নেত্রকোনায় ঘরে ঢুকে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা, বাধা দেওয়ায় গলা-ঠোটে ছুরিকাঘাত 

গজনবী বিপ্লব, নেত্রকোনা প্রতিনিধি: নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে রোববার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে নিজ ঘরে ঢুকে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টা চালায় এক বখাটে। বাধা দেওয়ায় ওই ছাত্রীর গলা ও ঠোটে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। ছুরিকাঘাতে ওই ছাত্রীর গলা, ঠোট ও জিহ্বার কিছু অংশ কেটে গেছে। এতে কথা বলতে পারছে না ওই ছাত্রী। ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীর নাম সাগরিকা দাস (১৫)। সে উপজেলার সুয়াইর ইউনিয়নের ভাটিয়া (মাঝি পাড়া) গ্রামের অঞ্জন দাসের মেয়ে।

সাগরিকা দাস স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় সাগরিকা। সাগরিকার বাবা অঞ্জন দাস পেশায় জেলে। বাড়ির পাশে হাওরে মাছ ধরে বিক্রি করেই পরিবারের ভরনপোষণ করেন। আর অভিযুক্তের নাম উত্তম বিশ্বাস (২১)। তিনি উপজেলার ভাটিয়া গ্রামের নিরঞ্জন বিশ্বাসের ছেলে। উত্তম বিবাহিত বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

এ ঘটনায় সাগরিকা দাসের মা অঞ্জনা রানী দাস বাদী হয়ে উত্তমের বিরুদ্ধে ধর্ষণ চেষ্টা ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। মোহনগঞ্জ থানার ওসি মো. দেলোয়ার হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মামলার অভিযোগ, পুলিশ ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উত্তম বিশ্বাস এলাকার বখাটে প্রকৃতির ছেলে। বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও এলাকার বিভিন্ন মেয়েদের উত্যক্ত করে। প্রতিবেশী সাগরিকা দাসকেও স্কুলে যাওয়ার পথে নানা কুপ্রস্তাব দিত। এতে রাজি না হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয় উত্তম। রোববার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে সাগরিকার বাবা-মা বাড়ির পাশে বিলে জাল দিয়ে মাছ ধরতে যায়। এসময় ঘুমে ছিল সাগরিকা ও তার ভাই-বোনেরা। সেই সুযোগে ছুরি নিয়ে ঘরে ঢুকে সাগরিকার গলায় ছুরি ধরে ধর্ষণ চেষ্টা চালায়। বাধা দিলে সাগরিকার গলায় ছুরি দিয়ে আঘাত করে। এতে ধস্তাধস্তি শুরু হলে একই সময়ে সাগরিকার ঠোটেও ছুরিকাঘাত করে উত্তম। ধস্তাধস্তির শব্দে সাগরিকার ভাই-বোনদের ঘুম ভেঙে গেলে তারা চিৎকার দেয়। চিৎকার শুনে তার বাবা-মা ছুটে আসলে উত্তম ছুরি ফেলেই পালিয়ে যায়। পরে এলাকাবাসী সহযোগিতায় সাগরিকাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। ছুরিকাঘাতে তার ঠোট ও জিহ্বা কেটে যায়। এতে ঠোটে ৬টি ও গলায় দুটি সেলাই লেগেছে। এতে বর্তমানে কথা বলতে পারছে না সাগরিকা।

ভুক্তভোগী ছাত্রীর মা অঞ্জনা রানী দাস বলেন, উত্তম একটা চরিত্রহীন ছেলে। আগে আমার ভাসুরের মেয়েকে উত্যক্ত করত। কিছুদিন ধরে আমার মেয়েকে উত্যক্ত করা শুরু করেছে। ভোরে আমরা মাছ ধরতে গেলে সেই সুযোগে ঘরে ঢুকে ধর্ষণ চেষ্টা চালায়। আমি এ ঘটনার ন্যায় বিচার চাই। গরীব মানুষ মাছ ধরে বিক্রি করে সংসার চালাই। কষ্ট করে মেয়েটাকে পড়াচ্ছি। মেয়েটার পড়াশোনা যেন চালিয়ে যেতে পারে সেই ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানাই। ঘটনার পর থেকে প্রভাবশালীরা চাপ দিচ্ছে ঘটনা সালিশে শেষ করতে। এ নিয়ে ভয়ে আছি।

সাগরিকার বাবা অঞ্জন দাস বলেন, অনেকে আপোষের জন্য চাপ দিচ্ছিল। ভয়ে রোববার মেয়েটাকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে এসেছি। আমরা গরীব মানুষ এতকিছু বুঝি না, এই ঘটনার বিচার চাই।

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য সেবক সরকার বলেন, ভোরেই মেয়ের বাবা-মা বিষয়টা আমাকে জানায়। আমি  প্রথমে মেয়েটার (সাগরিকা) চিকিৎসা করাতে তাদের বলি। পরে আসামি পক্ষ আমার কাছে এসে বলে স্থানীয়ভাবে সালিশের মাধ্যমে বিষয়টি শেষ করার জন্য। সাগরিকার স্কুলের প্রধান শিক্ষক দিলাল মিয়াসহ আমরা বিষয়টি সালিশের মাধ্যমে শেষ করার উদ্যোগ নিলেও মেয়ের বাবা-মা তা মানেনি। তারা মামলা দায়ের করেছে।

এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিলাল মিয়া জানান, উত্তমের বিরুদ্ধে এমন আরো অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই। তবে সালিশে বিষয়টি শেষ করার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।

মোহনগঞ্জ থানার ওসি মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে আসামি গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

বিষয়টি অবহিত করলে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেজওয়ানা কবির বলেন, এত বড় ঘটনা অথচ এখন পর্যন্ত আমাকে কেউ জানায়নি। মাত্র আপনার থেকে জানলাম। এ বিষয়ে দ্রুত যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।