লৌহমর্ষক নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন রাকিবের স্ত্রীআমার হয়ে আপনারা ওর বিচারটা করে দিয়েন

কুষ্টিয়া অফিস: “ভাইয়া আমিতো নিজের জন্য বিচার চাইতে পারিনি সম্মানের ভয়ে। তার বিচার করতেও পারিনি সম্মানের ভয়ে। সব জায়গায় আটকে গেছি সম্মানের ভয়ে। তো, আমার হয়ে আপনারা ওর বিচারটা করে দিয়েন। আল্লাহ আপনাদের অনেক ভালো করবে। আমার হয়ে আমার বাচ্চাটার হয়ে, যে বাচ্চাটাকে ও (রাকিব) অমানুষিক নির্যাতন করে দুনিয়া থেকে বিদায় দিল! দুনিয়াতে আসতে দিলোনা যে বাচ্চাটাকে। পারলে তার হয়ে ওর বিচারটা করে দিয়েন। দুনিয়াতে একটু দেখে যায়, মানুষ যখন অন্যায় করে তার প্রতিদানে কেউ না কেউ ঠিক শোধ করে দেয়।”

এভাবেই মাত্র ২ বছরের সংসার জীবনে ঘটে যাওয়া লৌহমর্ষক নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন রাকিবের ২য় স্ত্রী। দুর্বিষহ সেসব দিনের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে নিজেই আবেগ আপ্লুত হয়ে পরেন তিনি। জানালেন এক অত্যাচারী স্বামীর গল্প।

ভারতীয় চোরাই মোবাইল বিক্রয় সিন্ডিকেটের অন্যতম প্রধান এই হোতা অবৈধ অস্ত্র ও কিপ্টোকারেন্সি ব্যবসার সাথে জড়িত। এবার তার বিরুদ্ধে নিজের ২য় স্ত্রীকে অমানুষিক নির্যাতন করার সাথে সাথে পতিতাবৃত্তির সিন্ডিকেট চালানোরও অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত ঐ ব্যক্তির নাম রাকিবুল ইসলাম রাকিব। দেখতে দেখতে মাত্র ৫ বছরের মধ্যে কোটিপতি বনে গেছেন তিনি। এর আগে তার রিক্সা চালক বাবা ১৫ কিলোমিটার দূর থেকে শহরে এসে অক্লান্ত পরিশ্রম করে তাদের আহার যোগাতো। স্ত্রীকে পৈচাশিক নিযার্তন করা এই ব্যক্তি একজন নিয়মিত মাদকসেবী। তার বাবার নাম আব্দুল খালেক। গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পান্টি ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডে।

পৈচাশিক নিযার্তনের শিকার রাকিবের স্ত্রী জানিয়েছেন, ২০২২ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তাদের প্রথম পরিচয় হয়। এরপর ধীরে ধীরে যোগাযোগ বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি হয়। পরিবারের মতামত না নিয়ে ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তারা। বিয়ের মাস খানেক অতিবাহিত হওয়ার পর তিনি জানতে পারেন, রাকিব এর আগেও একবার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। সেই স্ত্রীর ঘরে রাকিবের একটি সন্তান রয়েছে। ১ম পক্ষের স্ত্রী থাকতেও তিনি ২য় বিয়ে করেন। সেসময় বিষয়টি নিয়ে রাকিবের সাথে কথা বলতে গেলে রাকিব তাকে অমানুষিক ভাবে বেধড়ক মারপিট করে। যদিও বিয়ের ১সপ্তাহ পার হতে না হতেই রাকিব তাকে নির্যাতন করতে শুরু করে। এঘটনার আগেও রাকিব তাকে একাধিকবার পৈচাশিকভাবে নির্যাতন করেছে।

তিনি বলেন, রাকিবের সাথে বিয়ের পর থেকে তার জীবনে নেমে আসে অমাবস্যার রাত। শহরের ডিসি কোর্ট এলাকার একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন তারা। দিনের পর দিন খাবারের অভাবে তাকে না খেয়ে থাকতে হয়েছে। রাকিব বাসায় ঠিকমতো বাজার করতেন না। একবার খাবারের অভাবে তাকে একটানা ৪ দিন পানি খেয়ে থাকতে হয়েছে। বিবাহিত জীবনে কোনদিন একটা পোশাকও তাকে কিনে দেননি রাকিব। তারা যেই ভাড়া বাসাতে বসবাস করতেন সেই একই বাসার নিচ তলায় এক আপা ভাড়া থাকতেন। তিনি তাকে মাঝে মাঝে ব্যবহারের জন্য পোশাক দিতেন। অন্যের থেকে দানের পোশাক নিয়ে তাকে ব্যবহার করতে হতো। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, যে বাসায় তাকে দিনের পর দিন না সারাদিন না খেয়ে থাকতে হতো, পরতে হতো অন্যের দানের পোশাক সেই একই বাসার গ্যারেজে থাকতো তার স্বামীর মালিকানাধীন বিলাসবহুল গাড়ি।

রাকিবের হাতে অমানুষিক নির্যাতনের তার স্ত্রী আরো বলেন, প্রায় প্রতিদিনই নেশাগ্রস্ত হয়ে বাসায় ফিরে তাকে মারধোর করতেন রাকিব। ফেন্সিডিল, ইয়াবা, গাজা, মদ সবকিছু খেয়ে থাকেন রাকিব। তিনি বাসায় মাদক রাখতেন এবং খেতেন। এমনকি তাকেও খেতে বাধ্য করতেন রাকিব। না খেতে চাইলেই শুরু হতো উত্তম মাধ্যম। স্ত্রী নয়, তাকে রক্ষিতা করে রেখেছিলেন রাকিব। এখানে একটু পরিবর্তন ছিল যেটা, সেটা হচ্ছে- রক্ষিতাদের কোন বিবাহের কাবিন থাকে না, কিন্তু তার ছিল। কারণে অকারণে মারধোর করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে বড় ক্ষত তৈরি করে দেওয়া হতো। একবার পায়ে মেরে ক্ষত তৈরি করে দেওয়ার পর ক্ষতস্থানে ৮টি সেলাই দিতে হয়েছিল। সারা শরীরে কাটা দাগের চিহ্ন তাকে এখনো বয়ে বেড়াতে হয়। রাকিবের পুরুষত্ব নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ ছিল তার। রাকিব প্রতিনিয়ত যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট সেবন করতো। তিনি শারীরিক সম্পর্ক করতেন কিন্তু বাচ্চা নেওয়ার অধিকার তার স্ত্রীর ছিল না। রাকিব তাকে বলতেন- তার ১ম স্ত্রীকে ৩ বার এ্যাবোর্সন করিয়েছিলেন। ৪র্থ বার সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখিয়েছেন। এর আগে ১ম পক্ষের স্ত্রীর সন্তান এ্যাবর্সন করার পর রাকিব তাকে বলেছিলেন, ঐ সন্তান তার না। তার ১ম স্ত্রীর অন্য জায়গায় সম্পর্ক আছে। সেই সম্পর্কের ফসল ঐ সন্তান। এতকিছুর পরও আল্লাহ চেয়েছিলেন তাই হয়তো রাকিবের ২য় স্ত্রী সন্তান গর্ভবতী হয়েছিলেন। সন্তান গর্ভে আসার খবর জানার পর থেকেই এ্যাবোর্সন করার জন্য উঠেপড়ে লাগেন রাকিব। এমনকি টাকা দিয়ে ২য় স্ত্রীকে ঐ সন্তান এ্যাবোর্সন করিয়ে আসতে বলেন তিনি। তারপরও যখন ২য় স্ত্রী রাজি হননি তখন হঠাৎ একদিন নেশাগ্রস্ত হয়ে বাড়ি ফিরে তার তলপেটে সজোরে লাথি মারেন রাকিব। ভয়াবহ সেই দিনটি ছিল ২০২৪ সালের ২৪শে সেপ্টেম্বর। ঘটনার পর অসহায় ঐ নারীর রক্তপাত শুরু হয়। বাধ্য হয়ে পরদিন ২৫ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। ততক্ষণে বাচ্চাটির পৃথিবীর মুখ দেখার সকল দ্বার বন্ধ হয়ে যায়। হাসপাতালে যখন সবাই ঐ নারীর স্বামীকে খোঁজ করছিল তখন ঐ নারী তার স্বামী রাকিবকে বারবার ফোন দিতে থাকেন। অন্যপ্রান্তে রাকিব নানা টালবাহানা করতে করতে একপর্যায়ে ফোন বন্ধ করে দেন। হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শেষে তিনি বাবার বাড়ি ফিরে যান। এরপর সুস্থ হয়ে রাকিবকে তালাক দিয়ে নতুন জীবন গড়ার লক্ষ্যে পড়াশোনা শুরু করেন। তাতেও শান্তিতে নেই তিনি। মাঝে মধ্যেই তার মুঠোফোনে ফোন দিয়ে তার মা, বাবা, ভাই, বোনসহ তাকে হত্যার হুমকি অব্যাহত রেখেছেন রাকিব। এমনকি আত্মীয় স্বজনের বাড়ি গিয়েও হুমকি দিয়ে চলেছেন তিনি।

এর আগে, রাকিবের সাথে বিয়ের পর জীবন বাঁচাতে একাধিকবার বাসা থেকে চলে আসেন তার ২য় স্ত্রী। তাতে কোন লাভ হয়নি। তার মা, বাবা, ভাই, বোনকে হত্যার হুমকিসহ লোক পাঠিয়ে নানাভাবে হুমকি দিয়ে তাকে ফিরে আসতে বাধ্য করতো রাকিব। আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে সম্পর্ক থাকায় তাদের নিয়ে বড়াই করতো তিনি। আর সেই নেতাদের ক্ষমতা দেখিয়ে সকল অপকর্ম করতেন রাকিব।

অসহায় ঐ নারী জানান, এমন কোন অপকর্ম নেই যা রাকিব করতেন না। মাদক বিক্রি, চোরাই মোবাইল বিক্রি, নারীদের দিয়ে দেহ ব্যবসা চালানো সবই করতো সে। শহরের নারকেল তলা এলাকায় এবং সনো টাওয়ারের পিছনে দুই জায়গায় দুইটি ফ্ল্যাট নিয়ে একাধিক নারীদের দিয়ে দেহব্যবসা করাতো রাকিব। এমনকি তাদের সাথেও শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতো সে।

ভুক্তভোগী ঐ নারীর পরিবার জানায়, পরিবারের কাউকে না জানিয়ে নিজেরা দুইজন মিলে বিয়ে করেছিল তারা। আমাদের মেয়ের জীবনটা একেবারে তছনছ করে দিয়েছে রাকিব। অনেক মারধোর করতো আমাদের মেয়েকে। তারপরও আমাদের মেয়ে তাকে ভালো করার চেষ্টা করেছিল, পারেনি। ওদের ডিভোর্স হয়ে গেছে। এরপরও রাকিব তাদের প্রতিনিয়ত মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আসছে।

প্রসঙ্গে অভিযুক্ত রাকিবুল ইসলাম রাকিবের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে যতদূর জানা যায়, শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের এই দোসর। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com