জাতীয় নিরাপত্তা নীতি: প্রয়োজন রাজনৈতিক ঐকমত্য ও সমন্বিত কাঠামো

অনলাইন ডেক্স: স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে একটি সুসংহত জাতীয় নিরাপত্তা নীতি বা কাঠামো প্রণীত হয়নি। গত পাঁচ দশকেরও বেশি সময়ে বিভিন্ন সরকার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। তবে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি নিরাপত্তা কাঠামো ও পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা এখন বিশেষভাবে অনুভূত হচ্ছে।

রাজধানীতে আয়োজিত ‘ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে রাজনীতিবিদ, বিশেষজ্ঞ ও ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা এই অভিমত দেন। অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ (এফবিএস)।

জাতীয় স্বার্থে ঐকমত্যের গুরুত্ব
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, জাতীয় স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য অপরিহার্য। মতপার্থক্য থাকা স্বাভাবিক, তবে জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে দলগুলোর মধ্যে ঐক্য থাকা জরুরি। তিনি উল্লেখ করেন, বিশ্বের অনেক দেশেই দ্বিদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থায়ও আলোচনার মাধ্যমে জাতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যা বাংলাদেশে অনুপস্থিত।

পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সীমান্ত নিরাপত্তা
বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, আরাকান আর্মির ক্রমবর্ধমান তৎপরতা বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে। তিনি জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে পুনর্গঠন ও আধুনিকায়নের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, নিরাপত্তা কাঠামো শুধু সীমান্ত রক্ষা নয়, বরং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, খাদ্যনিরাপত্তা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সংস্কার
আমীর খসরু আরও বলেন, যেকোনো সংস্কার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে হতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি না হলে জাতীয় নিরাপত্তা কাঠামো কার্যকর হবে না।

পররাষ্ট্রনীতিতে ভারসাম্যের প্রয়োজন
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ভারত-চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, এই তিন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।

পররাষ্ট্রনীতি: গদি রক্ষা নাকি জাতীয় স্বার্থ?
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, গত ১৫ বছরের পররাষ্ট্রনীতি ছিল ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার নীতি, যা জাতীয় স্বার্থকে উপেক্ষা করেছে।

নিরাপত্তা কাঠামোর পরিধি
আলোচকরা মত দেন যে, জাতীয় নিরাপত্তা কাঠামোতে সীমান্ত নিরাপত্তার পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তি, খাদ্য নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক ভূরাজনৈতিক দিকগুলো অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

এই সংলাপে অংশ নেন পররাষ্ট্র বিশেষজ্ঞ, সাবেক কূটনীতিক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা। সকলেই একমত হন যে, জাতীয় নিরাপত্তা নীতির জন্য রাজনৈতিক ঐকমত্য এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে একটি সুসংহত কাঠামো গড়ে তোলা জরুরি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *