রাজশাহীতে চাকরি দেওয়ার নামে পুলিশের এসপি পরিচয়ে বিপুল অর্থ প্রতারণা! ৪জন ভূক্তভোগীর সংবাদ সম্মেলন

মোঃ সোহেল রানা, রাজশাহী, বিভাগীয় প্রধান : রাজশাহী নগরীতে পুলিশের এসপি পরিচয়ে চাকরি দেওয়ার নামে বিপুল অর্থ প্রতারণার অভিযোগে উঠেছে মোঃ সাইফুদ্দিন আহমেদ (আজাদ) ও তার স্ত্রী নাহিদা আক্তার শ্যামলী নামের এক দম্পত্তীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুপুর সোয়া ২টায় রাজশাহী নগরীর মতিহার থানার অক্ট্রয় মোড়, রিভার সিটি প্রেসক্লাব, রাজশাহীতে ভূক্তভোগীরা সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

সংবাদ সম্মেলে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কৌশিক আহমেদ। তিনি চারঘাট থানার আস্করপুর সারদা গ্রামের মৃত আব্দুস সামাদের ছেলে। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, গত ২১-০২-২০১৭ ও ১০-০৮-২০১৭ তারিখে সকাল ১১টায় নগরীর বোয়ালিয়া থানার বালিয়পুকুর এলাকায় মোঃ সাইফুদ্দিন আহমেদ (আজাদ) ও তার স্ত্রী নাহিদা আক্তার শ্যামলীর (এসপি দম্পতি), ভাড়া করা বাসায় নিয়ে যায় তাদের সহযোগী রাসেদুল ইসলাম মানিক। ওই সময় আমি এসপি দম্পত্তীকে দুই বারে রাসেদুল ইসলাম মানিকের সহযোগীতায় ৮লাখ টাকা নগদে প্রদান করি। মানিক আমাদের এই প্রতারক দম্পত্তীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় এবং বলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অফিস সহায়ক পদে চাকরী দেয়ার কথা বলে। আমার বাবা, মা নাই। আমি একজন এতিম যুবক। নানীর কাছে থাকি। তাই চাকরীর আশায় মানিকের প্ররোচনায় জমি বিক্রি করে ৮লাখ টাকা নগদে প্রদান করি। পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ভুয়া নিয়োগ লেটার দেয় ওই দম্পত্তী। চাকরিতে যোগদান করতে গিয়ে জানতে পারি সেটা ভূয়া নিয়োগ লেটার। পরবর্তীতে টাকা ফেরত চাইলে আমাকে বাংলাদেশ সেনাবাহীনিতে (আর্মি) স্ট্রোর ম্যান পদের নিয়োগ লেটার দেয়। আমি সেই নিয়োগপত্র নিয়ে সেনাবাহীনির ঢাকা হেডকোয়াটারে চাকরিতে যোগদান করতে যাই। সেখানে একজন সেনা সদস্য আমাকে বলেন, বাবা এটা ভূয়া নিয়োগ লেটার। তুমি প্রতারণার শিকার হয়েছো। পরে আমি বাড়ি ফিরে আসি। কিন্তু আজ আবদি আমাকে আমার টাকা ফেরত দেয়নি।

একই এলাকার ভূক্তভোগী মোঃ রেজাইল করিম, তিনি একই থানা ও এলাকার মৃত আমজাদ হোসেনের ছেলে। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, গত ১১-০২-২০১৮ তারিখে সকাল ১১টায় মোঃ সাইফুদ্দিন আহমেদ (আজাদ) ও তার স্ত্রী নাহিদা আক্তার শ্যামলীর (এসপি দম্পতি), বালিয়া পুকুর ভাড়া করা বাসায় তাদের সহযোগী সারদা এলাকার রাসেদুল ইসলাম মানিক নিয়ে যায়। আমার ভাতিজার চাকরির জন্য নগদে ৮লাখ ৪০ হাজার টাকা নগদে প্রদান করি। একই কায়দায় ওই প্রতারক কথিত এসপি দম্পত্তী আমার সাথে প্রতারণা করেন। অপর ভুক্তভোগী আমি মাহাবুবুর রহমান, আরএমপি কর্ণহার থানার দারুসা শাইর পুকুর এলাকার মৃত মোজাফফর হোসেনের ছেলে।

তিনি তার বক্তব্যে বলেন, গত ১৫-০৭-২০২১ ও ২৯-০৭-২১ সকাল ১১টায় রাজশাহী নগরীর বোয়ালিয়া থানার বালিয়পুকুর এলাকায় মোঃ সাইফুদ্দিন আহমেদ (আজাদ) ও তার স্ত্রী নাহিদা আক্তার শ্যামলীর (এসপি দম্পতি), ভাড়া করা বাসায় এবং মতিহার থানার কাজলা বিলপাড়া এলাকার শ্যামলীর বাড়িতে আমি এসপি দম্পত্তীকে ৬লাখ ৭০ হাজার টাকা নগদে প্রদান করি। আমাকে রাজশাহী পুলিশ হেড কোয়াটারে অফিস সহকারী পদে চাকরি দেবে। কিন্তু একই কায়দায় তারা আমার সাথে প্রতারণা করেন।

অপর ভূক্তভোগী মোঃ খাইরুল হাসান রিংকু, তিনি গোদাগাড়ী থানা হরিণ বিসকা গ্রামের মৃত লিয়াকত আলীর ছেলে। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, সাইফুদ্দিন আহমেদ (আজাদ) ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী নাহিদা আক্তার শ্যামলীকে নগদ ২৫ লাখ টাকা প্রদান করি। নাহিদা আক্তার শ্যামলী আমার স্ত্রী টুম্পার বোন। তাই সরল বিশ্বাসে আমার স্ত্রী’র পিয়ন ওথবা আয়া পদে রাজশাহী জেলার যে কোন সরকারী স্কুল ও কলেজে চাকরী দেবে বলে ১০ লাখ টাকা নগদে শ্যামলী ও আজাদকে বালিয়া পুকুর ভাড়া করা বাড়িতে গিয়ে নগদে প্রদান করি। তাদের নতুন প্রস্তাবে খামার ও রেষ্টুরেন্ট ব্যবসার জন্য নগদে ১৫ লাখ টাকা প্রদান করি। পরে বুঝতে পারি আমি প্রতরণার শিকার হয়েছি। অবশেষে এই প্রতারক দম্পত্তীর বিরুদ্ধে চেক ও স্ট্যাম্পের মামলা করি। যাহা বিজ্ঞ আদালতে চলমান রয়েছে।

টাকা ফেরত পেতে সকল ভূক্তভোগী আরএমপি পুলিশের পুলিশ কমিশনার, র‌্যাব-৫, এর অধিনায়ক ও রাজশাহী সেনাবাহীনির (আর্মি) হেডকোয়াটার এর সর্বচ্চো কর্মকর্তার সহযোগীতা কমনা করেন তারা।

এ ব্যপারে জানতে চাইলে প্রতারক দম্পত্তী আজাদ ও শ্যামলীর মুঠো ফোনে ফোন দেয়া হলে তাদের উভয়ের ফোন বন্ধ থাকায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *