ঢাকা-১৮ আসনসহ ডিএনসিসি’র অধিকাংশ রাস্তায় সড়কবাতি নষ্ট! সুষ্ঠ তদারকির অভাব

মনির হোসেন জীবন : রাজধানীর ঢাকা-১৮ আসনসহ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)’র ০১ নং ওয়ার্ড থেকে শুরু করে ১৭ নং ওয়ার্ড পর্যন্ত সুবিশাল এলাকাজুড়ে অধিকাংশ রাস্তায় সড়কবাতি দীর্ঘ দিন ধরে নষ্ট! বর্তমানে ডিএনসিসি’তে অধিকাংশ রাস্তায় বর্তমানে অসংখ্য সড়কবাতি নষ্ট হয়ে পরে আছে ! নষ্ট হয়ে পরে থাকা বাতি গুলো মেরামত কিংবা সংস্কারের বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের কোন ধরনের উদ্যোগ কিংবা মাথা ব্যথা নেই বললেই চলে। রয়েছে সুষ্ঠ তদারকি ও রক্ষনাবেক্ষণের অভাবও ; মনে হয় দেখার যেন কেউ নেই! শহরজুড়ে রাতে সড়কবাতি বন্ধ থাকায় কারণে জনমনে এক ধরনের আতংঙ্ক বিরাজ করছে। মহাসড়ক, সড়ক ও অলিতে-গলিতে রাতের অন্ধকারে ছিনতাইয়ের আশংঙ্কা দেখা দিয়েছে। সর্বস্তরের মানুষের মনে থাকে ছিনতাইয়ের ভয়! এনিয়ে জনমনে এক ধরনের চাপা ক্ষোভ এবং মানুষের মধ্যে আতংঙ্ক ও ভয়ভীতি দেখা দিয়েছে। ব্যস্ততম রাস্তা গুলোতে রাতের বেলায় মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের উৎপাত বেশি লক্ষ্য করা যায়। সড়কে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি ও অপহরণের মতো ঘটনা অহরহ ঘটছে। জনমনে প্রশ্ন? বাতির নিচে অন্ধকার ঢাকা-১৮ আসন। খবর সংশ্লিষ্ট একাধিক বিশ্বস্থ তথ্য সূত্রের।

তথ্য অনুসন্ধ্যান ও সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, রাজধানীর অভিজাত এলাকা উত্তরা। এ অঞ্চলটি ঢাকা-১৮ নির্বাচনী এলাকা অন্তর্ভুক্ত। আটটি থানা এলাকা নিয়ে উত্তরা বিভাগ গঠিত। এ জনবহুল আসনটি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি)র ০১ ও ১৭ নং ওয়ার্ড এবং দক্ষিণখান, উত্তরখান, খিলক্ষেত, তুরাগ, উত্তরা পূর্ব, উত্তরা পশ্চিম, বিমানবন্দর ও ক্যান্টনমেন্ট (আংশিক) থানা এলাকা নিয়ে গঠিত। তথ্য অনুসন্ধ্যান, ইতিহাস ও সংশ্লিষ্ট সূত্র গুলোর হিসাব মতে – ঢাকা-১৮ হলো বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের ৩০০টি নির্বাচনী আসনের মধ্যে ১৯১ তম আসন। আসনটি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এর ০১, ১৭, ৪৩, ৪৪, ৪৫, ৪৬, ৪৭, ৪৮, ৪৯, ৫০, ৫১, ৫২, ৫৩ ও ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। এটি ঢাকা-১৮ জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকা। ঢাকা জেলা ও ঢাকা বিভাগের মধ্যে এটি অবস্থিত। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর হিসেব (১) মতে প্রায় মোট ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ৮৮ হাজার ৬০৮ জন। তারমধ্যে পুরুষ ভোটার: তিন লাখ এক হাজার নয়শ নয়জন, নারী ভোটার: দুই লাখ ছিয়াশি হাজার ছয়শ তিরানব্বই এবং হিজড়া ভোটার হলো মাত্র ছয় জন। ইতিহাস থেকে জানা গেছে, ২০০১ সালের বাংলাদেশ আদমশুমারিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি লক্ষ করার পর, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের পূর্বে জনসংখ্যার পরিবর্তন প্রতিফলিত করার জন্য জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনঃনির্ধারণ করে এই নির্বাচনী আসন সৃষ্টি করে। ২০০৮ সালে পুনর্নির্ধারণের ফলে ঢাকা মহানগর এলাকায় ৭টি নতুন আসন যোগ করা হয়, যার ফলে রাজধানীতে আসন সংখ্যা ১৩টি থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০টি-তে দাঁড়ায়।

গত শুক্রবার, শনিবার ও রোববার একটানা তিনদিন সন্ধ্যা থেকে শুরু করে রাত অবধি পর্যন্ত ঢাকা -১৮ নির্বাচনী এলাকাসহ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)র বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন ঘুরে পরিদর্শন করেন এ প্রতিবেদক। বিশেষ করে ঢাকা -১৮ আসনের উত্তরা ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৭ ও ১৮ নং সেক্টর, সোনারগাঁও জনপথ রোড, তুরাগের মেট্রোরেল এলাকা, চন্ডাল ভোগ থেকে শুরু করে ডিয়াবাড়ি, তারারটেক, নলভোগ, নয়ানগর, ধউর, কামারপাড়া, রাজাবাড়ি, রানাভোলা, ফুলবাড়িয়াসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ইত্যাদি। গভীর রাতে দোকানপাটের আলো নিভে গেলে কিংবা যান চলাচল কমে গেলে রাস্তায় ঘুটঘুটে অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এমন পরিবেশে পথচারী ও সাধারণ মানুষ ছিনতাইয়ের আশঙ্কা থাকে। মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের উৎপাতের আশঙ্কাও রয়েছে। এ ছাড়া অন্ধকারে রাস্তাঘাটে হাঁটতে হোঁচট খাওয়ার মতো দুর্ঘটনাও ঘটে।এদিকে উত্তরা, তুরাগ, দক্ষিণখান, উত্তরখান, খিলক্ষেত এলাকার বাসিন্দারা এ প্রতিবেদককে অভিযোগ করে বলেন, গুরুত্বপূর্ণ ও জনবহুল এলাকার রাস্তার অসংখ্য বাতিগুলো অনেক দিন ধরে নষ্ট হয়ে আছে। বাতি না জ্বলায় কিছু অংশে মুঠোফোনের বাতি জ্বালিয়ে হাঁটতে হয়। এ অংশে রাস্তার দু’পাশে বাসাবাড়ি–দোকানপাট না থাকায় আলোর অন্য উৎসও নেই। রাতে চলাচলের সময় ভয়ে থাকতে হয়। না জানি কখন কেউ অপকর্ম করে বসে। রাস্তায় আলো থাকলে অন্তত ভয় করত না বলে অনেকেই অভিযোগ করেন। এখন বর্ষাকাল চলছে। এসময় তুরাগের চন্ডাল ভোগ, তারারটেক, নিমতলিরটেক, রানাভোলা, ফুলবাড়িয়া, উত্তরা ৫ ও ১২ নং সেক্টর এলাকা সহ অনেক এলাকার রাস্তাঘাট ও ড্রেনেজ এর নির্মাণ কাজ চলমান আছে। এসময় অনেক এলাকার সড়কবাতি নষ্ট দেখা গেছে। অল্প বৃষ্টি হলেই রাস্তা গুলোতে পানি জমে এবং কাঁদা মাটিতে একাকার হয়ে যায়। জনগণের দুঃখ কষ্ট পোহাতে হয় এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। তুরাগের চন্ডাল ভোগ এলাকার প্রধান সড়কের কাজ শুরু হওয়ায় খালপাড় খিদির খাল উঁচু ব্রিজ থেকে শুরু করে তেঁতুলতলা পর্যন্ত সড়কে যানবাহন চলাচল আপাতত বন্ধ রয়েছে। ডিয়াবাড়ী, তারারটেক সহ অনেক এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, মুঠোফোনের আলো জ্বালিয়ে আমাদেরকে অনেক সময় পথ চলতে হয়। অনেক রাত হলে ভয় করে। এর মধ্যে অন্ধকারে কখন কী দুর্ঘটনা ঘটে, ঠিক নেই। রাস্তায় পর্যাপ্ত পরিমানে সড়কবাতি থাকলে এ সমস্যা হতো না।

তথ্য অনুসন্ধ্যান ও বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন এবং সকল পেশার মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ডিএনসিসির ০১ ও ১৭ নং ওয়ার্ডের উত্তরার আব্দুল্লাহপুর থেকে শুরু করে মহাখালী বাসস্ট্যান্ড, ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়ক, বিমানবন্দর সড়ক, বনানী – গুলশান সড়ক, হাতিঝিল, গুলশান লিংক রোড, গুলশান-১ ও গুলশান-২, রামপুরা- বাড্ডা মহাসড়ক, কুড়িল- বিশ্বরোড থেকে শুরু করে ষাট ফিট্ সড়ক, তেজগাঁও, সাতরাস্তা সড়ক, ফার্মগেট থেকে শুরু করে আড়ং, ফার্মগেট টু সংসদ ভবন রোড, খেজুর বাগান এলাকা, জিয়া উদ্যান এলাকা, আগারগাঁও – মিরপুর রোড, ১০ নম্বর থেকে মিরপুর ১/ ২ সনি সিনেমা হল হয়ে মাজার রোড, গাবতলী রোড, কালশী রোড, মিরপুর-বিমানবন্দর উড়ালসড়ক, গুলশান অ্যাভিনিউ, কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ, প্রগতি সরণি, বীর উত্তম রফিকুল ইসলাম সরণি, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সরণিসহ ফার্মগেট ও মোহাম্মদপুর এলাকার অনেক গলিপথে সড়কবাতি বন্ধ দেখা গেছে। এর পাশাপাশি গাবতলী বাসষ্ট্যান্ড থেকে শুরু করে বেরিবাধ হয়ে তুরাগের কামারপাড়া রোড। মিরপুরের শাহআলী, রুপনগর, পল্লবী, ভাসানটেক, বনানী, কাফরুল, খিলক্ষেত, উত্তরখান, দক্ষিণখান, উত্তরা পূর্ব, উত্তরা পশ্চিম ও তুরাগসহ অনেক এলাকায় ছোট-বড় রাস্তা, ভাঙা চূড়া সড়ক, প্রধান সড়ক, অলিগলি ও উড়ালসড়কের বাতিগুলো দীর্ঘ দিন ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। এছাড়া গত আগস্টে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার সড়কবাতির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটির প্রকৌশলীরা। এর মধ্যে কিছু এলাকায় সড়কবাতির খুঁটি ও বাতি ভাঙার ঘটনা ঘটেছে। কিছু এলাকায় বাতি পরিচালনার ডেটা কমিউনিকেশন ইউনিট (ডিসিইউ) বক্স ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব কারণে অনেক এলাকায় বাতি নষ্ট হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র ও বিদ্যুৎ শাখার তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা উত্তর সিটির আওতাধীন ৫টি অঞ্চলের সড়ক ও অলিগলিতে এলইডি সড়কবাতি রয়েছে। এর মধ্যে অঞ্চল ১–এর কম বেশি প্রায় ৭/৮ হাজার ১০৩টি বাতির মধ্যে প্রায় ৪/৫ শতাধিক বাতি নষ্ট, অঞ্চল ২–এর কম বেশি প্রায় ৯/১০ হাজার ৫২৩টি বাতির মধ্যে ২/৩শ টি বাতি নষ্ট, অঞ্চল ৩–এর ৭/ ৮ হাজার ৯০৫টি বাতির মধ্যে ৩/৪শ টি বাতি, অঞ্চল ৪–এর ৮/ ৯ হাজার ২৫০/৩০০টি বাতির মধ্যে ১০০/১৪০টি বাতি এবং অঞ্চল ৫–এর ৮/৯ হাজার বাতির মধ্যে ৪/৫ শটি বাতি নষ্ট রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা উত্তর সিটির বিদ্যুৎ শাখার এক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, নষ্ট বাতি গুলো খুঁজে বের করার পর সেটি পুনঃস্থাপনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে । এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। বাতিগুলো প্রতিদিনই রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত করা হচ্ছে। এ ছাড়া বৃষ্টি, বজ্রপাত, ওভার ভোল্টেজসহ নানা কারণে বাতিগুলো নষ্ট হয় বা বন্ধ থাকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যুৎ শাখার এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, ঢাকা উত্তর সিটিতে বর্তমানে কমবেশি প্রায় অর্ধলাখ সড়কবাতি রয়েছে। এর মধ্যে অল্প সংখ্যক কিছু নষ্ট বা বন্ধ বাতি রয়েছে। এছাড়া গত কয়েক মাসে রাস্তায় অসংখ্য সড়কবাতি মেরামত করা হয়েছে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com