বাসস: রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, রেলওয়ের হাসপাতালগুলোতে রেলকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও চিকিৎসাসেবা দেয়া হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন থাকা চিকিৎসকদের এখানে পদায়ন করা হবে। এ জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে রেলপথ মন্ত্রণালয় সমঝোতা স্মারক চুক্তি করবে।
রেলওয়ের হাসপাতালগুলো নিয়ে নতুন এই পরিকল্পনার কথা জানিয়ে কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এখন বিভিন্ন বিভাগ বা দপ্তরে আলাদা আলাদা করে কাজ করা যাবে না। সবাই সরকারের হয়ে কাজ করবেন, জনগণের জন্য কাজ করবেন। আর নতুন ধরনের কোনো স্থাপনা এই মুহূর্তে করা হবে না।
আজ শুক্রবার (১১ এপ্রিল) সকালে চট্টগ্রাম নগরের সিআরবিতে চট্টগ্রাম রেলওয়ে হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
হাসপাতাল পরিচালনা ও সেবার মান বাড়াতে চারটি নির্দেশনা দিয়ে রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, হাসপাতাল পরিচালনার জন্য একটি পরিচালনা পর্ষদ গঠন করতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে চিকিৎসক এই হাসপাতালে সংযুক্তি দিতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ওষুধ, যন্ত্রপাতি ও খাবার সরবরাহ করবে। এই ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে রেলপথ মন্ত্রণালয় সমঝোতা স্মারক চুক্তি করবে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিতে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলামকে নির্দেশ দেন উপদেষ্টা।
এর আগে উপদেষ্টা চট্টগ্রাম রেলওয়ে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ও স্থাপনা ঘুরে দেখেন। এরপর হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক, রেলপথ মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করেন। এই সময় কর্মকর্তারা রোগী ভর্তি না হওয়া ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতাসহ হাসপাতাল পরিচালনায় বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কথা উপদেষ্টার কাছে তুলে ধরেন। তাঁরা উপদেষ্টাকে জানান, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকট রয়েছে। আবার রোগী ভর্তি হলেও কিছু বিধির কারণে সব রোগীকে খাবার সরবরাহ করা যায় না।
পরিদর্শন শেষে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘হাসপাতালটি ঘুরে দেখলাম। এ ধরনের হাসপাতাল দেশের আরও বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীর চাপে শয্যা খালি থাকে না। কিন্তু এখানে (রেলওয়ে হাসপাতাল) শয্যাগুলো খালি পড়ে আছে। এই পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে রেলপথ মন্ত্রণালয় সমঝোতা স্মারক চুক্তি করবে। এর আওতায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চিকিৎসক, খাবার, যন্ত্রপাতি ও ওষুধ দেবে।’
রেলওয়ে সূত্র জানায়, রেলওয়ের অধীন ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, পাকশী, লালমনিরহাট ও সৈয়দপুরে রেলওয়ে হাসপাতাল রয়েছে। এসব হাসপাতালে ২৭০টি শয্যা রয়েছে। তবে হাসপাতালগুলো প্রায় সময় রোগী শূন্য থাকে।
এদিকে আজ সকাল আটটায় রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলীতে অবস্থিত রেলওয়ে ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগন মেরামত কারখানা, ডিজেল ওয়ার্কশপ কারখানা, রেলওয়ে সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, ইউরোপিয়ান ক্লাব ও রেলওয়ে জাদুঘর পরিদর্শন করেন। এ সময় এসব স্থাপনার পরিবেশ ও মান বাড়াতে কর্মকর্তাদের বিভিন্ন নির্দেশনা দেন তিনি।
পরে সাংবাদিকদের উপদেষ্টা বলেন, রেলওয়ের ক্যারেজ ও ওয়াগন মেরামত কারখানাকে ওয়ার্কশপে উন্নীত করার প্রক্রিয়া চলছে। তখন বাইরে থেকে ইঞ্জিন ও কোচের যন্ত্রপাতি এনে এখানে সংযোজন করা যাবে। এতে সময় ও অর্থ-দুটিই সাশ্রয় হবে। বর্তমানে এসব ইঞ্জিন ও কোচ আনতে হলে দেশের বাইরের প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যাদেশ দিতে হয়। এরপর তারা তৈরি করে এখানে পাঠায়। এতে প্রচুর সময় লাগে।
রেলওয়ের স্থাপনা ও হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে দুপুরে কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন উপদেষ্টা।