জাতিসংঘ মহাসচিবের আহ্বান: রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তায় বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসতে হবে

চ্যানেল7বিডি ডেক্স: জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস রোহিঙ্গাদের মানবিক সংকট নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, বাজেট সংকোচনের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দুর্দশাগ্রস্ত শরণার্থীরা, যাদের সহায়তা পাওয়া এখন অত্যন্ত জরুরি।

শুক্রবার (১৪ মার্চ) কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন এবং তাদের সঙ্গে ইফতার অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে মহাসচিব এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে, কারণ রোহিঙ্গারা চরম কষ্টের মধ্যে জীবনযাপন করছে।

মানবিক সহায়তার জরুরি প্রয়োজন
রমজান মাসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ও তাদের বাংলাদেশি আশ্রয়দাতাদের প্রতি সংহতি জানিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, আমরা একটি গভীর মানবিক সংকটের মধ্যে রয়েছি। বাজেট সংকোচনের কারণে ২০২৫ সালে প্রয়োজনীয় তহবিলের মাত্র ৪০ শতাংশ পাওয়া যাবে, যা ভয়াবহ বিপর্যয় সৃষ্টি করবে।

তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এই সংকটের ফলে খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবা সংকট দেখা দেবে, যা অনেকের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলবে।

তহবিল সংকট ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব
গুতেরেস বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী সম্পূর্ণরূপে মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। বাজেট কমানো শুধুমাত্র সংখ্যার হিসাব নয়, এটি মানবিক সংকট সৃষ্টি করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন মানবিক সংস্থা বর্তমানে তহবিল সংকটের মুখে রয়েছে, যা শরণার্থীদের মৌলিক প্রয়োজন মেটাতে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শরণার্থীদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনই স্থায়ী সমাধান
জাতিসংঘ মহাসচিব জোর দিয়ে বলেন, এই সংকটের চূড়ান্ত সমাধান মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে সম্ভব।

তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়ে বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি সংহতি জানানো এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি জরুরি। বিশ্ববাসীর অবশ্যই এগিয়ে আসা উচিত।

বাংলাদেশের উদারতার প্রশংসা
গুতেরেস বলেন, বাংলাদেশের জনগণ তাদের ভূমি, বন, পানি ও সীমিত সম্পদ রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছে। এটি বিশ্ববাসীর কাছে এক অনন্য দৃষ্টান্ত।

তিনি আরও বলেন, শরণার্থী শিবিরগুলোতে ইতিবাচক পরিবর্তন হলেও এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। ক্যাম্প ও আশ্রয়দাতারা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের সম্মুখীন। গ্রীষ্মে প্রচণ্ড গরম, ঘূর্ণিঝড় ও ভূমিধসের কারণে জীবন ঝুঁকির মুখে পড়ে।

রোহিঙ্গা সংকট বিশ্ববাসীর দায়িত্ব
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, বিশ্ব রোহিঙ্গাদের ভুলে যায়নি, এটি প্রমাণ করতে হবে। সময় নষ্ট করার সুযোগ নেই, কারণ মানবিক সহায়তা বাস্তবিক পরিবর্তন আনতে পারে।

তিনি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সহনশীলতার প্রশংসা করে বলেন, তারা শুধু সাহায্য চায় না, তারা সুযোগ চায়—শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন ও সম্মানের সঙ্গে জীবনযাপনের সুযোগ।

গুতেরেস বলেন, আমি এখানে এসেছি শুধুমাত্র রোহিঙ্গাদের দুর্দশার কথা বিশ্ববাসীকে স্মরণ করিয়ে দিতে নয়, বরং তাদের সম্ভাবনাগুলোর দিকেও নজর দিতে।

শেষ কথা
জাতিসংঘ মহাসচিব তার বক্তব্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান এবং বলেন, “রোহিঙ্গাদের প্রতি সহানুভূতি ও সংহতি প্রদর্শনের এখনই সময়।”

এই সফরের অংশ হিসেবে তিনি উখিয়ার শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেন এবং বাংলাদেশের মানবিক প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন।

তথ্যসূত্র: বাসস

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।