ইব্রাহীম হোসেন সম্রাট, রাজশাহী: রাজশাহীতে নজমুল হক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক শাহাবুব আলমের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় শিক্ষার্থীরা ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ করে আন্দোলন শুরু করেছেন, যার সঙ্গে মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় অভিভাবকরা একাত্মতা ঘোষণা করে প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদের পদত্যাগ ও শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা দাবি করে স্কুল প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করেছেন। এই আন্দোলন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার ওপর গভীর প্রশ্ন তুলে ধরেছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সহকারী শিক্ষক শাহাবুব আলম সুযোগ পেলেই ছাত্রীদের গায়ে হাত দেন। সর্বশেষ ২ সেপ্টেম্বর স্কুল ছুটির পর তিনি এক চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রীকে একা পেয়ে তার মুখ চেপে ধরে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। ভয়ে ওই ছাত্রী এখন স্কুলে আসছে না। অভিভাবকরা জানান, শিক্ষক বিভিন্ন অজুহাতে এমন আচরণ চালিয়ে যাচ্ছেন, যা শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে ভীত ও অসহায় করে তুলেছে।
এই ঘটনা সাম্প্রতিক দিনে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন। তাদের দাবি, শিক্ষকের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া এবং স্কুলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। অভিভাবকরা বিক্ষোভের সময় জানান, নিরাপত্তাহীনতার কারণে তাদের সন্তানরা মানসিক চাপে রয়েছে, যা শিক্ষার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করছে।
মঙ্গলবার সকালে অভিভাবকরা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যোগ দিয়ে প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদের পদত্যাগ দাবি করেন। তাদের মতে, শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া সত্ত্বেও প্রশাসন পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেওয়ায় ব্যর্থ হয়েছে, যা স্কুলে নিরাপত্তার অভাবের স্পষ্ট প্রমাণ। অভিভাবকরা দাবি করেছেন, শিক্ষকের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আন্দোলন আরও তীব্র হবে।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ অভিযোগ স্বীকার করে জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি স্কুল পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি (অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার) এর কাছে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, “লিখিত অভিযোগে ২ সেপ্টেম্বরের শ্লীলতাহানির ঘটনার উল্লেখ নেই। তদন্ত চলছে, এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিভাবকদের বিষয়টি বোঝানো হয়েছে, এবং তারা বিস্তারিতভাবে খতিয়ে দেখছেন।” তবে প্রশাসনের এই প্রতিক্রিয়া অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের কাছে পর্যাপ্ত মনে হচ্ছে না।
এই ঘটনা স্কুলে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও অভিভাবকদের বিক্ষোভ প্রশাসনের দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলে। মানসিক চাপে পড়া ছাত্রীরা স্কুলে আসতে ভয় পাচ্ছে, যা শিক্ষার পরিবেশে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে।
এই সংকট মোকাবিলায় স্কুল প্রশাসনকে দ্রুত তদন্ত শুরু করে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে স্বতন্ত্র তদন্ত কমিটি গঠন এবং শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা প্রয়োজন। স্কুলে নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য কঠোর নজরদারি ও নীতি প্রয়োগ অত্যন্ত জরুরি।