দুদক মামলার আসামী; তবুও পদোন্নতি, বিভাগীয় কেনাকাটা-বদলি ও রেংক বাণিজ্যে পাহাড়সম অভিযোগ

মোহাম্মদ ফারুক হোসেন : চরম অনিয়ম দুর্নীতির প্রাথমিক প্রমাণ সত্যতা পাওয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী আরএনবি দুই শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেন। সেই মামলায় উচ্চ ও নিম্ন আদালত থেকে চার্জশিট না হওয়া পর্যন্ত জামিনে আসেন দুই চীফ কর্মকর্তা। এর সবই সম্ভব হয়েছিল চরম দুর্নীতিবাজ চীফ কমান্ডেন্ট জহিরুল ইসলামের নিকট আত্মীয় হিসেবে খ্যাত ফ্যাসিস্ট সরকারের তৎকালীন আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের খুটির জোরে। সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো জামিনে এসেও দুদক মামলায় অভিযুক্ত আসামীর বাহিনীর চীফ কমান্ডেন্ট পদে পদোন্নতি। এসব অবাককর বিষয় নিয়ে বাহিনীর ভিতরে বাহিরে রয়েছে বিরাট গুঞ্জন। কর্মকর্তাদের মধ্যে চলছে অসন্তোষ অভ্যন্তরীণ কোন্দল।

বলছিলাম রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর দুই চীফ কমান্ডেন্ট জহিরুল ইসলাম ও আশাবুল ইসলাম এর অনিয়ম দুর্নীতির কথা। যাদের বিরুদ্ধে পাহাড়সম অভিযোগ থাকলেও বহাল তবিয়তেই রয়েছেন। গত জুলাই বিপ্লবের পর বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির দায়ে বাহিনীতে বিপ্লব ঘটে ফলে উভয় অঞ্চলের চীফ কমান্ডেন্ট পদে রদবদল হয়।

সূত্র বলছে বদলি কার্যকর হওয়ার পর থেকে এই দুই চীফ কমান্ডেন্ট বাহিনীর তৃতীয় চতুর্থ শ্রেণির প্রায় ১০০০ সদস্যদের নিয়ম বহির্ভূত বদলি, পদোন্নতি, Rank বাণিজ্য শুরুকরে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে বদলি করে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে আবার বদলি স্থগিত করা, পূর্ব কর্মস্থলে ফিরিয়ে দেওয়া, জুনিয়রকে বড় সার্কেলে পদায়ন করা চীফদের টাকা দিলে সব হয় এই বাহিনীতে।উভয় অঞ্চলের চীফ কমান্ডেন্টের নিকট এসব তথ্য অনুসন্ধানের চেষ্টা করলেও পরবর্তীতে তারা বক্তব্য দিতে রাজি হন নাই। এমনকি চীফ কমান্ডেন্ট পদোন্নতি পেতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)’র ‘ভুয়া ক্লিয়ারেন্স’ সনদ ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে খুদ নিরাপত্তা বিভাগের পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তা চিফ কমান্ডেন্ট আশাবুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চল নিরাপত্তা বাহিনীতে (আরএনবি) দুই চীফ কমান্ড্যান্ট রয়েছেন, যারা যথাক্রমে পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।পূর্বাঞ্চল নিরাপত্তা বাহিনীর চীফ কমান্ড্যান্ট-মো. জহিরুল ইসলাম,পশ্চিমাঞ্চলের চীফ কমান্ড্যান্ট মো.আশাবুল ইসলাম,অনিয়ম দুর্নীতি দায়ে সাম্প্রতিক তাদের রদবদল হয়েছে। এই বাহিনীর ভিতরে বাহিরে অনিয়ম দুর্নীতির শেষ নেই।বিস্ময়কর বিষয় হলো রিপোর্ট করলেও তাদের বদলি ছাড়া কিছু হয় না,খুঁটির জোর কোথায় জানতে খুব ইচ্ছে হয়। এই আরএনবি বাহিনী কত সন হতে অবৈধ ওয়াকিটকি ব্যবহার করছে তা বড় কথা নয়,বড় কথা হলো বিমানবন্দর ও কমলাপুর স্টেশনে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে বাহিনীতে খুব নিম্নমানের ওয়াকিটকি পোষাক সামগ্রী ব্যবহার হচ্ছে।ওয়াকিটকি কাজ করে ত করে না। খুবই কমদামে ওয়াকিটকি,পোষাক,বুট,অন্যান্য সামগ্রী কিনে কতগুন বেশি টাকা অনিয়ম দুর্নীতি করেছে বাহিনীর এই দুই চীফ কর্মকর্তা?বিভাগীয় বদলি,পদোন্নতি,চলতি দায়িত্ব,অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদানে টাকায় যেন যোগ্যতার মাপকাঠি।একই কর্মস্থলে দীর্ঘদিন থাকার পর অন্যত্র বদলি হলে এক সপ্তাহের মধ্যেই পূর্ব কর্মস্থলে আসতে,সি আই সার্কেলে জুনিয়রদের পদায়ন যেন অর্থই সব। এসব বিষয়ে বক্তব্য নেওয়া জন্য বারবার চেষ্টা করেও ফোনে তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।পূর্ব পশ্চিম উভয় অঞ্চলের শীর্ষ আরএনবি চিফ কমান্ড্যান্টের বিরুদ্ধে বহুবার দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে,যাঁদের বিরুদ্ধে গাড়ি, বাড়ি ও ফ্ল্যাট কেনাকাটায় অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তাঁদের সম্পদ ও আর্থিক দুর্নীতি বিভাগীয় কেনাকাটা বদলি,পদোন্নতি,পদোন্নতি ছাড়া র‍্যাঙ্ক বাণিজ্য নিয়ে তদন্ত চলছে এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর মামলায় উচ্চ ও নিম্ন আদালত থেকে জামিনে এসেও অনিয়ম দুর্নীতিতে শীর্ষে তারাই।

অভিযোগগুলো মূলত গাড়ি, বাড়ি ও ফ্ল্যাট কেনাকাটার সাথে সম্পর্কিত, যা তাদের আর্থিক দুর্নীতি নির্দেশ করে,পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের আইন মন্ত্রীর আত্মীয় হিসেবে খ্যাত জহিরুল ইসলামের ক্ষেত্রে এটি বেশি বলা হয়েছে। অভিযুক্ত কর্মকর্তা দুজনের বিরুদ্ধে বাহিনীর মধ্যে র‍্যাঙ্ক ও বদলি বাণিজ্যও শুরু করার অভিযোগ রয়েছে,যাতে উভয় চিফ জড়িত অভিযোগ রয়েছে।

এই অভিযোগ গুলোর ভিত্তিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত শুরু করেছে। দুর্নীতি ব্যাপকভাবে দেশে ছড়িয়ে পড়েছে যা দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানও স্বীকার করেছেন।

সূত্র বলছে, অপরাধের প্রকৃতি ও তীব্রতার উপর নির্ভর করে বাংলাদেশে দুর্নীতির শাস্তি জরিমানা কারাদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে।১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ৫(২) ধারা অনুযায়ী,কোনো সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী অপরাধমূলক অসদাচরণ করলে বা ঘুষ গ্রহণ করলে বা করার উদ্যোগ নিলে সর্বোচ্চ শাস্তি সাত বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানা।রেলওয়ের এসব অনিয়ম দুর্নীতির শেষ কোথায় ভুক্তভোগী মহল তা জানতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষাই আছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com