বিদেশে ৪০ হাজার কোটি টাকার চুরি হওয়া সম্পদের সন্ধান মিলেছে : সিএকে এনবিআরের সিআইসি প্রধান

বাসস: জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের অর্থ পাচারের মাধ্যমে গড়ে ওঠা প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার সম্পদের সন্ধান পেয়েছে।

সিআইসি মহাপরিচালক আহসান হাবিব আজ প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে পাঁচ দেশের সাতটি শহরে অনুসন্ধান চালিয়ে এই সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে।

রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন যমুনায় এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান এবং সিআইসি মহাপরিচালক প্রধান উপদেষ্টাকে এ তথ্য অবহিত করেন।

এ ছাড়া নয়টি দেশে কিছু বাংলাদেশির অর্থের বিনিময়ে সংগ্রহ করা ৩৫২টি পাসপোর্ট পাওয়া গেছে।

দেশগুলো হলো: অ্যান্টিগুয়া অ্যান্ড বারবুডা, অস্ট্রিয়া, ডমিনিকা, গ্রেনাডা, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস, নর্থ মেসিডোনিয়া, মাল্টা, সেন্ট লুসিয়া ও তুরস্ক।

আহসান হাবিব জানান, বিভিন্ন সূত্র থেকে তথ্য পাওয়ার পর প্রাথমিক প্রস্তুতি নিয়ে সিআইসির গোয়েন্দারা সরেজমিনে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে গিয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেছে।

তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ৩৪৬টি সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে, যা বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার করে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে বিদেশে গড়ে তোলা হয়েছে। এটি আমাদের অনুসন্ধানের আংশিক চিত্র।’

তিনি জানান, সিআইসি এসব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে বাংলাদেশের অনুকূলে ফেরানো এবং অর্থ পাচারে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করতে কাজ করছে। এ প্রক্রিয়ায় ছয়টির বেশি আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশকে সহায়তা করছে।

তিনি বলেন: ‘আমরা এখন পর্যন্ত যা পেয়েছি, তা হিমশৈলের চূড়ামাত্র। আমাদের হাতে এখনও অনেক তথ্য আছে, যা উন্মোচনে আরও সময় লাগবে।’

আহসান হাবিব জানান, অর্থ পাচারে জড়িতরা শেখ হাসিনার শাসনামলে সেন্ট্রাল ব্যাংক ডাটাবেজ (সিবিএস) নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ায় নিজেদের লোক বসিয়ে অনেক তথ্য মুছে ফেলেছিল। তবে আশার বিষয় হলো সিআইসি এখন মুছে ফেলা তথ্য পুনরুদ্ধারে দক্ষতা অর্জন করেছে।

পরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), সিআইসি, সিআইডি ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে অর্থ পাচারে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।

তিনি বলেন, ভবিষ্যতে কেউ যাতে দেশের অর্থ লুট করে বিদেশে সম্পদ গড়ে তুলতে না পারে, সে জন্য একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।

সিআইসিকে তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অনুসন্ধান যতটা সম্ভব গভীরে যেতে হবে এবং যত বেশি দেশে সম্ভব বিস্তৃত করতে হবে।

তিনি আশ্বাস দেন যে দেশের সম্পদ ফিরিয়ে আনতে সম্ভাব্য সব পদক্ষেপে সরকার পূর্ণ সহযোগিতা করবে।

দেশের অর্থনীতিকে লুটপাটকে ভয়াবহ রাষ্ট্রদ্রোহমূলক কর্মকাণ্ড আখ্যা দিয়ে অধ্যাপক ইউনুস বলেন, ‘ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুন্দর দেশ গড়তে চাইলে এই লুটেরাদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।’

তিনি বলেন, দেশের সম্পদ যেভাবে কিছু লোক লুট করেছে তা জাতির সামনে উন্মোচন করতে হবে। এ লক্ষ্য পূরণে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে একযোগে কাজ করতে হবে বলেও তিনি যোগ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com