সচিবালয়ে রহস্যময় অগ্নিকাণ্ড: তদন্তে খোঁজা হচ্ছে সূত্র

অনলাইন ডেক্স: সচিবালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক স্থাপনায় সম্প্রতি ঘটে যাওয়া অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার উৎস সন্ধানে সরকারি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। পোড়া ভবন থেকে প্রাপ্ত আলামত বিশ্লেষণসহ সম্ভাব্য সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

তদন্তের অগ্রগতি
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, অগ্নিকাণ্ডের পর থেকেই বেশ কয়েকটি বিষয় সামনে রেখে তদন্ত কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন আগামীকাল জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।

সরকারের গঠিত তদন্ত কমিটির একজন সদস্য জানান, “তদন্তের কাজ চলছে, যথাসময়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।

তদন্তে যে বিষয়গুলো গুরুত্ব পাচ্ছে:
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নাশকতা ছিল কি না।
শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে কি না।
নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কারও অবহেলা ছিল কি না।
ই-নথির যুগে মন্ত্রণালয়ের হার্ডকপি নথি ধ্বংসের উদ্দেশ্য ছিল কি না।
কোটা ইস্যু বা ক্যাডার বিরোধের কোনো যোগসূত্র রয়েছে কি না।

রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা
অনেকেই মনে করছেন, অস্থিরতা সৃষ্টির লক্ষ্যে রাজনৈতিক মহল এই অগ্নিকাণ্ড ঘটাতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা প্রমাণ এবং অরাজক পরিস্থিতি তৈরির লক্ষ্যেও এটি করা হয়ে থাকতে পারে।

একটি সূত্র জানিয়েছে, সাবেক সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির যে তদন্ত চলছিল, তা ধ্বংস করার উদ্দেশ্যেও এই অগ্নিকাণ্ড ঘটানো হয়ে থাকতে পারে।

নিরাপত্তা ও তদন্ত কার্যক্রম
ঘটনার রাতে সচিবালয়ের নিরাপত্তায় থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও পিডব্লিউডির কেয়ারটেকারদের আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে এবং তা বিশ্লেষণ চলছে।
সিআইডি, সিটিটিসি, র‍্যাব এবং পুলিশের বিশেষজ্ঞ দল আলামত সংগ্রহ করছে।

সচিবালয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
নিরাপত্তাজনিত কারণে:
স্থায়ী প্রবেশ পাস ছাড়া কাউকে সচিবালয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
সাংবাদিকদের প্রবেশ সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, “এটি সাময়িক ব্যবস্থা। তদন্ত শেষ হলেই স্বাভাবিক প্রবেশাধিকার পুনর্বহাল করা হবে।

মন্ত্রণালয়গুলোর অস্থায়ী কার্যক্রম
ক্ষতিগ্রস্ত মন্ত্রণালয়গুলোর কার্যক্রম সাময়িকভাবে বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থা থেকে পরিচালনা করা হবে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে পরিচালিত হবে।

নাশকতার আশঙ্কা: কর্মচারী ঐক্য ফোরামের বিবৃতি

বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরাম অগ্নিকাণ্ডকে নাশকতা বলে উল্লেখ করেছে। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, “প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য স্পষ্টতই ইঙ্গিত দেয়, এটি কোনো দুর্ঘটনা নয়।”

ক্ষতিগ্রস্ত মন্ত্রণালয় ও বিভাগ
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ

অগ্নিকাণ্ডে এসব মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

অগ্নিকাণ্ডের সংক্ষিপ্ত বিবরণ
সময়: বুধবার রাত প্রায় ২টা
নিয়ন্ত্রণ: ছয় ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে
সম্পূর্ণ নিভতে সময়: ১০ ঘণ্টা

সরকারের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।