চ্যানেল7বিডি ডেক্স: বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন বিচার বিভাগ সংশ্লিষ্ট সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব পেশ করেছে। প্রধান বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়া, বিচারকদের যোগ্যতা ও অবসরের বয়সসহ বিচার বিভাগকে স্বাধীন ও কার্যকর করতে ২৮ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে।
বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন বিচার বিভাগ সংশ্লিষ্ট সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব পেশ করেছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে আজ বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন হস্তান্তর করা হয়। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় কমিশনের প্রধান সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান প্রতিবেদনটি প্রধান উপদেষ্টার কাছে তুলে দেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে সংস্কার প্রস্তাবের সারসংক্ষেপ গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। মোট ২৮ দফা প্রস্তাবের মধ্যে ৮ নম্বর প্রস্তাবে বিচার বিভাগ সংশ্লিষ্ট সংবিধান সংশোধনের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রধান প্রস্তাবসমূহ:
১. বিচারক নিয়োগ প্রক্রিয়া সংস্কার:
সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৮(৩) সংশোধনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সীমিত করে নিয়োগ কমিশনকে ক্ষমতায়িত করা।
অনুচ্ছেদ ৫৫(২) সংশোধনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী ক্ষমতা থেকে প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারকদের নিয়োগ প্রক্রিয়াকে পৃথক করা।
অনুচ্ছেদ ৯৪ সংশোধনের মাধ্যমে আপিল বিভাগের ন্যূনতম বিচারক সংখ্যা ৭ জন নির্ধারণ এবং প্রধান বিচারপতির মতামতকে প্রাধান্য দেয়া।
অনুচ্ছেদ ৯৫ সংশোধনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের প্রবীণতম বিচারককে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করবেন, যাতে নির্বাহী বিভাগের কোনো প্রভাব না থাকে।
২. বিচারক নিয়োগের যোগ্যতা পরিবর্তন:
প্রার্থীকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে এবং বয়স কমপক্ষে ৪৮ বছর হতে হবে।
বিচারকদের অবসরের বয়স ৬৭ বছর থেকে বাড়িয়ে ৭০ বছর করা হবে, যা ভবিষ্যতের বিচারকদের জন্য প্রযোজ্য।
বিদ্যমান ১০ বছরের পেশাগত অভিজ্ঞতার পরিবর্তে ১৫ বছরের পেশাগত অভিজ্ঞতা বাধ্যতামূলক করা।
৩. বিচারপতি নিয়োগ কমিশন গঠন:
সংবিধানে নতুন অনুচ্ছেদ ৯৫ক সংযোজনের মাধ্যমে বিচারপতি নিয়োগ কমিশন গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
৪. সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয় ও স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস প্রতিষ্ঠা:
সংবিধানের ৬৪ক অনুচ্ছেদ সংযোজনের মাধ্যমে সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয় ও স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করা হয়েছে।
সংস্কারের মূল উদ্দেশ্য:
সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবগুলোর মূল লক্ষ্য হলো বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও কার্যকর করা। সংবিধানের ষষ্ঠ ভাগ এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিধান সংশোধনের মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রতিক্রিয়া:
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সংস্কার প্রস্তাবগুলোকে সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে এই সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করা জরুরি।
পরবর্তী পদক্ষেপ:
প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় আইনি ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেয়া হবে।
তথ্যসূত্র: বাসস