কুষ্টিয়া, ১৪ মে ২০২৫: স্বাধীনতার চেতনা কেবল একটি ভূখণ্ডের মুক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটি একটি ন্যায়ভিত্তিক, শোষণমুক্ত ও মর্যাদাসম্পন্ন সমাজ গঠনের নিরবিচার সংগ্রামের নাম। ঠিক এমন একটি সমাজব্যবস্থার স্বপ্ন দেখতেন এবং সে লক্ষ্যে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হাদী। কুষ্টিয়ার এই গেরিলা যোদ্ধা শুধু অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেননি, ছাত্রনেতা, সমাজ সংগঠক ও আদর্শবাদী প্রতিবিপ্লবী হিসেবেও রেখে গেছেন গৌরবময় অবদান।
শামসুল হাদীর ৫০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ ১৪ মে ২০২৫, বুধবার সকাল ১১:০০ টায় বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হাদী গ্রন্থাগারের উদ্যোগে এবং ফেয়ার ও মেন্ডেল সায়েন্স ক্লাব, দিনমণি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহযোগিতায় বিদ্যালয়ে এক আলোচনা সভা ও সৃজনশীল প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গ্রন্থাগারের সভাপতি ও কুষ্টিয়া সরকারি মহিলা কলেজের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক জনাব অজয় কুমার মৈত্র। শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন ফেয়ার-এর পরিচালক ও গ্রন্থাগারের সদস্য সচিব দেওয়ান আখতারুজ্জামান।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দিনমণি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জনাব মো: সালাউদ্দিন খান। তিনি ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বলেন, “তোমাদের মেধা, জ্ঞান ও শ্রমই পারে দেশটাকে বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে। নিয়মিত পাঠাভ্যাস গড়লে তোমরা একদিনই ভবিষ্যতের নেতৃত্বে যাবে।”
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার জনাব আলাউদ্দিন আহমেদ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জনাব সুবাস চন্দ্র রায় এবং আন্তর্জাতিক এনজিও সংস্থার কর্মকর্তা জনাব সাইদুর রহমান।



বিশেষ অতিথিদের বক্তব্যে উঠে আসে:
- জনাব সাইদুর রহমান বলেন, “বই পড়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা মনীষীদের চিন্তা–চেতনার সঙ্গে পরিচিত হতে পারে। লাইব্রেরি এমন এক স্থান, যেখানে জ্ঞান, ইতিহাস ও অনুপ্রেরণা একত্রে মেলে। একে আরও সমৃদ্ধ ও সবার জন্য সহজপ্রাপ্য করতে হবে।“
- জনাব আলাউদ্দিন আহমেদ বলেন, “শামসুল হাদীর আত্মত্যাগ আমাদের মনে করিয়ে দেয়—স্বাধীনতা মানে শুধু রাজনৈতিক মুক্তি নয়, বরং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ন্যায়ের বাস্তবায়ন।”
- জনাব সুবাস চন্দ্র রায় বলেন, “নৈতিকতা ও আদর্শ ছাড়া কোনো সংগ্রাম টিকে থাকতে পারে না। তরুণদের এই মূল্যবোধ ধারণ করতে হবে।”
সভাপতির বক্তব্যে জনাব অজয় কুমার মৈত্র বলেন, “শামসুল হাদী শুধু একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না, ছিলেন আদর্শ ও ন্যায়ের সংগ্রামী। তাঁর জীবন আজকের প্রজন্মের জন্য একটি শিক্ষার আলোকবর্তিকা।”
গত ১৩ মে গ্রন্থাগারের আয়োজনে ৭৮ জন শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে সৃজনশীল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এতে দুটি গ্রুপে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা হচ্ছেন:
🔹‘ক’ গ্রুপ (ষষ্ঠ–অষ্টম শ্রেণি): ১ম স্থান: অনিক কুমার দত্ত (অষ্টম শ্রেণি), ২য় স্থান: আরাফ (ষষ্ঠ শ্রেণি) এবং ৩য় স্থান: অভি পাল (অষ্টম শ্রেণি) ও জুনায়েত হাসান (ষষ্ঠ শ্রেণি) [সম-অবস্থানে]
🔹 ‘খ’ গ্রুপ (নবম শ্রেণি): ১ম স্থান: জয় মো: তাসিন, ২য় স্থান: আরাফ এবং ৩য় স্থান: লিমন আহমেদ
অনুষ্ঠানটি জাতীয় ইতিহাস ও স্থানীয় সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় নতুন প্রজন্মের মাঝে শামসুল হাদীর আদর্শকে ছড়িয়ে দিতে একটি তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।