স্টাফ রিপোর্টার : ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের কর্মী ইসমাইল ভুইয়া। ২০২৪ সালের জুলাইয়ের উত্তাল দিনগুলোতে উত্তরার বিএনএস সেন্টার, আজমপুর ও রাজলক্ষ্মীসহ উত্তরা পূর্ব থানা এলাকায় ছাত্র–জনতার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেছেন। পুলিশি গুলিবর্ষণের পর আহত কয়েকজনকে টেনে সরানোর চেষ্টা করেছেন; বিশৃঙ্খলার মাঝেও স্থির থেকে ভাই–বন্ধুদের সাহস জুগিয়েছেন। বাংলা ব্লকেড, কমপ্লিট শাটডাউন, মার্চ ফর জাস্টিস, মৌন মিছিল, মার্চ টু ঢাকা—এসব কর্মসূচিতে তিনি প্রত্যক্ষভাবে অংশ নিয়েছেন এবং গণঅভ্যুত্থান–বিপ্লবের ধারাবাহিকতায় “হাসিনার পতন না হওয়া পর্যন্ত মাঠে থাকার” অঙ্গীকারে ছিলেন অবিচল। এক কথায়, তিনি অকুতোভয়, সাহসী এক জুলাই যোদ্ধা—জুলাইয়ের দিনগুলোতে সামনে থাকা তরুণদের দৃশ্যমান উদাহরণ।
সেই ইসমাইল এখন ক্যান্সারে আক্রান্ত। দেশে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং শিগগিরই উন্নত সেবার জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন স্বজনরা। পাশাপাশি শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছে তারা তাঁর দ্রুত আরোগ্যের জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন।
শিক্ষাজীবন ও রাজনৈতিক যাত্রা
দক্ষিণখানের মুক্তিযোদ্ধা রোডের বাসিন্দা ইসমাইল ভুইয়া—বাবা প্রবাসী মোস্তাক ভুইয়া, মা গৃহিণী জাকিয়া সুলতানার বড় সন্তান। ২০১২ সালে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের কম্পিউটার টেকনোলজিতে ভর্তি হয়ে তিনি ছাত্রদলের রাজনীতিতে যুক্ত হন। ২০১৩ সালের অক্টোবরে একটি নির্বাচন-পূর্ব সমাবেশ থেকে ফেরার পথে ছাত্রলীগের হাতে আটক হয়ে রমনা থানায় সোপর্দ হওয়ার ঘটনা তার জীবনে গুরুতর ধাক্কা দেয়; পরবর্তীতে মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পান।
২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার’ আন্দোলনে তিনি নিয়মিত রাজপথে ছিলেন। বিএনপি ঘোষিত হরতাল, অবরোধ ও সমাবেশে ঢাকা পলিটেকনিক ছাত্রদলের কর্মী হিসেবে সামনের কাতারেই দাঁড়িয়েছেন। প্রতিপক্ষের হামলা–নির্যাতনের কারণে চার বছরের ডিপ্লোমা শেষ করতে সাত বছর লেগে গেলেও পড়াশোনা থামাননি, রাজনীতিও ছাড়েননি।
২০১৮: ধারাবাহিক কর্মসূচিতে সামনে ইসমাইল
২০১৮ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আয়োজিত একের পর এক সমাবেশ, বিক্ষোভ ও মানববন্ধনে ইসমাইলকে অগ্রভাগে দেখা যায়। সে সময় ঘোষিত ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচিসহ দলীয় বিভিন্ন র্যালি, প্রতিবাদ সমাবেশ ও স্মারকলিপি কর্মসূচিতে তাঁর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। একই সময়ে নির্বাচনসংক্রান্ত অনিয়মের প্রতিবাদেও তিনি সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। নিয়মিত অংশগ্রহণের কারণে এলাকায় অবস্থান করাও তার জন্য কঠিন হয়ে ওঠে—এমন অভিযোগ সংগঠনের সহযোদ্ধাদের।
সামাজিক উদ্যোগ
দলীয় রাজনীতির পাশাপাশি মানবিক কাজেও ছিলেন নিবেদিত। বিশেষ করে ২০২০ সালের করোনা মহামারির সময়ে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচিতে সরাসরি মাঠে কাজ করেছেন ইসমাইল—খাদ্যসহায়তা পৌঁছে দেওয়া থেকে শুরু করে বিপদাপদে স্বেচ্ছাসেবায় ছিলেন নিরলস।
সাম্প্রতিক আন্দোলন ও আহত হওয়ার ঘটনা
২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপির বয়কটের সিদ্ধান্ত ও তারেক রহমানের আহ্বানে ঘোষিত বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রতিবাদ–সমাবেশে তিনি নিয়মিত অংশ নেন। একই বছরে কোটা সংস্কার আন্দোলন ও পরবর্তী সরকারবিরোধী কর্মসূচিতেও তার উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। সহযোদ্ধাদের বর্ণনায় জুলাই–আগস্টের কয়েকটি কর্মসূচিতে রাবার বুলেটে আহত হয়েও তিনি মিছিলের সঙ্গে ছিলেন এবং আহতদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে সাহায্য করেছেন।
বর্তমান অবস্থা ও সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা
সম্প্রতি ইসমাইল ভুইয়ার ক্যান্সার ধরা পড়েছে। পরিবার ও সহযোদ্ধাদের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি চিকিৎসাধীন এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য রওনা হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইসমাইলের সুস্থতার জন্য পরিবার, সহযোদ্ধা এবং শুভানুধ্যায়ীদের কাছে দোয়া প্রার্থনা করা হয়েছে।
ইসমাইলের জন্য জুলাই রেভ্যুলেশনারি এলায়েন্স (JRA) পরিবারের পক্ষ থেকে অকুণ্ঠ দোয়া, ভালোবাসা ও সহমর্মিতা রইল বলে তাদের ফেসবুকের এক পোস্টে জানিয়েছে। এতে বলা হয়, ইসমাইলের সাহস আর অবদান আমাদের অনুপ্রেরণা—শীঘ্রই সুস্থ হয়ে ফিরে এসো, আমরা পাশে আছি।