চ্যানেল7বিডি ডেক্স: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা অধিগ্রহণ এবং ফিলিস্তিনিদের পুনর্বাসনের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে বিশ্বনেতারা তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বুধবার এই প্রস্তাব প্রকাশিত হওয়ার পর মধ্যপ্রাচ্যসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
ট্রাম্পের বিতর্কিত প্রস্তাব
ট্রাম্প গাজাকে মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা হিসেবে পুনর্গঠনের পরিকল্পনা প্রকাশ করলে তা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর তীব্র সমালোচনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়া, তার দীর্ঘদিনের মিত্র রাষ্ট্রগুলোর মধ্যেও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়।
হামাসের প্রতিক্রিয়া
গাজা শাসক গোষ্ঠী হামাস ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে আগুনে ঘি ঢালার শামিল বলে উল্লেখ করেছে। এক বিবৃতিতে হামাস জানায়,
ফিলিস্তিনি জনগণ কখনোই তাদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ হতে দেবে না। গাজার প্রতিটি ইঞ্চি মুক্ত করার জন্য আমরা রক্ত দিয়েছি, আমাদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চলবে, যার রাজধানী হবে জেরুজালেম।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নিন্দা
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ট্রাম্পের প্রস্তাবকে ‘সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান’ করেছেন। তার দপ্তর থেকে জানানো হয়, ফিলিস্তিনিদের জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত করার কোনো প্রস্তাবই গ্রহণযোগ্য নয়। ফিলিস্তিনিদের অধিকার কখনোই আলোচনার বিষয় হতে পারে না।
ইসরাইলের প্রতিক্রিয়া
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ট্রাম্পের প্রস্তাবকে ‘মনোযোগের দাবিদার’ বলে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন, মার্কিন নেতৃত্বে গাজা নতুনভাবে বিনির্মাণ হলে তা ইতিহাস বদলে দিতে পারে।
তবে ইসরাইলের ডানপন্থী অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মট্রিচ ঘোষণা দিয়েছেন, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ধারণা চিরতরে দাফন করা হবে।
জাতিসংঘের উদ্বেগ
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে বিস্ময়কর বলে অভিহিত করেছেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ফলকার তুর্ক জোর দিয়ে বলেন, কোনো দখলকৃত অঞ্চল থেকে জোরপূর্বক জনগণকে সরানো আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। প্রতিটি রাষ্ট্রকে এই নীতি রক্ষা করতে হবে।
বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া
চীন: গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের স্থানান্তরের বিরোধিতা করেছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়,
"ফিলিস্তিনিদের শাসন তাদের ভূখণ্ডের মধ্যেই থাকা উচিত।"
ফ্রান্স: ফরাসি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে,
"গাজা কোনো তৃতীয় পক্ষের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়া উচিত নয়। ফ্রান্স দুই-রাষ্ট্র সমাধানের প্রচারণা চালিয়ে যাবে।"
তুরস্ক: পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান বলেছেন,
"গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের যে কোনো প্রচেষ্টা অগ্রহণযোগ্য।"
মিশর: গাজার পুনর্গঠনের আহ্বান জানিয়েছে এবং বলেছে,
"ফিলিস্তিনিদের বিতাড়ন না করে গাজা পুনর্গঠন করতে হবে।"
ব্রিটেন: প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার বলেছেন,
"ফিলিস্তিনিদের গাজায় ফিরে যাওয়ার অধিকার থাকতে হবে।"
জার্মানি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্নালেনা বেয়ারবক বলেছেন,
"গাজা, পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেম ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড, যা ভবিষ্যত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ভিত্তি হবে।"
অস্ট্রেলিয়া: প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবেনিজ দুই-রাষ্ট্র সমাধানের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
ব্রাজিল: প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা ট্রাম্পের ধারণাটিকে "প্রায় অস্পষ্ট" বলে অভিহিত করেছেন।
বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড়
ট্রাম্পের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই প্রস্তাব মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।
তথ্যসূত্র: বাসস