মঙ্গলে গিয়ে বিপাকে নাসা-র যান

মঙ্গলে গিয়ে মহাবিপাকে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা-র রোভার কিউরিওসিটি। সেখানকার খাড়াই পাহাড়ে চড়তে গিয়ে রীতিমতো গড়িয়ে পড়ে যাওয়ার অবস্থা হয়েছিল ওই নভোযানের। এমনকি কিছুক্ষণের জন্য সেটির ঘোরাফেরা বন্ধ করে দেন আমেরিকার জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।

নাসা সূত্রে খবর, চলতি মাসেই মঙ্গলের মাউন্ট শার্প নামের একটি পাহাড়ের পাদদেশ গিয়ে পৌঁছয় রোভার কিউরিওসিটি। এরপর শুরু হয় সেটির উপরে ওঠার প্রক্রিয়া। লাল গ্রহের এই পাহাড়টি প্রায় তিন মাইল লম্বা। কয়েক বিলিয়ন বছর আগে ওই এলাকায় পাহাড়টি গজিয়ে ওঠে। সেখানে আগে হ্রদ ও নদী ছিল বলে অনুমান।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলের বুকে রোভার কিউরিওসিটিকে চালানোর দায়িত্ব অ্যামি হেলকে দিয়েছে নাসা। তিনি জানিয়েছেন, ‘মঙ্গলের ওই পাহাড়টির যে অংশ দিয়ে রোভারটিকে উপরে নিয়ে যাচ্ছিলাম, সেখানকার ঢাল ছিল প্রায় ২৩ ডিগ্রি। ফলে উপরে ওঠার সময় আমাদের কিউরিওসিটিকে থামাতে হয়। নইলে সেটা গড়িয়ে গভীর খাতে পড়ে যেত।’

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ক্যারোলিনার প্রপালশান ল্যাবরেটরি থেকে রোভার কিউরিওসিটিকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। শুক্রবার সংস্থার তরফে একটি বিবৃতিতে কিউরিওসিটির ক্ষতির কথা জানানো হয়েছে। ‘১ জুন মাউন্ট শার্পে ওঠা শুরু করে আমাদের রোভার। যাত্রাপথে বড় বড় পাথর ছিল। খাড়াই ঢালের কারণে কিউরিওসিটিকে আগু-পিছু করা যাচ্ছিল না। ওঠার সময় পাথরে ধাক্কা লাগায় এর কলকব্জা নড়ে যায়। ফলে রোভারটির ঘোরাফেরা বন্ধ করতে বাধ্য হই আমরা।’ বিবৃতিতে বলেন অ্যামি হেল।

মার্কিন জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের অনুমান, কিউরিওসিটির পিছনের চাকার ক্ষতি হয়েছে। সমস্যা চিহ্নিত করতে ক্যামেরায় এর ছবি তোলা হয়। নাসা-র দাবি এখনও মঙ্গল পৃষ্ঠের ছবি পাঠিয়ে চলেছে রোভার কিউরিওসিটি। এবার লাল গ্রহের ওই খাড়াই পাহাড় থেকে নামিয়ে এনে সেটিকে ১৫০ মিটার দূরের একটি কঠিন জায়গায় নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমেরিকার স্পেস এজেন্সি।

সম্প্রতি নাসা-র এই কিউরিওসিটি রোভারটিই মঙ্গলে জলের অস্তিত্ব খুঁজে পায়। লাল গ্রহের উপরিভাগ এমনতি খুবই রুক্ষ। তবে এর বেশ কিছু জায়গায় ফাটল রয়েছে। সেই ফাটলের নীচেই রয়েছে থকথকে কাদার মতো অংশ। পানি না থাকলে যা কখনই সম্ভব নয়। শুধু তাই নয়, পৃথিবীর মত মঙ্গলের ঋতু চক্র রয়েছে বলেও জানা গিয়েছে।

এর পাশাপাশি মঙ্গলের গতিবেগ নিয়েও চাঞ্চল্যকর তথ্য পাঠিয়েছে মার্কিন নভোযান। যার উপর ভিত্তি করে বিজ্ঞানীদের অনুমান, আগের চেয়ে বেশি গতিতে ঘুরছে লাল গ্রহ। ফলে সেখানে দিনের চেয়ে রাত অনেক বেশি বড় হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা। চলতি বছরের ৫ অগাস্ট মঙ্গলে ১১ তম বর্ষ পূরণ করেছে রোভার কিউরিওসিটি। আর কতদিন লালগ্রহে সেটি কাজ করতে পারবে, তা নিয়ে অবশ্য এখনও মুখ খোলেনি নাসা।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।