অনলাইন ডেক্স: জাতীয় ঐকমত্যের প্রয়োজনীয়তা এবং নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছেন রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী ও সুধীসমাজের প্রতিনিধিরা। তাঁদের মতে, ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার বিলোপ এবং গণতান্ত্রিক রূপান্তরের জন্য সংস্কার অপরিহার্য, তবে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে ‘ঐক্য কোন পথে?’ শীর্ষক সংলাপে এসব মত উঠে আসে।
ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজের উদ্যোগে ‘ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী সংলাপের প্রথম দিন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম অধিবেশনে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, সংস্কার ও নির্বাচন প্রস্তুতি একই সঙ্গে চলতে হবে এবং সকলকে ঐকমত্যের ভিত্তিতে এগিয়ে যেতে হবে।
অর্থনৈতিক পরিস্থিতিবিষয়ক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “বৈষম্য দূর করে সবাইকে নিয়ে ঐক্যের বাংলাদেশ গড়তে হবে। একটি ন্যূনতম ঐকমত্যের ভিত্তি গড়ে তুলতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “সংস্কার ও নির্বাচনের জন্য মানুষকে সুরক্ষা, খাওয়ার ব্যবস্থা এবং চাকরির নিশ্চয়তা দিতে হবে।”
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপে জীবন উৎসর্গকারী তরুণদের ঋণ শোধ করতে হবে। গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার।”
সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. আলী রীয়াজ বলেন, “সংস্কারের মাধ্যমে এমন একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়তে হবে, যেখানে ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ অসম্ভব হবে এবং প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবে।”
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “সংস্কারের পক্ষে বিএনপি সবসময় ছিল। তবে কিছু অপপ্রচার হয়েছে যে বিএনপি সংস্কার চায় না। এটি সঠিক নয়।”
জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “সংস্কার একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত ন্যূনতম প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো সম্পন্ন করে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করা।”
বিশিষ্ট চিন্তক অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, “গণতন্ত্রের মূল কথা হলো জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন। সংস্কারের মাধ্যমে এই ভিত্তি সুদৃঢ় করতে হবে।”
অন্তর্বর্তী সরকারের শিল্পবিষয়ক উপদেষ্টা আদিলুর রহমান বলেন, “সংস্কারের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তরুণদের আত্মত্যাগের যথাযথ মর্যাদা দিতে হবে।”
বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় তারুণ্য এবং অভিজ্ঞতার সমন্বয় ঘটাতে হবে।”
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, “দেশ বর্তমান রাজনৈতিক বন্দোবস্তে চলতে পারে না। একটি গণতান্ত্রিক সংস্কার প্রয়োজন।”
গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, “সংস্কার এবং নির্বাচনের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা দরকার। অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে।”
সংলাপের উদ্বোধন করেন অভ্যুত্থানে আহত ও নিহত পরিবারের সদস্যরা। সঞ্চালনায় ছিলেন ডা. জাহেদ উর রহমান। উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, আন্দালিব রহমান পার্থ, জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দীন পাটোয়ারী এবং রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনছারী।