সংবিধান সংস্কারে গণভোটের প্রস্তাব: কমিশনের সুপারিশ

অনলাইন ডেস্ক!! সংবিধান সংস্কারে গণভোট আয়োজন করা প্রয়োজন বলে মত দিয়েছে গঠিত সংবিধান সংস্কার কমিশন। তাদের যুক্তি, সংবিধানের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনগণের সরাসরি ম্যান্ডেট নেওয়া জরুরি। কমিশনের ভাষায়, “একটি জাতি এই পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখছে, তাই তাদের অনুমোদন অবশ্যই নেওয়া উচিত।

গণভোট নিয়ে বিশ্লেষকদের মতভেদ
তবে আইনজ্ঞ ও বিশ্লেষকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইনগত অধিকার নেই গণভোট আয়োজন করার। তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে তা পুরোপুরি অগ্রাহ্য করার সুযোগ থাকবে না।

তিনি আরও বলেন, “সংবিধান সংস্কার কমিশন কেবল সুপারিশ করতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে—কে এই সুপারিশ বাস্তবায়ন করবে? স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এ ধরনের দায়িত্ব পালনের সুযোগ নেই। তবে বর্তমানে দেশে যে বিশেষ পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তা বিবেচনায় নিয়ে হয়তো কিছু সংস্কার বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হতে পারে।

সংবিধান সংস্কারের প্রস্তাবিত পরিবর্তনসমূহ
কমিশন ৫৪ হাজার মতামত এবং ১২০টি দেশের সংবিধান পর্যালোচনা করে যে সুপারিশগুলো করতে যাচ্ছে, সেগুলো হলো:

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনা।
টানা দুইবারের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না।
প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান একই ব্যক্তি হবেন না।
দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ ব্যবস্থা চালু।
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন।
বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার নিয়োগ।
স্পিকারের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা।
২১ বছর বয়সেই নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ।

কমিশন প্রধানের বক্তব্য
সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক ড. আলী রিয়াজ বলেন, “গণভোটের মাধ্যমে জনগণের সরাসরি অনুমোদন নেওয়া উচিত। রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি হলে একটি সংবিধান সভা আয়োজন করা যেতে পারে। আবার, রাজনৈতিক দলগুলো যদি একটি সনদ তৈরি করে পরবর্তী সংসদে তা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেয়, তাও গ্রহণযোগ্য হতে পারে। তবে যেকোনো পরিবর্তনের ক্ষেত্রে গণভোট অপরিহার্য।

তিনি আরও বলেন, “সংবিধান সংস্কারে গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। জনগণের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে।

দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ নিয়ে মতামত
দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ ব্যবস্থার পক্ষে মত দিয়ে কমিশন বলেছে, এটি নানামতের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করবে এবং প্রধানমন্ত্রীর পদে জবাবদিহি নিশ্চিত করবে।

সংস্কার কমিশনের সময়সীমা
জুলাইয়ের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর সংস্কার কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে গঠিত ছয়টি কমিশনের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর মধ্যে জনপ্রশাসন, পুলিশ, দুর্নীতি দমন, নির্বাচন ব্যবস্থা এবং সংবিধান সংস্কার কমিশন রয়েছে।
কমিশনগুলোর প্রতিবেদন জমা দেওয়ার শেষ সময় ১৫ জানুয়ারি নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংবিধান সংস্কার একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া, এবং তা সফল করতে রাজনৈতিক ঐকমত্য জরুরি। গণভোটের মাধ্যমে জনগণের মতামত নিশ্চিত করা হলে তা অধিকতর গ্রহণযোগ্যতা পাবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।