মহেশখালী-মাতারবাড়ীকে সিঙ্গাপুরের মতো টাউনশিপে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে : মিডা প্রধান

ডেক্স নিউজ: মহেশখালী ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (মিডা)’র নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেছেন, সরকার মহেশখালী-মাতারবাড়ীকে সিঙ্গাপুর ও সাংহাইয়ের মতো উন্নত ও আধুনিক বন্দরকেন্দ্রিক টাউনশিপে রূপান্তর করতে একটি মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করতে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘দীর্ঘমেয়াদি ভিশনকে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর জন্য এটিকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়েছে ু ইনকিউবেশন, এক্সপানশন এবং ডাইভারসিফিকেশন। এর একটি শক্তিশালী সূচনা হলো ২০২৫ সালের চতুর্থ প্রান্তিকজুড়ে চলমান ১২০ দিনের কর্মপরিকল্পনা। ১০টিরও বেশি সংস্থা ও মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে চূড়ান্তভাবে এ বছরের শেষ নাগাদ মিডার মাস্টার প্ল্যান তৈরি হবে। এটিই হবে দীর্ঘমেয়াদি রোডম্যাপ বাস্তবায়নের প্রথম ধাপ, যা মিডাকে অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।’

তিনি উল্লেখ করেন, ১২০ দিনের এ কর্মপরিকল্পনা ইতোমধ্যেই প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব মন্তব্য করেন।

তার বক্তব্যে তিনি ব্যাখ্যা করেন, মহেশখালী-মাতারবাড়ী ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ বাংলাদেশে অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্য হাব হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে পরিকল্পিত হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘এখানে একই স্থানে লজিস্টিকস, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, উৎপাদন এবং মৎস্যশিল্পকে সমন্বিত করা হবে। সহজভাবে বললে, গভীর সমুদ্রবন্দর সুবিধার সঙ্গে জ্বালানি টার্মিনাল, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও অর্থনৈতিক অঞ্চলকে যুক্ত করা হবে, যাতে শিল্পকারখানাগুলো জ্বালানির উৎস ও লজিস্টিকস সাপোর্টের কাছাকাছি থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে।’

মিডা প্রধান উল্লেখ করেন যে মাতারবাড়ি-মহেশখালী অঞ্চলকে এমন বহুমাত্রিক প্রকল্পের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে কয়েকটি প্রতিযোগিতামূলক কারণে। এর মধ্যে রয়েছে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় খসড়া (ড্রাফট), বিদ্যুৎ, জ্বালানি, উৎপাদন ও ভারী শিল্প, সামুদ্রিক ও মৎস্যশিল্পের জন্য সমন্বিত একটি পরিবেশ গড়ে তোলার উপযোগী নিকটবর্তী ভূমি।

তিনি বলেন, এই পরিকল্পনা সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। জাইকার এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, আগামী ২০ থেকে ৩০ বছরে এ প্রকল্পে ৬০ থেকে ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ হতে পারে।

এর মধ্যে ৪৭ থেকে ৪৮ বিলিয়ন ডলার হবে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ, যার ১০ শতাংশ (৪.৮ বিলিয়ন ডলার) প্রত্যাশিত প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই)। প্রকল্পের মোট জিডিপি প্রভাব হবে প্রায় ১৫০ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে প্রত্যক্ষ প্রভাব ৭০ থেকে ৭৫ বিলিয়ন ডলার। এর ফলে দীর্ঘমেয়াদে ১.৫ লাখ প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান এবং ২৫ লাখ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। একই সঙ্গে কক্সবাজার অঞ্চলের অর্থনীতির স্থায়িত্বে অবদান রাখবে এবং পর্যটকের সংখ্যা বর্তমানের দেড়গুণ বৃদ্ধি ঘটাবে।

আশিক চৌধুরী জানান, পরিকল্পনাটি চারটি মূল স্তম্ভের ওপর দাঁড় করানো হয়েছে,ু বন্দর ও লজিস্টিকস, উৎপাদন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, এবং মৎস্যশিল্প।

তিনি বলেন, মাতারবাড়ীর প্রাকৃতিক গভীরতা প্রায় ১৮.৫ মিটার, যা বড় জাহাজ সরাসরি নোঙর করার সুযোগ দেবে। এতে শিপিং খরচ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমবে এবং ৩০ বছরের মধ্যে বন্দর সক্ষমতা ৫০ শতাংশ বাড়বে।

এ ছাড়া, ম্যানুফ্যাকচারিং হাব হিসেবে ইস্পাত, কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, অটোমোবাইল, ইলেকট্রনিকসসহ ৯টি শিল্পকে চিহ্নিত করা হয়েছে। রপ্তানি বহুমুখীকরণের জন্য ওষুধ, সিনথেটিক ফাইবার এবং জাহাজ নির্মাণ শিল্পকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

তিনি জানান, দীর্ঘমেয়াদে এই প্রকল্প থেকে ৬ বিলিয়ন ডলারের ব্যালান্স অব পেমেন্ট সাশ্রয় হবে এবং ৩০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের মোট উৎপাদনে সরাসরি ১০ শতাংশ অবদান রাখবে।

চাহিদার বৃদ্ধিকে মাথায় রেখে বিদ্যুৎ উৎপাদন হাব গড়ে তোলার পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে, যা দীর্ঘমেয়াদে দেশের বিদ্যুৎ চাহিদার ৯০ শতাংশ দেশীয়ভাবে পূরণে সহায়ক হবে।

অবশেষে, গভীর সমুদ্র মৎস্য আহরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পকে সম্ভাবনাময় চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও মিডার সদস্য (অতিরিক্ত সচিব) মো. সরওয়ার আলমও উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com