সাইফুল ইসলাম একাঃ রাজধানী উত্তরার তুরাগে ছাত্রীদের যৌন হয়রানি অফিস কক্ষে বসে পর্নোগ্রাফি ভিডিও দেখা মাদ্রাসায় পড়ুয়া মেয়েদের ছবি সংগ্রহ করে ফেসবুকে স্টোরি দেওয়া। এছাড়াও মাদ্রাসার নির্মাণাধীন ভবনের হিসাবে গড়মিল করা এনটিআরসিএ সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকদের এমপিও আবেদন করতে অর্থ চাওয়া। নিয়োগে বানিজ্যসহ। এমন হাজারো অভিযোগে অভিযুক্ত রাজধানীর তুরাগ থানাধীন ভাটুলিয়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সহসুপারের বিরুদ্ধে।
গত ০৯/০২/২০২৩ তারিখ জয়েন এর পর থেকেই শিক্ষার্থীদের অফিস কক্ষে যৌন হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া উক্ত ভারপ্রাপ্ত সুপার অফিস কক্ষে বসে পর্নোগ্রাফি ভিডিও দেখার একটি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত সুপারের এমন ঘৃনীত কর্মকান্ডে অভিযোগ থাকার পরও পরিচালনা কমিটি ও স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের কারণে নেওয়া হচ্ছে না কোন ব্যবস্থা। ফলে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। সহঃ সুপার মোঃ আসাদুল হককে ২১/০৯/২০২৩ তারিখে ভারপ্রাপ্ত সুপারের দায়িত্ব প্রদান করা হয়।
দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই ছাত্রীদের হয়রানির অভিযোগ বেড়েই চলেছে। উল্লেখযোগ্য, ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের 6ষ্ঠ শ্রেণির একজন ছাত্রী ছুটির জন্য অফিস কক্ষে গেলে ভারপ্রাপ্ত সুপার মোঃ আসাদুল হক চেয়ার থেকে উঠে এসে মেয়েটিকে কাছে টেনে তার স্পর্ষকাতর স্থানে হাত দিলে মেয়েটি তার হাত ঝাড়া দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে বের হয়ে যায়। এবং বাড়ি গিয়ে বিষয়টি অভিভাবককে জানালে এক পর্যায়ে তারা ঘটনার বিচার চেয়ে প্রতিষ্ঠানের যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটির আহবায়ক একই প্রতিষ্ঠানের আরেকজন শিক্ষিকা রাবেয়া আক্তারের নিকট লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী পরিবার। অভিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত সুপার কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর থানাধীন হোসেনাবাদ গ্রামের মৃত মহত আলি মালিথা’র সন্তান।
নিয়ম মোতবেক তৎকালিন প্রতিষ্ঠানের সভাপতি মোঃ ছাদেকুর রহমান (নির্বাহী কর্মকতা,ঢাকা উত্তর সিটি জোন-6), যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটির আহবায়ককে ঘটনা তদন্ত করে রিপোর্ট প্রদানের নির্দেশ দেন। নির্দেশ মোতাবেক তদন্ত করে শিক্ষার্থী ও তার মায়ের সাক্ষাৎকার নিয়ে ঘটনার সত্যতা পান। অভিযোগের বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত সুপারের বক্তব্য নিতে গেলে তিনি তদন্ত কমিটিকে তার বক্তব্য প্রদানে অপরাগতা প্রকাশ করেন। তদন্ত কমিটি যাচাই-বাছাইয়ে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করলে এলাকার প্রভাবশালী মহলের কিছু কুচক্র মহল চাপ সৃষ্টিকরে প্রতিবেদনটি জমা না দেওয়ার চাপ সৃষ্টি করেন। উক্ত মহল শিক্ষকদের আশ্বস্ত করেন যে এড-হক কমিটি গঠন হলে উক্ত ভারপ্রাপ্ত সুপার পদত্যাগ করবে। কিন্তু অদ্যাবধি পর্যন্ত অদৃশ্য কারণে উক্ত ভারপ্রাপ্ত সুপারের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তীব্র অসেন্তাষ প্রকাশ করেন। এব্যাপারে তদন্ত কমিটির আহবায়ক রাবেয়া আক্তার বলেন, অভিযোগ পেয়ে শিক্ষার্থী ও তার মায়ের সাক্ষাৎকার নিয়ে ঘটনার সত্যতা তারা পেয়েছেন, এবং ভারপ্রাপ্ত সুপারকে অনতিবিলম্বে অপসারণ করার সুপারিশ করেছেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে পরিচালনা কমিটি দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে শিক্ষকদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করা সহ যে কোন সময় এই সুপার কর্তৃক যে কোন শিক্ষার্থীর সাথে দূর্ঘটনা আসঙ্কা করছে। এছাড়াও এই ঘটনার পর ভারপ্রাপ্ত সুপার