ফ্যাসিস্ট হাসিনা কেড়ে নিয়েছে আমার সকল সুখ’ – শহিদ বিপ্লবের মায়ের আর্তনাদ

চ্যানেল7বিডি ডেক্স: ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার চুড়ালী গ্রামে এক জরাজীর্ণ টিনশেড ঘরে এখন শুধুই শূন্যতা আর নিঃসীম শোক। এই ঘরেই বাস করতেন তিন সন্তানের মা-বাবা, বিলকিস আক্তার ও বাবুল মিয়া। কিন্তু গত ২০ জুলাইয়ের ভয়াল সেই দিন তাদের জীবনের সবকিছু লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে। ওইদিন শহিদ হন তাদের ১৯ বছর বয়সী সন্তান বিপ্লব হাসান, যিনি পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান।

শহিদ বিপ্লবের মায়ের হৃদয়বিদারক আর্তনাদ
মা বিলকিস আক্তার ছেলের কথা বলতে গিয়ে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, “আমি কখনো আমার ছেলেকে একটি থাপ্পড়ও মারিনি। কিন্তু শেখ হাসিনার নির্দেশে পুলিশ আমার ছেলেকে মাটিতে ফেলে, মুখে বুট চেপে ধরে গুলি করেছে। সবাই এ ঘটনা দেখেছে।” তাঁর প্রতিটি কথায় ফুটে উঠছিল এক মায়ের নিঃস্ব হওয়ার অসীম শোক।

বিপ্লবের জীবনসংগ্রাম
দারিদ্র্যের সাথে লড়াই করা পরিবারটির সবচেয়ে বড় সহায় ছিলেন বিপ্লব। বাবা বাবুল মিয়া রিকশা গ্যারেজের মিস্ত্রি ছিলেন, তবে অসুস্থতার কারণে আর কাজ করতে পারেন না। সংসারের ভার কাঁধে তুলে নিতে স্থানীয় একটি কিষাণী ওয়েল মিলে কাজ শুরু করেন বিপ্লব। নিজের স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য নিজেকে নিঃশেষ করছিলেন।

২০২৪ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার পরও তিনি হাল ছাড়েননি। কিন্তু ২০ জুলাই সেই সংগ্রামের গল্প চিরতরে থেমে যায়।

শেষ দিনটির করুণ গল্প
১৯ জুলাই রাতে মা বিলকিস আক্তার ভোরের খাবারের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। বিপ্লব মাছ পছন্দ করত না, তাই তাকে ভিন্ন কিছু রান্না করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সকালেই বন্ধুদের ফোন পেয়ে সে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। দুপুরে মায়ের কান্নায় পৃথিবী থমকে যায়—শোনা যায়, বিপ্লব গুলিবিদ্ধ।

বিলকিস বলেন, “ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে ছেলের লাশ দেখে আমার পৃথিবীটা শেষ হয়ে যায়। গালে বুটের দাগ, কপালে আর গলায় গুলির আঘাত—আমার সন্তানের শরীরে কেবল নির্যাতনের চিহ্ন।” পুলিশের চাপে ছেলের দাফনও করতে হয় ঘরের পাশেই।

এক পরিবারের স্বপ্নের মৃত্যু
এই মর্মান্তিক ঘটনার পর পুরো পরিবার অনিশ্চয়তায় ডুবে গেছে। মা বিলকিস আক্তার বলেন, “আমার উপার্জনক্ষম ছেলেকে মেরে আমাদের সব শেষ করে দিয়েছে। এখন কীভাবে সংসার চালাব, মেয়েদের লেখাপড়া চালাব—কিছুই বুঝতে পারছি না।

বিপ্লব তার বেতনের পুরো টাকা মায়ের হাতে তুলে দিত। নিজের খরচের জন্যও মায়ের কাছে চাইত। পরিবারের প্রতি এমন ভালোবাসার ছেলেকে হারিয়ে আজ নিঃস্ব এই পরিবার।

বাবার নিঃসঙ্গতা ও ছেলের শেষ কথা
ঘটনার সময় বাবুল মিয়া সিলেটে ছিলেন। ছেলের সঙ্গে ফোনে শেষ কথাটি ছিল, “বাবা, সাবধানে থেকো, দেশে গণ্ডগোল চলছে।” যে ছেলে বাবাকে সতর্ক করেছিল, সে নিজেই পুলিশের গুলিতে শহিদ হয়।

বাবা আজ বাকরুদ্ধ। আর মা বিলকিস প্রতিদিন ছেলের কবরের পাশে বসে কাঁদেন। তাঁদের জীবন এখন স্মৃতির ভার আর ছেলের শূন্যতায় পূর্ণ।

উপসংহার
বিপ্লবের পরিবার আজকের দিনে শুধু তাদের প্রিয়জন নয়, হারিয়েছে জীবনের সব রঙ, সব স্বপ্ন। মা বিলকিস আক্তারের আর্তনাদ যেন এই নিষ্ঠুর ঘটনার সাক্ষী হয়ে রয়েছে।

তথ্যসূত্র: বাসস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com