অনলাইন ডেক্স: বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন তাদের সুপারিশমালায় ফৌজদারি অপরাধের তদন্ত পুলিশের কাছ থেকে সরিয়ে একটি স্বাধীন তদন্ত সংস্থার অধীনে পরিচালনার প্রস্তাব করেছে। আইন মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া এই সুপারিশে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, একটি ক্যারিয়ার প্রসিকিউশন সার্ভিস (অ্যাটর্নি সার্ভিস) গঠনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, যাতে প্রসিকিউটররা তদন্তের শুরু থেকেই কার্যকর পরামর্শ দিতে পারেন।
কমিশনের মতে, তদন্ত প্রক্রিয়া বিচারিক ধাপের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। দুর্বল তদন্তের কারণে অপরাধীদের শাস্তি না হওয়ার ঘটনা ঘন ঘন দেখা যায়।
পেশাদার তদন্ত সংস্থা প্রয়োজন কেন?
বিচার বিভাগীয় কমিশনের সদস্য সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী তানিম হোসেন শাওন বলেছেন, পুলিশের ওপর প্রভাব এবং দক্ষতার অভাব অনেক সময় সুষ্ঠু তদন্তের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তাই একটি বিশেষায়িত পেশাদার তদন্ত সংস্থার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, “পুলিশ তদন্তে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না এবং প্রয়োজনীয় দক্ষতারও অভাব রয়েছে। তাই একটি স্বতন্ত্র তদন্ত সংস্থা এবং ক্যারিয়ার প্রসিকিউশন সার্ভিস গড়ে তুলতে হবে।”
প্রসিকিউশন সার্ভিসের ভূমিকা
কমিশন একটি ক্যারিয়ার প্রসিকিউশন সার্ভিস গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে, যেখানে প্রসিকিউটররা তদন্তের শুরু থেকেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সহায়তা করতে পারবেন। এতে মামলার আলামত সংগ্রহ এবং তথ্যপ্রমাণের যথাযথ সংরক্ষণ নিশ্চিত হবে।
কমিশনের মতে, সমন্বয়ের অভাবের কারণে অনেক ক্ষেত্রে সঠিক প্রমাণ ছাড়াই মামলার বিচার শুরু হয়, ফলে অপরাধীরা আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে যায়।
সাবেক আইজিপির পর্যবেক্ষণ
সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক মো. নূরুল হুদা বলেন, “বর্তমান ফৌজদারি কার্যবিধি (সিআরপিসি) অনুযায়ী পুলিশ তদন্ত পরিচালনা করে। তবে সরকার চাইলে নতুন আইন করে একটি স্বতন্ত্র তদন্ত সংস্থা গঠন করতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “নতুন সংস্থার কার্যপরিধি কী হবে এবং তা কীভাবে কাজ করবে, তা নতুন আইনের মাধ্যমে নির্ধারণ করতে হবে।”
কী সুপারিশ করা হয়েছে?
১. একটি স্বাধীন পেশাদার তদন্ত সংস্থা গঠন।
২. ক্যারিয়ার প্রসিকিউশন সার্ভিস চালু।
৩. তদন্ত ও প্রসিকিউশনের মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিত করা।
৪. তদন্ত পর্যায়ে প্রসিকিউটরদের সক্রিয় ভূমিকা।
বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশন
এই কমিশন গঠিত হয় প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমানকে প্রধান করে গঠিত কমিশনে আরও আছেন বিচারপতি এমদাদুল হক, ফরিদ আহমেদ শিবলী, সিনিয়র আইনজীবী তানিম হোসেন শাওন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মাহফুজুল হক।
ফৌজদারি মামলার সংজ্ঞা
চুরি, ডাকাতি, খুন, ধর্ষণ, প্রতারণা, জালিয়াতি ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার মতো অপরাধ ফৌজদারি মামলার আওতায় পড়ে। এই ধরনের অপরাধের মামলায় জেল, জরিমানা, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ডের মতো শাস্তি হতে পারে।
সরকার কমিশনের সুপারিশ গ্রহণ করলে নতুন আইন প্রণয়ন বা বিদ্যমান আইন সংশোধনের মাধ্যমে তদন্ত এবং প্রসিকিউশনের ক্ষেত্রে নতুন যুগের সূচনা হতে পারে।