পিলখানা হত্যাকাণ্ড…হাসিনাসহ ৫৭ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ

ডেস্ক রিপোর্ট : শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের পরিবারের পক্ষে অ্যাডভোকেট উদয় তাসমীর বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করেন। তৎকালীন বিডিআরের ডিজি মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে রাকিন আহমেদ, কর্নেল মুজিবুর হকের স্ত্রী ফেরদৌসী, কর্নেল কুদরত এলাহীর ছেলে সাকিব রহমান সহ ১৫-২০ জনের পরিবারের সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ ৫৭ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল করেছেন শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যরা। শহীদ পরিবারের পক্ষে অ্যাডভোকেট উদয় তাসমীর বৃহস্পতিবার দুপুরে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করেন।

উদয় তাসমীর পরে গণমাধ্যমকে বলেন, পিলখানা গণহত্যায় শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা দুপুর ২টার পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কাছে এই অভিযোগ জমা দেন।তৎকালীন বিডিআরের ডিজি মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে রাকিন আহমেদ, কর্নেল মুজিবুর হকের স্ত্রী ফেরদৌসী, কর্নেল কুদরত এলাহীর ছেলে সাকিব রহমানসহ ১৫-২০ জনের পরিবারের সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দপ্তরে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায় বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যরা। সেই ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তা সহ মোট ৭৪ জন প্রাণ হারান।

নারকীয় এই ঘটনায় করা দুই মামলার মধ্যে হত্যাযজ্ঞের মামলার বিচার কাজ হাইকোর্ট বিভাগে সম্পন্ন হয়েছে। অপরদিকে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলা এখনও নিম্ন আদালতে বিচারাধীন।

হত্যাযজ্ঞের মামলায় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর রায় দেয় বিচারিক আদালত। এতে ১৫২ জনের ফাঁসি এবং ১৬০ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। ১০ বছর সহ বিভিন্ন মেয়াদের সাজা হয় ২৫৬ জনের। খালাস পান ২৭৮ জন।

আপিলের পর হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর রায় দেৱয়া হয়। রায়ে ফাঁসি বহাল রাখা হয় ১৩৯ জনের। যাবজ্জীবন দণ্ড দেয়া হয় ১৮৫ জনকে। ২২৮ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়। খালাস পান ৪৫ জন। উচ্চ আদালতে খালাস পাওয়া ও সাজা কমা ৮৩ জনের ক্ষেত্রে আপিল বিভাগে রাষ্ট্রপক্ষ লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) দায়ের করেছে। পাশাপাশি আসামি পক্ষেও লিভ টু আপিল দায়ের করা হয়েছে।

এর আগে ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারিতে পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের তদন্তে জাতীয় স্বাধীন কমিশন/কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে গত মাসে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী তানভীর আহমেদ ও বিপ্লব কুমার পোদ্দার। পরবর্তী সময়ে প্রকৃত সত্য বের করতে জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিটি বা কমিশন গঠন করতে এবং ‘শহীদ সেনা দিবস’ ঘোষণার পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানিয়ে ৩ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র সচিব বরাবর আবেদন করেন রিটকারীরা।

রিটের ওপর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ৫ নভেম্বর হাইকোর্ট রুল সহ আদেশ দেয়। স্বরাষ্ট্র সচিব বরাবর করা আবেদন নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। আবেদনটি ১০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করে আদালতে প্রতিবেদন দিতে স্বরাষ্ট্র সচিবের প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়।

পরে ২ ডিসেম্বর জাতীয় স্বাধীন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ শুরু করেছে বলে হাইকোর্টকে জানায় রাষ্ট্রপক্ষ। পাশাপাশি দুই সপ্তাহ সময় চেয়ে আরজি জানান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত আদেশের জন্য ১৫ ডিসেম্বর দিন রাখে।

গত ১৫ ডিসেম্বর ২০০৯ সালে রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুটি মামলা চলমান থাকায় আপাতত জাতীয় স্বাধীন কমিটি গঠন করা যাচ্ছে না বলে হাইকোর্টকে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।