অফিস কক্ষের সিসিটিভির ফুটেজ নষ্ট করার জন্য মেরামতের নামে হার্ড ডিস্ক বাহিরে নিয়ে প্রমাণ লোপাট করেন এবং দুই দিন পরে ঘটনার দিনের ছাত্রীর শরীরে হাত দেওয়ার সময়ের ফুটেজটি ডিলেট করে পুনরায় হার্ডডিস্ক লাগিয়ে দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিষ্ঠানটির একাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকা জানান যে, পরিচালনা কমিটি অজ্ঞাত কারণে ভারপ্রাপ্ত সুপারের পক্ষালম্বন করে ঘটনার সুষ্ঠ বিচারে বিলম্ব করে আসছে । যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটির একাধিক সদস্য অভিযোগ করে বলেন, মহামান্য হাইকোর্টের রিট পিটিশন নং 5916/2008 এর আলোকে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের নিদের্শনায় হওয়া কমিটির বাহিরে গিয়ে পাবলিক কমিটি দিয়ে তদন্তের নামে সময়ক্ষেপন করে অভিযুক্তকে প্রশ্রয় দিচ্ছে এবং শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটির বাহিরে গিয়ে পাবলিক কমিটি দিয়ে তদন্ত করানোর নিয়ম বহির্ভূত।
এছাড়া উক্ত ভারপ্রাপ্ত সুপার অফিস কক্ষে বসে পর্নোগ্রাফি দেখার ১মিনিট 23 সেকেন্ড এর একটি ফুটেজ সোস্যাল মিডিয়া ছড়িয়ে পড়ে। উক্ত ফুটেজের তারিখ ছিল ২২-১১-২০২৪। ফুটেজ জুম করলে দেখা যায় ভারপ্রাপ্ত সুপার মোঃ আসাদুল হক অফিস কক্ষে তার চেয়ারে বসে নিজ মোবাইলে পর্নোগ্রাফি ভিডিও দেখতেছে।
ভারপ্রাপ্ত সুপারের এমন ঘৃন্যতম কর্মকান্ডে অভিভাবকমহল গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে অনতিবিলম্বে উক্ত ভারপ্রাপ্ত সুপারকে বরখাস্ত করার জোর দাবী জানায়।
মাদ্রাসার শিক্ষকগণ ভারপ্রাপ্ত সুপারের এমন কর্মকান্ডে তাকে অপসারণের দাবী জানালেও অজ্ঞাত কারণে মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটি যথাযথ ব্যবস্থা নিতে নানান তালবাহান করে আসছে। ভারপ্রাপ্ত সুপারের এমন কর্মকান্ডে প্রতিষ্ঠানটির ভাবমুর্তি ক্ষুন্নসহ অভিভাবকগণ উৎকন্ঠায় রয়েছে। তবে আজ 09 মার্চ স্থানীয় ছাত্র জনতা ও সাধারণ মানুষের বিক্ষোভের মুখে পড়ে যৌথবাহিনী তাকে আটক করে।
যদিও এখনো ভারপ্রাপ্ত সুপার এর দায়িত্ব পাওয়ার পর অর্থ লোপাটসহ এলাকার প্রভাবশালী মহলের সাথে সু সম্পর্ক রেখে তাদের যোগসাজসে নিয়োগে বানিজ্য শুরু করে। নিয়োগ প্রত্যাশি বিভিন্ন প্রার্থীদের নিকট অর্থের বিনিময়ে চাকুরী দেওয়ার মতো আশ্বাস দেওয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এছাড়া সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির এড-হক কমিটি গঠন নিয়ে বাসা থেকে ডেকে সিভি নিয়ে পরবর্তীতে ভুল তথ্য দিয়ে বোর্ডে প্রেরণ করেন। ও অর্থের বিনিময়ে এডভোকেট আল-আমীনকে সভাপতি করার অভিযোগে ভাটুলিয়া নিবাসি মোঃ রুবেল পারভেজ নামের এক যুবক ফেসবুকে ভিডিও পোষ্ট করে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। এবিষয়ে এডভোকেট আল-আমীন এর সাথে কথা বলে জানা গেছে সভাপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে মিনিমাম স্নাতক সমমান পাশ হতে হবে, সেক্ষেত্রে ভারপ্রাপ্ত সুপার মোঃ আসাদুল হক বোর্ডে তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনজন ব্যক্তিরই অধিক যোগ্য থাকা সত্বেও সেই তথ্য না দিয়ে বি,এ. পাশ দেখিয়েছে। এ বিষয়ে কোন টাকা পয়সা লেন-দেন হয়নি। এছাড়াও ভারপ্রাপ্ত সুপারের বিরুদ্ধে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আনীত অভিযোগের বিষয়ে নতুন একটি কমিটি করে তদন্ত করার আশ্বাস দেন।
এনটিআরসিএ এর পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তির আলোকে সুপারিশপ্রাপ্ত দুইজন শিক্ষিকা যোগদান করতে আসলে তাদের কাছে এমপিওভুক্তির জন্য অর্থ চেয়ে তাদের এমপিও আবেদনে বিলম্ব করার অভিযোগও আছে এই ভারপ্রাপ্ত সুপারের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী শিক্ষিকা ফাতেমা আক্তারের নিকট জানতে চাইলে তিনি তৃতীয়মাত্রাকে জানান, ভারপ্রাপ্ত সুপার আসাদুল হক বলেন, আপনাদের এমপিও ভুক্ত হতে হলে থানা শিক্ষা অফিসে টাকা ও গিফট দিতে হবে অন্যথায় ছয়মাসেও এমপিওভুক্ত হতে পারবেন না। অন্য আরেকজন ভুক্তভোগী শিক্ষিকা আমেনা বেগম এর নিকট জানতে চাইলে তিনি তৃতীয় মাত্রাকে বলেন, “এমপিওভুক্ত হওয়ার জন্য তাদের 20,000/- টাকা প্রদান করতে হবে।
কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর থানাধীন মুসলিমনগর দাখিল মাদ্রাসায় ভারপ্রাপ্ত সুপার থাকাকালীন নারী কেলেংকারীসহ উক্ত প্রতিষ্ঠানের অর্থ লোপাটের অভিযোগ অসংখ্য। এবিষয়ে ঐ মাদ্রাসার বর্তমান সুপার মোঃ আব্দুল ওহাব বিশ্বাস তৃতীয় মাত্রাকে জানায় আসাদুল হক এই প্রতিষ্ঠানে থাকাকালীন সময়ে অসংখ্য অনিয়ম দূর্নীতি ও বিভিন্ন ছাত্রীদের যৌন হয়রানি করে আসছিল। শিক্ষকেরা এর প্রতিবাদ করলে নিজেকে আন্ডার গ্রাউন্ডের লোক ও ওলামালীগের সদস্য বলে দাবী করতেন। উনার দাপটে প্রতিষ্ঠানটির ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে শিক্ষক-শিক্ষিকারা আতংকিত থাকতেন। এছাড়াও তার নিজ স্ত্রী’র সাথেও সুসম্পর্ক নেই বলেও জানান তিনি।
এবিষয়ে অভিযুক্ত সহঃ সুপার মোঃ আসাদুল হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি তৃতীয় মাত্রাকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত পর্নোগ্রাফির ভিডিওটি এডিট করা, আমার মান ক্ষুন্ন করার জন্য এটি করেছে। এছাড়াও তিনি জানান, 6ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী আমার কক্ষেই আসেনি। এমন কোন সিসিটিভির ফুটেজ নাই। আপনি সিসিটিভির ফুটেজ ডিলেট করেছেন এবিষয়ে প্রশ্ন করলে বিষয়টি প্রাথমিক অস্বীকার করেন। একপর্যায়ে বলেন, হার্ড ডিস্কে খুব সাউন্ড করে তার জন্য সাবেক সভাপতি ইকবাল সাহেবের অনুমতিক্রমে আমি হার্ডডিস্কের ও মনিটরের মেরামত করি। কোন ভিডিও ডিলিট করা হয়নি। অন্য আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমার সাবেক প্রতিষ্ঠান কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর থানাধীন মুসলিমনগর দাখিল মাদ্রাসায় কর্মরত থাকাকালীন আমি কোন অনিয়ম বা দুর্নীতি করি নাই। এছাড়াও বর্তমানে প্রতিষ্ঠানে থাকা দুইজন শিক্ষিকার করা অভিযোগ এমপিওভুক্ত হওয়ার জন্য আমি 20,000/- টাকা চেয়েছি, এগুলো সম্পূর্ণ বানোয়াট ও মিথ্যা।
ভারপ্রাপ্ত সুপারের এসকল অপকর্মের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটির নব অনুমোদিত সভাপতি এডভোকেট আল-আমীনের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি ঘটনার বিষয়ে পূর্নাঙ্গ কিছুই জানি না। তবে এমন ঘটনা ঘটেছে প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকা আমাকে জানিয়েছেন ও ভুক্তভোগী পরিবার একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। এবিষয়ে আমি এখনো পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোন লিখিত অভিযোগপত্র হাতে পাইনি। সর্বশেষ 07/03/2025ইং পরিচালনা কমিটির ও স্থানীয় ব্যক্তিবর্গের সামনে মিটিং এ শিক্ষক প্রতিনিধি সদস্য সালমা আক্তার বিষয়টি সকলের সামনে জানালে সকলের সম্মতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবিষয়ে নতুন করে একটি কমিটি গঠন করে ঘটনাগুলোর সত্যাত মিললে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে তুরাগ থানার অফিসার ইনচার্জ রাহাত বলেন, আজ সকাল ৯ টা থেকেই প্রতিষ্ঠানটির প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও বর্তমান শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের বিক্ষোভ শুরু করেন এমনটি তিনি তৃতীয় মাত্রা আমাকে জানায়, ঘটনার একপর্যায়ে আমি নিজে ঘটনাস্থালে এসে ক্ষুদ্ধ জনতাকে শান্ত করে এবং অভিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত সুপার জনসম্মুক্ষে পদত্যাগ করেন। একপর্যায়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় তাকে আটক করা হয়। তার অপরাধ বিবেচনা করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।