পরকীয়ার জেরে খুন, মা-মেয়ে আটক: শাহরাস্তির হত্যাকাণ্ডে চাঞ্চল্যকর তথ্য উন্মোচিত

মোঃ রাফিউ হাসান হামজা : শাহরাস্তি, চাঁদপুর: একদিকে প্রেম, অন্যদিকে ১২ লাখ টাকার লেনদেন। মাঝখানে ১২০ টাকায় কেনা একটি ছুরি। সব মিলিয়ে শাহরাস্তির মনিপুর গ্রামে ঘটে গেলো এক ভয়ংকর হত্যাকাণ্ড। দিনমজুর আলমগীর হোসেন (৩৫) বিশ্বাস করে গিয়েছিলেন ভালোবাসার বন্ধনকে, কিন্তু সেই সম্পর্কই এক রাতে কেড়ে নিলো তার জীবন। পুলিশের ভাষ্য, এ ঘটনা নিছক একটি হত্যাকাণ্ড নয়—এটি প্রতারণা, প্রতিশোধ ও লেনদেনের জটিল এক গল্প। আর সেই গল্পের কেন্দ্রে আছেন মাহমুদা আক্তার সোনিয়া (৩০) ও তার মা খোদেজা বেগম প্রকাশ পান্না (৫০)।

স্থানীয়দের মতে, আলমগীর হোসেনের সঙ্গে সোনিয়ার সম্পর্ক গড়ে ওঠে বেশ কিছুদিন আগে। তাদের মধ্যে অর্থনৈতিক লেনদেনও ছিল। নিহতের স্ত্রী তাছলিমা বেগমের দাবি, সোনিয়ার কাছে আলমগীরের ১২ লাখ টাকা পাওনা ছিল। টাকা ফেরত চাইতেই সোনিয়া তাকে নিজের বাড়িতে ডেকে নেন, আর সেটাই হয়ে ওঠে তার মৃত্যুর ফাঁদ।

অন্যদিকে, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সোনিয়া স্বীকার করেছেন যে, আলমগীর তাকে দীর্ঘদিন ধরে বিরক্ত করছিল। তাই তাকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন তিনি।

চিতোষী বাজার থেকে মাত্র ১২০ টাকায় কেনা একটি ছুরি। কিন্তু সেই সামান্য দামের ছুরি দিয়েই ঘটানো হলো এক ভয়ংকর হত্যাকাণ্ড। আলমগীরকে ডেকে নেওয়া হয় বাড়ির ছাদে, আর সেখানেই একাধিক আঘাতে তাকে হত্যা করা হয়। হত্যার পর আসামিরা ঘটনাটিকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পুলিশের তৎপরতায় দ্রুত উন্মোচিত হয় আসল ঘটনা। হত্যার অস্ত্র ও ঘটনাস্থলে পাওয়া মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে তদন্ত শুরু হয়।

পুলিশের ধারণা, হত্যার নেপথ্যে আরও কেউ থাকতে পারে। তদন্ত এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে সম্ভাব্য সহযোগীদের শনাক্ত করার জন্য।

এই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে শাহরাস্তি থানার পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে— মাহমুদা আক্তার সোনিয়া (৩০): পিতা—আবুল হোসেন মানিক, মাতা—খোদেজা বেগম প্রকাশ পান্না, স্বামী—তুষার। খোদেজা বেগম প্রকাশ পান্না (৫০): স্বামী—আবুল হোসেন মানিক। দুজনই চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার মনিপুর (সোলেমান মাস্টার বাড়ি/নতুন বাড়ি) এলাকার বাসিন্দা। আসামিদের চাঁদপুর আদালতে পাঠিয়ে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে।

এই হত্যাকাণ্ড কি শুধুই প্রেমের দ্বন্দ্ব? নাকি ১২ লাখ টাকার লেনদেনই মূল কারণ? নাকি এর পেছনে লুকিয়ে আছে আরও গভীর কোনো ষড়যন্ত্র? শাহরাস্তির এই রহস্যময় হত্যাকাণ্ড নিয়ে তদন্ত চলছে। সামনে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *