শিগগিরই তুরাগ নদী দখল ও দূষণমুক্ত করার কার্যক্রম শুরু হবে : পানি সম্পদ উপদেষ্টা 

নিজস্ব প্রতিনিধি: পানি সম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, শিগগিরই তুরাগ নদী দখল ও দূষণমুক্তকরণের কার্যক্রম শুরু হবে। তুরাগ নদী দিয়েই নদী দখল ও দুষমুক্তকরণের প্রক্রিয়া শুরু করবো।

তিনি বলেন, ‘জুনের শুরুর দিকে হয়তো তুরাগের উপর একটা কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত হবে। এছাড়া ঢাকার চার পাশের বাকি ৩টি নদী বুড়িগঙ্গা, শীতালক্ষ্যা ও বালু এগুলোরও কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করে এগিয়ে নেয়া হবে।’

উপদেষ্টা আজ শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে বাংলাদেশ প্রাণিবিজ্ঞান সমিতির ২৪তম জাতীয় সম্মেলন এবং বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। 

পানি সম্পদ উপদেষ্টা বলেন, নদী দখল ও দূষণমুক্তকরণের কর্মপরিকল্পনার কাজটাও চূড়ান্ত করে দিয়ে যাব, যাতে পরবর্তীতে যারা আসবে তারা এই কাজটি এগিয়ে নিতে পারে। নদীকে বাঁচাবার কথা ভাবতে হলে নদীকে ড্রেজিং করার পাশাপাশি দখল ও দূষণমুক্ত করতে হবে। 

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আমাদের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অনেক, প্রত্যাশার চাপও অনেক। সে লক্ষ্যকে সামনে রেখে সরকার দেশের নদীগুলোকে স্বচ্ছ নীল পানি প্রবাহে পরিণত করার পরিকল্পনা নিয়েছে। ঢাকার আশেপাশের নদীগুলো এমন দূষিত যে তুরাগ, বালু, বুড়িগঙ্গায় এখন প্রাণের অস্তিত্বই নেই। তার কারণ হচ্ছে এগুলো মারাত্মকভাবে দূষিত। শীতলক্ষ্যায় এখনো প্রাণের অস্তিত্ব আছে। দূষণ বন্ধ করতে হলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ঘটাতে হবে এবং দূষণ বন্ধে সোয়্যারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন করতে হবে।’ 

তিনি বলেন, ঢাকায় হাতিরঝিল মানুষের প্রিয় একটা জায়গা, কিন্তু মন খুলে হাঁটবেন সেটা পারা যায় না তার কারণ হাতিরঝিলের পানির দুর্গন্ধের কারণে পাশ দিয়ে হাঁটা যায়না। বায়োলজিক্যালি নদীকে বাঁচাতে হলে নদী ও খালে পানি প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে হবে। নদী দখল ও দূষণ বন্ধ করতে হবে। নদীর দখল বন্ধে এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রম আরো জোরদার করা হবে বলে তিনি জানান। 

উপদেষ্টা  বলেন, বিভিন্ন বনাঞ্চলে মানুষ-হাতির  দ্বন্দ্ব এখন চরম অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। আসলে এতো দিন হাতি ও মানুষের দ্বন্দ্বকে সেভাবে অ্যাড্রেস করা হয়নি, এজন্য এটা এখন চরম আকারে চলে গেছে, হাতি মারা পড়ছে। 

তিনি বলেন, হাতির হাঁটার জন্য একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ  জায়গা লাগে, হাতির খাবারের জন্য বনাঞ্চল লাগে। কিন্তু সেখানে ইউক্যালিপটাস এবং আকাশমনি গাছ লাগিয়ে দেয়া হয়েছে যার কারণে হাতি তার খাবার পাচ্ছ না এবং খাবারের খোঁজে হাতি লোকালয়ে হানা দিচ্ছে। এতে তো হাতির দোষ নেই, হাতিকে নিরাপদে চলাচল করবার এবং তার খাবারের ব্যবস্থা আমাদেরকে করে দিতে হবে তাহলে মানুষের সাথে হাতির আর দ্বন্দ্ব হবে না।
 
রিজওয়ানা হাসান জানান, গাজীপুরে ৭৫০ একর জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। এখানে শিগগিরই ইউক্যালিপটাসমুক্ত করে অন্যান্য সামাজিক গাছ রোপণ করা হবে।

ধানের প্রজাতি সংরক্ষণের কথা উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, আমাদের থেকে ধানের অনেক প্রজাতি হারিয়ে গেছে এবং এ প্রজাতিগুলো  সংরক্ষণের জন্য উদ্যোগ নিয়েছি।  

তিনি বলেন, আমরা আরেকটা কাজ হাতে নিয়েছি সেটা হচ্ছে স্মারক বৃক্ষ, শতবর্ষী বৃক্ষ, ঐতিহ্যবাহী বৃক্ষ এগুলোকে স্পেশাল প্রটেকশনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এ লক্ষ্যে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তিও দেয়া হয়েছে। যাতে যার যার এলাকায় এ ধরনের বৃক্ষ পাওয়া গেলে আমাদেরকে যদি জানানো হয়, তাহলে রেজিস্ট্রেশন করে দিতে পারি এবং এতে এগুলোর একটা প্রটেকশন হবে।

উপদেষ্টা আরও বলেন, মধুপুরে বনের সীমানা আমরা চিহ্নিতকরণের কাজ দ্রুততম সময়ের মধ্যেই করে দিচ্ছি। সেখানে মধুপুর বনাঞ্চল হতে ইউক্যালিপটাস গাছ সরিয়ে শাল এবং অন্যান্য সামাজিক বৃক্ষ রোপন করা হবে। এছাড়া যেহেতু এখন প্রকৃতিতে ময়ূর নেই আমরা মধুপুরে প্রকৃতিতে ময়ূর ছাড়ার উদ্যোগ নিচ্ছি। 

পরে,বাংলাদেশ প্রাণিবিজ্ঞান সমিতি ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে ১১ তম প্রাণিবিজ্ঞান অলিম্পিয়াড ২০২৪ এর উপর অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে বিজয়ীদের মাঝে সার্টিফিকেট এবং  ক্রেস্ট বিতরণ করা হয়। 

অনুষ্ঠানে বিষয় ভিত্তিক মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডীন প্রফেসর ড. আবদুস সালাম। 

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) প্রফেসর ড. মামুন আহমেদ এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারপার্সন প্রফেসর ড. শেফালী বেগম। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের ডীন (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. মোঃ এনামুল হক, বাংলাদেশ প্রাণিবিজ্ঞান সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. হামিদা খানম, উপ-প্রধান বন সংরক্ষক জাহিদুল ইসলাম প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *