নারীর শ্লীলতাহানির অভিযোগে তাড়াশ থানার ওসি তদন্তর বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন

জেলা প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের তাড়াশে পুলিশের ঘুষ গ্রহন সংক্রান্ত সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশের জেরে নির্যাতন ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনে থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) নাজমুল কাদেরের বিরুদ্ধে সংবাদ সন্মেলন করেছেন এক সাংবাদিক দম্পত্তি।

শনিবার (৫ এপ্রিল)। সকালে সিরাজগঞ্জ শহরের একটি হোটেলে দৈনিক ইত্তেফাকের তাড়াশ সংবাদদাতা ও স্থানীয় এনজিও পরিবর্তন সংস্থার পরিচালক (প্রোগ্রাম), গোলাম মোস্তফা এবং তার স্ত্রী ফারজানা পারভিন এ সংবাদ সন্মেলন করেন।

লিখিত বক্তব্যে গোলাম মোস্তফা বলেন, ঈদের দিন রাতে (৩১ মার্চ) ব্যক্তিগত প্রাইভেটকারে বগুড়া থেকে তাড়াশের নিজ বাড়িতে ফিরছিলাম। সাড়ে ১১টার দিকে তাড়াশ-রানীরহাট আঞ্চলিক সড়কের বেরখালি এলাকায় সড়কের ওপর গাছ ফেলে ৮/১০ জনের ডাকাত দল আমার প্রাইভেটকারের গতিরোধ করে। এরপর তারা প্রাইভেটকারের চালক লিটন চন্দ্র দাসকে মারধর করে আমার কাছে থাকা ৪৬ হাজার টাকা ও একটি স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নেন।

ঘটনাস্থলের অদূরে টহল পুলিশের এক টিম থাকলেও তারা সহায়তায় এগিয়ে আসেনি। ফোনে চার্জ না থাকায় ঘটনাস্থল থেকে থানায় ফোন দিতে পারিনি। বাড়িতে ফিরে তাড়াশ থানার পরিদর্শক নাজমুল কাদেরকে কল দিলে তিনি আমাকে থানায় যেতে বলেন। এরপর স্ত্রীকে সাথে নিয়ে থানায় গেলে গেটে দাঁড় করিয়ে রেখে নাজমুল ইসলাম ঘটনা জানতে চায় এবং অভিযোগ দিতে বলেন। আমি অভিযোগ না দিয়ে ডাকাতির মামলা করতে চাই। এ কথা বলতেই পরিদর্শক নাজমুল কাদের আমাদের উপর ক্ষেপে যান এবং মারধরের জন্য বার বার তেরে আসেন এবং আমার চালককেও গালমন্দ করেন।

এক পর্যায়ে আমার স্ত্রীকে তিনি নিজে প্রাইভেটকার থেকে টেনে হেঁচরে নামান। এতে আমার স্ত্রী ডান হাঁটুতে আঘাত পান। এরপর পরিদর্শক নাজমুল কাদের আমাকে বলেন, তুই মদ খেয়ে এসে থানায় আক্রমণ করতে এসেছিস। চল তোকে হাসপাতালে নিয়ে পরিক্ষা করাবো। এই বলে নাজমুল কাদের নিজেই আমার শার্টের কলার ও চুল ধরে এবং কিলঘুষি মারতে মারতে পিকআপে তোলেন এবং পিকআপে তুলেও আমাকে মারধর করা হয়। এসব কাজে আমার স্ত্রী বাধা দিলে তাকেও ধাক্কা দেওয়া হয়।

এরপর পরীক্ষার নামে আমাকে তাড়াশ হাসপাতালে নিয়ে জরুরী বিভাগে বসিয়ে রেখে নানা গালমন্দ করা হয়। একপর্যায়ে দায়িত্বরত চিকিৎসক আমার স্বাস্থ্য পরিক্ষার জন্য সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। এরপর আমাকে আবারো থানায় এনে মুন্সীর কক্ষে বসিয়ে রেখে সম্প্রতি তাড়াশে অবৈধ পুকুর খননকারীদের থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে উল্লাপাড়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) অমৃত সূত্রধর ও পুলিশ পরিদর্শক নাজমুল কাদেরের বিরুদ্ধে প্রকাশিত সংবাদের বিষয় নিয়ে মিথ্যা মামলা করার জন্য ভয়ভীতি দেখানো হয়।’

তিনি আরো বলেন, ভোরে আমার মা মাজেদা বেগমও থানায় আসেন। ওই সময় নাজমুল কাদের আমার স্ত্রী ফারজানা পারভিন ও বাল্যবন্ধু উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক এস, এম তারিকের মাধ্যমে আপসের প্রস্তাব দিতে থাকেন। একপর্যায়ে পরিদর্শক নাজমুল কাদের বলেন মুচলেকায় আপনাকে ছেড়ে দেওয়া হবে, সেখানে শুধু লেখা থাকবে ডাকাতির ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে আমি পুলিশের সাথে একটু খারাপ ব্যবহার করেছি। মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে নাজমুল কাদেরের ওই প্রস্তাব মেনে আমি থানা থেকে মুক্ত হই।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে গোলাম মোস্তফার স্ত্রী ফারজানা পারভিন বলেন, অবৈধ পুকুর খননকারীদের থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে পুলিশের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করেন আমার স্বামী। এ কারণে পরিদর্শক নাজমুল কাদের ব্যক্তিগত আক্রোশে আমার স্বামীকে থানায় ডেকে নিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করেন ও মারধর করেন। আমাকেও প্রাইভেটকার থেকে টেনে হেঁচরে নামান এবং ধাক্কা দেন। যা একজন নারীর সম্ভ্রমহানীর শামিল। আমি এই পুলিশ কর্মকর্তার বিচার দাবি করছি।

নির্যাতন ও মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে তাড়াশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত), নাজমুল কাদের বলেন, সাংবাদিক গোলাম মোস্তফা নেশা করে গভীর রাতে থানায় এসে পুলিশের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে। তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্ত কয়েকজন মিলে অনুরোধ করায় তাকে মুচলেকায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এখন উল্টো সে আমার বিরুদ্ধে নির্যাতনের নানা মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com