নেপালের সাবেক প্রধান বিচারপতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বে 

বাসস : নেপালের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নিবেন বলে জানিয়েছেন ‘জেনারেশন জেড’ বিক্ষোভকারীদের এক প্রতিনিধি। প্রাণঘাতি বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির পতনের পর সুমীলা কার্কি এখন ‘জেনারেশন জেড’ এর শীর্ষস্থানীয় পছন্দ। ওই প্রতিনিধি বৃহস্পতিবার একথা বলেছেন। 

কাঠমান্ডু থেকে এএফপি এই খবর জানিয়েছে।

মঙ্গলবার দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতায় সরকার উৎখাত এবং পার্লামেন্টে আগুন দেওয়ার পর, তিন কোটি জনসংখ্যার হিমালয়ের এই দেশটিতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সেনাবাহিনী কারফিউ জারি করেছে।

বিক্ষোভ আন্দোলনের ঢিলেঢালা ছত্রছায়া শিরোনামের কথা উল্লেখ করে একজন সামরিক মুখপাত্র বলেন, সেনাপ্রধান জেনারেল অশোক রাজ সিগদেল বুধবার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব এবং ‘জেনারেশন জেডের প্রতিনিধিদের’ সাথে আলোচনা করেছেন।

বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মী রক্ষ্যা বাম বলেন, ‘এই মুহূর্তে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য সুশীলা কার্কির নাম উঠে আসছে। আমরা এখন প্রেসিডেন্টের পদক্ষেপের অপেক্ষা করছি’।

‘প্রতিযোগী স্বার্থ’

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর সরকারের স্বল্পমেয়াদী নিষেধাজ্ঞা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোমবার কাঠমান্ডুতে বিক্ষোভ শুরু হয়। এই দমন-পীড়নে কমপক্ষে ৩০ জন নিহত হন।

একদিন পর, বিক্ষোভ দেশব্যাপী ক্ষোভের আগুনে পরিণত হয়। সরকারি অফিস, একটি পাঁচ তারকা হোটেল এবং অন্যান্য ভবনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এই বিশৃঙ্খলার মধ্যে ১৩ হাজার ৫শ’ জনেরও বেশি বন্দী কারাগার থেকে পালিয়ে যায়।

বাম এএফপি’কে বলেন, ‘আমরা সেনাপ্রধানের সাথে দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করেছি’।

‘কথোপকথনটি ছিল দেশের শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রেখে আমরা কীভাবে এগিয়ে যেতে পারি সে সম্পর্কে।’

৭৩ বছর বয়সী শিক্ষাবিদ এবং নেপালের প্রথম মহিলা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি কার্কি এএফপি’কে বলেছেন,  ‘এগিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজে বের করার জন্য বিশেষজ্ঞদের একত্রিত হওয়া দরকার’ এবং ‘সংসদ এখনো টিকে আছে’।

সাংবিধানিকভাবে, ৮০ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পাউদেলের উচিত বৃহত্তম সংসদীয় দলের নেতাকে সরকার গঠনের জন্য আমন্ত্রণ জানানো।

কিন্তু রাজনৈতিক পুরাতন রক্ষীদের বেশিরভাগই দৃষ্টির আড়ালে চলে গেছে।

কার্কির প্রতি বিক্ষোভকারীদের সমর্থন সর্বসম্মত নয়।

বুধবার ডিসকর্ড প্ল্যাটফর্মে হাজার হাজার লোকের উপস্থিতিতে একটি ভার্চুয়াল সভায় কর্মীরা বিতর্ক করেছিলেন যে, তাদের প্রতিনিধিত্ব কে করা উচিত। এই সময় বেশ কয়েকটি নাম উঠে এসেছিল।

সাংবাদিক প্রণয় রানা বলেন,  ‘বিভাজন আছে’। পরস্পর বিরোধী যুক্তি ছিল এবং বেশ কয়েকটি নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল।


‘এরকম বিকেন্দ্রীভূত আন্দোলনে প্রতিযোগিতামূলক স্বার্থ এবং প্রতিদ্বন্দ্বী কণ্ঠস্বর থাকবে এটাই স্বাভাবিক।’

‘নতুন ম্যান্ডেট’

সম্ভাব্য অন্তর্বর্তীকালীন নেতা হিসেবে প্রস্তাবিত নামগুলোর মধ্যে কাঠমান্ডুর মেয়র বলেন্দ্র শাহ (৩৫) সাবেক প্রকৌশলী এবং র‌্যাপারও ছিলেন।

কিন্তু শাহ ফেসবুকে একটি পোস্টে বলেছেন, তিনি কার্কিকে প্রার্থী হিসেবে ‘প্রস্তাবকে সম্পূর্ণ সমর্থন করেন’।

তিনি আরো বলেন, ‘এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজ হলো নির্বাচন অনুষ্ঠান করা, দেশকে একটি নতুন ম্যান্ডেট দেওয়া’।

বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের মতো রাজধানীর রাস্তায় সৈন্যরা টহল দিয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত বলে মনে হচ্ছে। রাস্তায় একাধিক সেনা চেকপয়েন্ট স্থাপন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকালে লোকজনকে খাবার সংগ্রহ এবং প্রয়োজনীয় কর্মীদের জন্য চলাচলের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা সংক্ষিপ্তভাবে তুলে নেওয়া হয়েছিল।

কমিউনিস্ট পার্টির প্রবীণ নেতা কেপি শর্মা অলি (৭৩) চারবারের প্রধানমন্ত্রী। তার অবস্থান অজানা। বিক্ষোভের মুখে মঙ্গলবার পদত্যাগ করেছেন তিনি।

তার প্রাক্তন জোট মিত্র, নেপালি কংগ্রেসের শের বাহাদুর দেউবা (৭৯) পাঁচবারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। অস্থিরতা শুরু হওয়ার পর থেকে তাকে আর দেখা যায়নি। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com