয়ে রায়হান মিয়া বলেন, ‘আমি এত সম্পদের মালিক নই। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে কেউ হয়তো অপপ্রচার করছে।’
অভিযোগকারী ও এলাকাবাসীরা মনে করেন, আওয়ামী লীগ আমলে চাকুরি পাওয়া রায়হান মিয়া ও তার সিন্ডিকেটের বিষয়ে সঠিক তদন্ত করলে তাদের অবৈধ সম্পদের তথ্য বেড়িয়ে আসবে। একজন উপ-সহকারি প্রকৌশলী চাকুরি পেয়ে অল্প সময়ের মধ্যে কিভাবে বিপুল বিত্ত-বৈভবের মালিক হলেন বিষয়টির সুষ্ঠ তদন্ত করে জনগণকে জানানো প্রয়োজন।