রংপুরের আলু বিদেশে রপ্তানি: কৃষকদের জন্য আশার আলো

চ্যানেল7বিডি ডেক্স: দেশের অন্যতম শস্য উৎপাদনকারী অঞ্চল রংপুর থেকে আলু বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে, যা কৃষকদের জন্য এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। পীরগাছার পারুল ইউনিয়নের বেলতলীতে দেখা গেছে ব্যস্ত কর্মযজ্ঞ—ছোট ছোট বস্তায় আলু ভর্তি করে ওজন মেপে ট্রাকে তোলা হচ্ছে, যা মালয়েশিয়ায় পাঠানো হবে।

বিদেশে রপ্তানির নতুন দিগন্ত
অভিরাম গ্রামের কৃষক ফসিউল আলম ডাবলু জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে আলু পাঠিয়ে আসছেন। চট্টগ্রামের অ্যাগ্রোক্যাগরি কমোডিটিজ নামের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের কাছে তিনি ১৭ টাকা কেজি দরে শানশাইন জাতের আলু বিক্রি করেছেন, যা মালয়েশিয়ায় রপ্তানি করা হবে। এ বছর তিনি ৮ একর জমিতে আলুর চাষ করেছেন, তবে রপ্তানির দর কিছুটা বাড়লে কৃষকরা আরও লাভবান হতেন।

বাজার সম্প্রসারণ ও রপ্তানির সাফল্য
বিরাহিম গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা মোকছেদুল ইসলাম বলেন, তিনি কয়েক বছর ধরে নেপাল, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, দুবাই ও হংকং-এ আলু রপ্তানি করছেন। এ বছর তিনি প্রাথমিকভাবে মালয়েশিয়ায় শানশাইন জাতের আলু পাঠানো শুরু করেছেন এবং এ পর্যন্ত ৩ হাজার টন আলু রপ্তানির আশা করছেন।

অন্য উপজেলাগুলোর অবস্থা
রংপুরের গংগাচড়া ও মিঠাপুকুর উপজেলাতেও আলু রপ্তানির ব্যস্ততা চলছে। এখান থেকে নেপাল ও দুবাইতে আলু পাঠানো হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই রপ্তানি প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে কৃষকরা তাদের পরিশ্রমের ন্যায্য মূল্য পাবেন।

আলু উৎপাদন ও বাজার পরিস্থিতি
রংপুর কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর জেলায় ৫৫ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। তবে কৃষকদের দাবি, এই সংখ্যা ৬০ হাজার হেক্টরেরও বেশি, যা গত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

এদিকে, স্থানীয় বাজারে বর্তমানে স্ট্রিক জাতের আলু ১০-১২ টাকা, সেভেন জাতের আলু ৮-১০ টাকা এবং লাল পাকরি জাতের আলু ১২-১৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

কৃষকদের দাবি ও সরকারি সহায়তা
আলুর ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে কোল্ড স্টোরেজের সংরক্ষণ খরচ কমানো, রপ্তানির পরিমাণ বাড়ানো এবং বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে সরকারের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করছেন কৃষকরা।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আফজাল হোসেন বলেন, “এবার আলুর ফলন রেকর্ড পরিমাণ হয়েছে। কৃষকদের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছি এবং রপ্তানির সুযোগ আরও প্রসারিত করার চেষ্টা করছি।”

উপসংহার
আগাম আলু রপ্তানি শুরু হওয়ায় রংপুরের কৃষকরা আশার আলো দেখছেন। সঠিক উদ্যোগ ও নীতিগত সহায়তা পেলে এই সম্ভাবনাময় রপ্তানি খাত আরও সম্প্রসারিত হবে এবং কৃষকরা লাভবান হবেন।

তথ্যসূত্র: বাসস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *