দীর্ঘ একদলীয় শাসনে বাংলাদেশের নিরাপত্তা খাতে রাজনৈতিক প্রভাব: জাতিসংঘের প্রতিবেদন

চ্যানেল7বিডি ডেক্স: জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা (OHCHR) প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দীর্ঘ একদলীয় শাসনের ফলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর রাজনীতিকরণ বেড়েছে, যা দেশের নিরাপত্তা খাতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১৫ বছরের শাসনামলে নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে পেশাদারিত্বের চেয়ে রাজনৈতিক আনুগত্যকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা এবং সামরিক বাহিনীর নিয়োগ ও পদোন্নতি রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার ভিত্তিতে হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

নিরাপত্তা বাহিনীতে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ডিজিএফআই, এনএসআই এবং পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) উচ্চপর্যায়ের নিয়োগে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা যাচাই করা হতো। এমনকি প্রার্থীর আত্মীয়দের রাজনৈতিক পরিচয়ও যাচাই করা হতো।

এছাড়া, ডিআইজি বা তার ঊর্ধ্বতন পদে নিয়োগ সরাসরি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের মাধ্যমে হতো, এবং আওয়ামী লীগের অনুগত ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা শাখায় বসানো হতো।

দায়মুক্তির সংস্কৃতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘন
জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশে ২৫৯৭টি কথিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং ৭০৮টি গুমের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। শুধু র‌্যাবই ৮০০টির বেশি হত্যাকাণ্ড ও ২২০টি গুমের ঘটনায় সম্পৃক্ত ছিল বলে দাবি করা হয়েছে।

তবে, এসব অপরাধের জন্য দোষীদের বিচারের আওতায় আনার হার খুবই কম। ডিজিএফআই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ১৭০টিরও বেশি গুমের অভিযোগ থাকলেও কোনো বিচারের মুখোমুখি করা হয়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

নির্যাতন বিরোধী আইন ও বাস্তবতা
২০১৩ সালে বাংলাদেশ ‘নির্যাতন ও নিরাপত্তা হেফাজতে মৃত্যু (নিষিদ্ধকরণ) আইন’ পাস করলেও, জাতিসংঘের তথ্যমতে, এরপরও ১০৩ জন বন্দি নির্যাতনে প্রাণ হারিয়েছেন।

ওএইচসিএইচআরের মতে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য নির্যাতন ও ঘুষ নেওয়ার নিয়মিত চর্চা চালিয়ে যাচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন করছে।

সারসংক্ষেপ
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের নিরাপত্তা খাতের রাজনীতিকরণের ব্যাপক প্রভাব তুলে ধরা হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব, নিরাপত্তা বাহিনীর দায়মুক্তি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর কাড়ছে।

তথ্যসূত্র: বাসস

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।