বাসস : বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ড. মো. হাবিবুর রহমান বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুনভাবে আরোপিত শুল্ক বাংলাদেশের রপ্তানির ওপর খুব সীমিত প্রভাব ফেলবে।
তিনি আজ তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘আমাদের কাছাকাছি প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো বর্তমানে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি শুল্ক বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। যদিও চীন, ভারত ও পাকিস্তান এখনো তুলনামূলকভাবে কম শুল্কের সুবিধা পেতে পারে, তবুও বাংলাদেশ এই পরিস্থিতিতে লাভবান হতে পারে।’
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সব বাণিজ্যিক অংশীদার দেশের ওপর আমদানি শুল্ক হঠাৎ করেই পরিবর্তন করেছে। যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষের ঘোষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্ক ৩৭ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। এর আগে এসব পণ্যে গড় শুল্কহার ছিল ১৫ শতাংশ।
ড. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘চীন ইতোমধ্যে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে, যার ফলে চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য যুদ্ধ এক নতুন রূপ নিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হবে না বরং এই পরিস্থিতি থেকে আমরা লাভবানও হতে পারি। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য সংঘাত বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য নতুন সুযোগের দ্বার উন্মোচন করতে পারে।’
পাকিস্তান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তারা উৎপাদন ক্ষমতা ও দক্ষতায় আমাদের চেয়ে অনেক পিছিয়ে। তাই তাদের নিয়ে খুব বেশি উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই।’
তবে ভারতের ক্ষেত্রে তিনি বলেন, ‘তারা একটি বাস্তব চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়েছে। যদিও তারা এখনো ব্যয়-দক্ষতার দিক থেকে বাংলাদেশের মানে পৌঁছাতে পারেনি, যদি আমরা এখন থেকেই সক্রিয় পদক্ষেপ না নেই, ভবিষ্যতে ভারত প্রতিযোগী হয়ে উঠতে পারে।’
রেডিমেড গার্মেন্টস (আরএমজি) রপ্তানি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বাংলাদেশ বর্তমানে দুটি বৃহৎ শ্রেণির তৈরি পোশাক রপ্তানি করে।
তিনি বলেন, ‘প্রথম শ্রেণির পণ্য, যা মোট পোশাক রপ্তানির ৮৫-৯০ শতাংশ, এগুলো হলো কম দামের, সাধারণ পণ্য, যেগুলোর চাহিদা মূল্য পরিবর্তনের প্রতি কম সংবেদনশীল (প্রাইস ইলাসটিসিটি < ১)। এই ধরনের পণ্য নতুন শুল্কের প্রভাব তেমনভাবে টের পাবে না, যেমনটি আমরা কোভিড-১৯ মহামারী বা ২০০৭-৮ এর বৈশ্বিক আর্থিক সংকটে দেখেছি।’
তিনি আরো বলেন, দ্বিতীয় শ্রেণির পণ্য, যা ১০-১৫ শতাংশ, এগুলো তুলনামূলকভাবে দামি এবং বিলাসবহুল, যেগুলোর চাহিদা মূল্যের প্রতি সংবেদনশীল (প্রাইস ইলাসটিসিটি > ১)। এই পণ্যগুলো নতুন শুল্ক নীতির কারণে বেশি চাপে পড়তে পারে।’
তিনি বলেন, ‘তাই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কার্যকর আলোচনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে যেসব পণ্য আমদানি করে, তার অনেকগুলোই শুল্কমুক্ত বা স্বল্প শুল্কে আসে। এই বাণিজ্য ভারসাম্য কাজে লাগিয়ে সরকার যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ছাড় বা সুবিধাপূর্ণ শর্ত দাবি করতে পারে। প্রয়োজনে, বাংলাদেশও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর নিজস্ব শুল্কনীতি পুনর্বিবেচনা করতে পারে যাতে পারস্পরিকভাবে লাভজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়।’
হাবিবুর রহমান বলেন, আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আগে সম্পন্ন হওয়া অর্ডারগুলোর উপর নতুন শুল্ক কার্যকর হবে কিনা।
‘সেগুলো কি নতুন শুল্কের আওতায় পড়বে, নাকি পুরনো চুক্তির অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে? এই অস্পষ্টতা আমদানি-রপ্তানিকারকদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করতে পারে। যদি পুরনো অর্ডারগুলো ছাড় পায়, তাহলে ভবিষ্যতের বাণিজ্য সহজেই নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খেয়ে নেবে।’
তবে তিনি বলেন, ‘নতুন মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা অবশ্যই কঠিন হবে। বাংলাদেশকে এখন সতর্ক, কৌশলী এবং দৃঢ়ভাবে আলোচনায় এগিয়ে যেতে হবে।