নেত্রকোনায় সাংবাদিকসহ ১৯৬ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে বিএনপির মামলা

নেত্রকোনা প্রতিনিধিঃ নেত্রকোনায় নাশকতার বিভিন্ন মামলায় সাংবাদিকদের জড়াচ্ছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। গতকাল সোমবার কেন্দুয়া থানায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা একটি নাশকতা মামলাতেও  জিয়াউর রহমান নামের এক সাংবাদিকে ঘটনায় জড়িয়ে আসামি করা হয়। এর আগে জেলায় অন্তত ৯ জন পেশাদার সাংবাদিকে রাজনৈতিক মামলায় আসামি করা হয়। এ নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে।

গতকাল দায়ের করা মামলাটির বাদী কেন্দুয়া উপজেলা মোজাফফরপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা শ্রমিক দলের বর্তমান জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সবুজ মিয়া। মামলার এজাহার তুলে দেখা যায়, এতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র মো. আসাদুল হক ভূঁয়াকে প্রধান আসামি করে ১৯৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। আর অজ্ঞাত আসামি করা হয় ৩০০ জনকে। মামলায় ৭২ নম্বর আসামি করা হয় জিয়াউর রহমানকে।

উপজেলার কুণ্ডলী এলাকার বাসিন্দা জিয়াউর রহমান দীর্ঘদিন ধরে ইত্তেফাক পত্রিকায় কেন্দুয়া উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে রয়েছেন। এ ছাড়া তিনি দেশ টিভি এবং বাংলা ট্রিবিউনের নেত্রকোনা প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কেন্দুয়া রির্পোটার্স ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছড়াকার জিয়াউর রহমান ‘চর্চা সাহিত্য আড্ডা’ নামের একটি সংগঠনের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালনসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। এছাড়া এক সময় তিনি বিএনপির অঙ্গসংগঠন বাংলাদেশ সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস) এর কেন্দুয়া উপজেলা শাখার যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন বলেও স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান। তবে সাংবাদিকতা পেশায় পুরোপুরি মনোনিবেশ করায় তিনি রাজনৈতিক কর্মকান্ড থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন।

মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, ফ্যাসিস্ট বিরোধী আন্দোলনচলাকালে গত ৪ আগস্ট সকাল ১০ থেকে বিকেল পর্যন্ত আসামিরা পৌরসভার চিরাংমোড়, খেলার মাঠের পাশে সিএনজি স্টেশন, সাউদপাড়ামোড়, বাদে আঠারোবাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ভয়-ভীতি দেখানোসহ রাস্তা বন্ধ করে যানবাহন ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করা হয়। ওই ঘটনার কিছুটা দেরিতে হলেও তিনি মামলাটি দায়ের করেছেন। মামলার এজাহারে ৭২ নম্বর আসামি জিয়াউর রহমানের বিষয়ে জানতে আজ মঙ্গলবার সকালে বাদীর মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, ‘দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত হয় মামলা করতে হবে। তাই আমি মামলাটির বাদী হয়েছি। এজাহারে উল্লেখ করা আসামি অনেককেই আমি চিনিনা। সাংবাদিক জিয়াউর রহমানকেও আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি না। এটা দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমি বাদী হয়েছি। অপর প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘মামলা নিয়ে অভিযোগ থাকলে দলীয়ভাবে সমাধান করা হবে।’

এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মো. রফিকুল ইসলাম হিলালী বলেন, ‘জিয়াউর রহমানকে সাংবাদিক হিসেবে মামলা দেয়া হয়নি। তিনি স্বেচ্ছাসেবক লীগের পদে রয়েছেন। তবে কোন পদে রয়েছেন তা জেনে বলতে হবে বলে জানান ওই নেতা। এরপর হোয়াসঅ্যাপে অপু উকিল, আসাদুল হক ভূঁইয়াসহ আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে জিয়াউরের ছবি পাঠান তিনি।

জিয়াউর রহমান বলেন, ‘এজাহারে যে সময় ও ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে, সে সময় তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। তিনি কোনো ছবিও তোলেননি। এ বিষয়ে কোন সংবাদও তাঁর মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়নি। তাঁকে অহেতুক এসব তকমা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। গত সরকারের আমলেও স্থানীয় সংসদ সদস্যদের অনিয়ম-দুর্নীতির সংবাদ করাসহ উপজেলার বলাইশিমুল খেলার মাঠে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর তৈরিতে বাধাঁ দেয়ায় তাঁকে বিএনপি ঘরানা সাংবাদিক হিসেবে হয়রানি করা হতো। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনচলাকালে ফেইসবুক লাল করাতেও ক্ষমতাসিনদের কাছে তাঁকে হয়রানি পোহাতে হয়েছিল।

কেন্দুয়া রিপোটার্স ক্লাবের সাবেক সভাপতি যুগান্তর প্রতিনিধি মামুনুর রশিদ বলেন, ‘জিয়াউর রহমান একজন পেশাদারসাংবাদিক। সহিংসতা–সংক্রান্ত অপরাধের অভেযোগ এনে তাঁকে এ ভাবে আসামি করায় স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থী। এটা তাঁর জন্য এটা অত্যন্ত অসম্মানের।’

অধিকারকর্মী আবুল কালাম আল আজাদ বলেন, ‘একজন পেশাদার সংবাদকর্মীকে মিথ্যা রাজনৈতিক মামলায় আসামি করা উদ্বেগের।এটি স্বাধীন সাংবাদিকতা, মত প্রকাশ ও মানবাধিকার পরিপন্থি কাজ। এই হয়রানিমূলক মামলা থেকে জিয়াউর রহমানের নাম অবিলম্বে প্রত্যাহার করা হোক।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ১৭ আগস্ট থেকে গতকাল পর্যন্ত জেলায় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অন্তত ৫৮টি রাজনৈতিক মামলা হয়েছে। এসব মামলায় প্রায় ছয় হাজারের মতো আসামি করা হয়। গতকালের মামলার প্রধান আসামি আসাদুল হক ভূঁইয়াসহ অনেকেই বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন। আবার অনেকই আত্মগোপনে গেছেন।

কেন্দুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, ‘আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *