মিথ্যা তথ্য দিয়ে ডব্লিউএইচও’র পরিচালক: পুতুলের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

বাসস: মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক পদে নিয়োগ লাভ এবং সূচনা ফাউন্ডেশনের নামে ২০টি ব্যাংক থেকে ৩৩ কোটি টাকা আদায়ের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নামে পৃথক দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

আজ বৃহস্পতিবার দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন জানান, দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ মামলা দুটি দায়ের করেন সংস্থার উপ-পরিচালক তাহসীন মুনাবীল হক।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় চাকরির বিষয়ে করা মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামি সায়মা ওয়াজেদ হোসেন ওরফে সায়মা ওয়াজেদ ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রতারণা ও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক পদে নিয়োগ লাভের উদ্দেশ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)-তে ২০২৩ সালে দাখিলকৃত সিভিতে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে’ (বর্তমানে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) শিক্ষকতা/শিক্ষা ম্যানুয়েল তৈরি বা রিভিউ সম্পর্কিত কার্যক্রমে অংশগ্রহণ না করেও নিজেকে ওই কাজের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে মিথ্যা দাবি করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় আবেদন এবং পরবর্তীতে সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক পদে নিয়োগ লাভ করে দণ্ডবিধির ৪২০/৪৬৮/৪৭১ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন এর ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

এজাহারে আরও বলা হয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের মাধ্যমে ২০১৭ সালে অটিজম ও স্নায়ু বিকাশজনিত সমস্যা বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন নিযুক্ত হন সায়মা ওয়াজেদ। ওই পদে কর্মরত অবস্থায় ২০২৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় দাখিল করা সিভিতে নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে পুতুল লেখেন- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা/শিক্ষা ম্যানুয়েল রিভিউ সম্পর্কিত কার্যক্রমে অংশগ্রহণ, অটিজম এবং মানসিক সমস্যা সংক্রান্ত কারিগরি বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন।

এসব দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা উল্লেখ করায় তার সিভি সমৃদ্ধ হয়, যার ফলে আঞ্চলিক পরিচালক পদে নিয়োগের পথ সুগম হয়। পুতুল দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন কি-না তা যাচাইয়ের জন্য বিএসএমএমইউ উপাচার্য বরাবর চিঠি পাঠিয়ে জানা যায় হাসপাতালটিতে পুতুল-অনানারি স্পেশালিস্ট/এক্সপার্ট হিসেবে শিক্ষকতা/শিক্ষা ম্যানুয়েল তৈরি অথবা রিভিউ সম্পর্কিত কোনো তথ্য নেই। অর্থাৎ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় দাখিল করা সিভিতে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে মিথ্যা ও ভুয়া যোগ্যতা উল্লেখ করে আবেদন ও নিয়োগ লাভ করেছেন সায়মা ওয়াজেদ।

দ্বিতীয় মামলায় বলা হয়, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসভুক্ত ব্যাংকের সিএসআর খাত থেকে সূচনা ফাউন্ডেশনের নামে ৩৩ কোটি টাকা সহায়তার নামে আদায় করেছেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ও এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে পরস্পর যোগসাজশে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসভুক্ত ২০টি ব্যাংক থেকে বিধিবহির্ভূতভাবে সূচনা ফাউন্ডেশনের অনুকূলে মোট ৩৩ কোটি টাকা দিতে বাধ্য করা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন এর ৫(২) ধারা ও দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

সায়মা ওয়াজেদ ও অপর আসামি বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার পরস্পর যোগসাজশে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসভুক্ত ব্যাংকগুলোকে তাদের সিএসআর ফান্ড থেকে বিধিবহির্ভূতভাবে সূচনা ফাউন্ডেশনের অনুকূলে টাকা দিতে চাপ প্রদানের জন্য সময়ে সময়ে পত্র প্রদান করে। এর প্রেক্ষিতে, ২০১৭ সালের মে মাসে ১৭টি ব্যাংক বাধ্য হয়ে তাদের সিএসআর খাত থেকে মোট ২১ কোটি টাকা প্রদান করে এবং এ প্রক্রিয়ায় সর্বমোট ২০টি ব্যাংক থেকে ৩৩ কোটি ৫ লাখ টাকা সূচনা ফাউন্ডেশনের অনুকূলে প্রদানের জন্য বাধ্য করা হয়।

চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে বাধ্য করে আদায়কৃত ওই অর্থ পরবর্তীতে কীভাবে কোন খাতে খরচ হয়েছে সেটি জানার জন্য সূচনা ফাউন্ডেশনের ঠিকানায় অনুসন্ধানকালে পত্র প্রদান করা হলেও কোনো রেকর্ডপত্র পাওয়া যায়নি। যেহেতু প্রতিষ্ঠানটির কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি তাই উক্ত অর্থ উত্তোলনপূর্বক/বিভিন্ন ভুয়া রেকর্ডপত্র সৃজনপূর্বক আত্মসাৎ করা হয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *