“ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রিন্ট হয় না, কাঁদে গরিবের চোখ – প্রশ্ন রইল, দায় নেবে কে?”

রাহিমা আক্তার মুক্তা: বাংলাদেশে ড্রাইভিং লাইসেন্স একটি গরিব মানুষের জীবনের আশার আলো। সমাজের যে শ্রেণিটি ড্রাইভারি করে তাদের মধ্যে প্রায় ৮০% মানুষই হতদরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা, যারা নিজেরা রিকশা, অটো, প্রাইভেটকার বা পিকআপ চালিয়ে প্রতিদিনের খাবার জোগাড় করেন।

কেউ হয়তো ধার করে, কেউ জমি বিক্রি করে বা কিস্তিতে টাকা তুলে লাইসেন্সের জন্য খরচ করেন ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা পর্যন্ত। অথচ সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায় যখন জানতে পারেন—“ভাই, সিঙ্গার সিস্টেমে সমস্যা”, “প্রিন্টে আসছে না”, “সার্ভারে নাম ঢুকেনি”।

এমনকি কেউ কেউ বছরের পর বছর অপেক্ষা করেও লাইসেন্স হাতে পান না। অথচ সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির কথা। প্রশ্ন রইল—এত টাকা খরচ করেও যদি কেউ লাইসেন্স না পান, তবে তার দায় কে নেবে?

ড্রাইভিং লাইসেন্স একটি পেশার শর্ত নয়, এটি গরিবের জীবন বাঁচানোর অস্ত্র।
একজন ড্রাইভার যদি কাগজবিহীন গাড়ি চালাতে গিয়ে ধরা পড়েন, তখন আইনগতভাবে তার শাস্তি হয়। অথচ সে শাস্তি কি সিস্টেম দিচ্ছে না?

দুর্ভোগ ও বাস্তবতা:
– প্রতি মাসে হাজার হাজার মানুষ লাইসেন্স প্রক্রিয়ায় আসেন
– কিন্তু তাদের বড় অংশকে মাসের পর মাস, এমনকি বছরের পর বছর প্রিন্টের অপেক্ষায় থাকতে হয়
– এদের মধ্যে বেশিরভাগই গরিব পরিবারের মানুষ, যাদের জন্য একটি লাইসেন্স মানে একটি চাকরি

একটি বাস্তব ঘটনা থেকে জানা যায়, একজন রিকশাচালক তার ছেলে যেন গাড়ি চালিয়ে পরিবারের হাল ধরতে পারে, সেই আশায় ১৪ হাজার টাকা খরচ করে লাইসেন্স করায়। ছয় মাস পার হয়ে গেছে, আজও হাতে পায়নি লাইসেন্স। অথচ সেই ছেলেটির এখন কাজও হচ্ছে না।

প্রশ্ন রইল:
– লাইসেন্স প্রিন্ট না হওয়ার দায় কার?
– এক গরিব ড্রাইভারের স্বপ্ন ভাঙার ক্ষতিপূরণ কে দেবে?
– সিস্টেম সমস্যা হলে তার সমাধান কোথায়?
– আর এসব অনিয়মের জবাবদিহিতা কে নিশ্চিত করবে?

গরিবের হক মেরে খাওয়া বন্ধ হোক। সিস্টেম আপডেট হোক। যারা রাস্তায় জীবন বাজি রেখে গাড়ি চালায়, তারা যেন ন্যায্য হকটুকু পায়।
ড্রাইভিং লাইসেন্স যেন বিলাসিতা না হয়, হয় জীবনের অধিকার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com