দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্যের ভিত্তিতে দ্রুত জুলাই সনদ: আলী রীয়াজ

ইউএনবি :আলী রীয়াজ বলেন, “প্রতিটি সুপারিশের ক্ষেত্রে দুটি বিষয়ে মতামত চাওয়া হয়েছে। প্রথমটি হচ্ছে সংশ্লিষ্ট সুপারিশের বিষয়ে একমত কি না। এতে তিনটি বিকল্প রাখা হয়েছে। সেগুলো হলো ‘একমত,’ ‘একমত নই,’ এবং ‘আংশিকভাবে একমত’। এই তিনটি বিকল্পের যেকোনো একটিতে টিক চিহ্ন দিয়ে মতামত জানাতে দলগুলোকে অনুরোধ করা হয়েছে। _সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে রাজনৈতিক দল ও শক্তিগুলোর সঙ্গে ঐকমত্যের ভিত্তিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে জুলাই সনদ তৈরি করা হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ। সংস্কার কমিশনের সুপারিশের বিষয়ে ৩৪টি দল ও জোটের কাছে ১৩ মার্চের মধ্যে মতামত চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হল মিলনায়তনে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। আলী রীয়াজ বলেন, ‘দেশের সব রাজনৈতিক দলকে সংস্কার কমিশনগুলোর প্রতিবেদনগুলোর হার্ড ও সফট কপি পাঠানো হয়েছে। এরপর ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা তিন দফা বৈঠকে মিলিত হন এবং সংশ্লিষ্ট কমিশনগুলো প্রতিবেদনগুলো থেকে গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো চিহ্নিত করেন।

‌‘পাঁচটি কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোকে ছকের আকারে বিন্যস্ত করা হয়েছে। এসব ছকে পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশ যুক্ত করা হয়নি। পুলিশ সংস্কার কমিশন মনে করে, তাদের সুপারিশগুলো প্রশাসনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে বাস্তবায়ন সম্ভব।’

তিনি বলেন, ‘গেল ৬ মার্চ দেশের ৩৪টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে এই ছকগুলো। এতে মোট সুপারিশ রয়েছে ১৬৬টি। এর মধ্যে সংবিধান সংস্কার সংক্রান্ত সুপরিশ ৭০টি, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার সংক্রান্ত সুপারিশ ২৭টি, বিচার বিভাগ সংক্রান্ত সুপারিশ ২৩টি, জনপ্রশাসন সংক্রান্ত সুপারিশ ২৬ ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংক্রান্ত সুপারিশ ২০টি।’

আলী রীয়াজ বলেন, “প্রতিটি সুপারিশের ক্ষেত্রে দুটি বিষয়ে মতামত চাওয়া হয়েছে। প্রথমটি হচ্ছে সংশ্লিষ্ট সুপারিশের বিষয়ে একমত কি না। এতে তিনটি বিকল্প রাখা হয়েছে। সেগুলো হলো ‘একমত,’ ‘একমত নই,’ এবং ‘আংশিকভাবে একমত’।

“এই তিনটি বিকল্পের যেকোনো একটিতে টিক চিহ্ন দিয়ে মতামত জানাতে দলগুলোকে অনুরোধ করা হয়েছে।”

তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয়টি হলো প্রতিটি সুপারিশের বিষয়ে সংস্কারের সময় ও বাস্তবায়নের উপায়। এ ক্ষেত্রে ছয়টি বিকল্প দেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো নির্বাচনের আগে অধ্যাদেশের মাধ্যমে, নির্বাচনের আগে গণভোটের মাধ্যমে, নির্বাচনের সময় গণভোটের মাধ্যমে, গণপরিষদের মাধ্যমে, নির্বাচনের পরে সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে এবং গণপরিষদ ও আইনসভা হিসেবে নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে।’

এসব ঘরের যেকোনো একটিতে টিক চিহ্ন দিয়ে মতামত জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানান জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি।

তিনি বলেন, ‘এরবাইরে প্রতিটি সুপারিশের পাশে দলগুলোর মন্তব্য দেওয়ার একটি জায়গা রাখা হয়েছে। আমরা আশা করছি, আগামী ১৩ মার্চের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের মতামত আমাদের জানাবে। যখন যে দলের মতামত পাওয়া যাবে, সেই সময় থেকেই আলোচনা শুরু হবে।

‘দলগুলোর কাছ থেকে তাদের মতামত প্রাপ্তি সাপেক্ষে আমরা দলগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা শুরু করব। এজন্য এখনো পর্যন্ত আমরা কোনো সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ নির্ধারণ করিনি।’

রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোকে যত দ্রুত সম্ভব মতামত জানাতে অনুরোধ জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, ‘এই প্রক্রিয়ার পরের ধাপ এখন রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর নির্ভর করছে। আমরা চাই, দ্রুত আলোচনা শুরু করে এগিয়ে যেতে।’

সংবাদ সম্মেলনে ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি বাদে বাকি সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। তারা হলেন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি এমদাদুল হক এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারও সেখানে ছিলেন।

গত বছরের ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্র সংস্কারে ১১টি কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। এরমধ্যে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন ও পুলিশ সংস্কার কমিশন চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তাদের সুপারিশ প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দিয়েছে।

আগামী নির্বাচন সামনে রেখে এ ছয়টি কমিশনের সুপারিশ গ্রহণ করতে জাতীয় ঐকমত্য গঠনে রাজনৈতিক দল ও শক্তিগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে ১২ জানুয়ারি ৭ সদস্যের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এই কমিশনের সভাপতি ও অধ্যাপক আলী রীয়াজকে সহসভাপতি করা হয়েছে। এ কমিশনের মেয়াদ ছয় মাসের।

গেল ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কাজ শুরু করেছে। কমিশনের উদ্বোধন উপলক্ষে ওই দিন প্রধান উপদেষ্টা ও কমিশনের সভাপতি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সৌজন্য সভা হয়।

এ সভায় সভায় ৩৪টি রাজনৈতিক দল ও জোটের ১০৪ প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন। সেসব প্রতিনিধি সংস্কার এগিয়ে নিতে তাদের সংকল্পের কথা ব্যক্ত করেছেন বলে জানিয়েছেন আলী রীয়াজ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।