স্ট্রোক এমন একটি ভয়াবহ স্বাস্থ্য সমস্যা, যেখানে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। একসময় এটা কেবল বার্ধক্যজনিত রোগ হিসেবেই বিবেচিত হতো, কিন্তু এখন তরুণদের মধ্যেও স্ট্রোকের প্রবণতা দ্রুত বাড়ছে। এই উদ্বেগজনক প্রবণতার পেছনে রয়েছে আমাদের বদলে যাওয়া জীবনধারা ও মানসিক চাপে জর্জরিত জীবন।
চলুন জেনে নিই কী কারণে এই ঝুঁকি বাড়ছে, লক্ষণ কী কী এবং কীভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব।
কেন বাড়ছে তরুণদের মধ্যে স্ট্রোকের প্রবণতা?
১. অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস:
ভাজা-পোড়া, অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবারের প্রতি তরুণদের আসক্তি চোখে পড়ার মতো। এসব খাবারে থাকা ট্রান্স ফ্যাট, অতিরিক্ত সোডিয়াম ও শর্করা ধমনিতে প্লাক তৈরি করে। এর ফলেই রক্ত চলাচলে বাধা তৈরি হয়, বাড়ে উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা ও কোলেস্টেরল—সবই স্ট্রোকের সম্ভাবনা বাড়ায়।
২. দীর্ঘ সময় বসে থাকা ও কায়িক শ্রমের অভাব:
কম্পিউটারে দীর্ঘ সময় কাজ বা স্ক্রিন টাইমে ডুবে থাকার কারণে শরীরের পেশীগুলো নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। এতে রক্ত চলাচল কমে যায়, বাড়ে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও ওজন। সব মিলিয়ে এটি স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকগুণ বাড়িয়ে দেয়।
৩. ধূমপান ও উদ্দীপক পানীয়:
নিকোটিন ও অ্যালকোহল রক্তনালীগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, কমিয়ে দেয় মস্তিষ্কে অক্সিজেনের সরবরাহ। এটি ধীরে ধীরে রক্তে ক্লট তৈরি করে যা স্ট্রোকের পূর্বসঙ্কেত।
৪. মানসিক চাপ ও উদ্বেগ:
দীর্ঘদিন ধরে মানসিক চাপ থাকলে কর্টিসলের মাত্রা বেড়ে যায়, যা রক্তচাপ ও প্রদাহ বাড়িয়ে তোলে। উদ্বেগ, বিষণ্নতা প্রায়ই ধূমপান ও অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসের জন্ম দেয়, যা পরোক্ষভাবে স্ট্রোকের কারণ হতে পারে।
তরুণদের মধ্যে স্ট্রোকের লক্ষণগুলো কী?
হঠাৎ দুর্বলতা বা অসাড়তা: সাধারণত শরীরের এক পাশে হয়। হাত-পা ভারী লাগে, মুখের একাংশ ঝুলে পড়ে।
কথায় অস্পষ্টতা: ঠিকভাবে কথা বলতে না পারা বা সঠিক শব্দ মনে না পড়া, জিহ্বা ভার হয়ে যাওয়া।
দৃষ্টিশক্তির সমস্যা: এক বা দুই চোখে ঝাপসা দেখা, ডাবল ভিশন বা হঠাৎ চোখে অন্ধত্ব আসা।
তীব্র মাথাব্যথা: হঠাৎ তীব্র ব্যথা, সঙ্গে বমি বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
স্মৃতিভ্রম ও বিভ্রান্তি: কথা, মানুষ বা ঘটনা মনে না রাখা, পরিস্থিতি বুঝতে না পারা।
কারা বেশি ঝুঁকিতে?
ধূমপায়ী ও মাদকসেবী তরুণরা
যারা মানসিক চাপে থাকেন
অতিরিক্ত স্থূল ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত
পরিবারের কারও যদি উচ্চ রক্তচাপ বা রক্তজমাট রোগ থাকে
প্রতিরোধের উপায়
✅ সুষম খাদ্যাভ্যাস:
ফল, শাকসবজি, বাদাম, ওমেগা-৩ যুক্ত মাছ খাওয়া উচিত। ট্রান্স ফ্যাট, বেশি লবণ ও চিনি এড়িয়ে চলুন।
✅ নিয়মিত শরীরচর্চা:
দ্রুত হাঁটা, জগিং বা সাইক্লিং প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও ধমনী সুস্থ রাখে।
✅ খারাপ অভ্যাস থেকে দূরে থাকা:
ধূমপান, অ্যালকোহল ও মাদকদ্রব্য থেকে বিরত থাকুন। প্রয়োজনে কাউন্সেলিং নিন।
✅ ভালো ঘুম:
নিয়মিত ও পর্যাপ্ত ঘুম অত্যন্ত জরুরি। স্ক্রিন টাইম কমিয়ে রাতে আগে ঘুমাতে যান এবং সকালে ভোরে উঠে শরীরচর্চা করুন।
✅ ইতিবাচক মানসিকতা:
ধ্যান, গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস ও মনোরম কাজগুলো মনকে শান্ত রাখে। চাপ কমালে স্ট্রোকের ঝুঁকিও কমে।
উপসংহার
তরুণদের মধ্যে স্ট্রোকের সংখ্যা বাড়ার মূল কারণ অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, মানসিক চাপ ও কায়িক শ্রমের অভাব। কিন্তু সুস্থ ও সুশৃঙ্খল জীবনধারার মাধ্যমে সহজেই এই ভয়ংকর বিপদ থেকে বাঁচা সম্ভব। নিজের যত্ন নিন, সচেতন হোন—কারণ আপনি যদি সতর্ক থাকেন, স্ট্রোক আপনার কাছাকাছিও আসবে না।