চাকসু নির্বাচন : ভোটগ্রহণ থেকে গণনা সবকিছুই দেখানো হবে এলইডি স্ক্রিনে : সিইসি অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন 

রেদ্ওয়ান আহমদ
বাসস: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী ১৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু), হল ও হোস্টেল সংসদ নির্বাচন। দীর্ঘ ৩৬ বছর পর এই নির্বাচন ঘিরে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, প্রশাসন সবার মাঝে এখন বিরাজ করছে এক উৎসবমুখর পরিবেশ। 

এই নির্বাচনকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন গ্রহণ করেছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতের প্রস্তুতি। প্রযুক্তিনির্ভর পর্যবেক্ষণ, বহুস্তরীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও কঠোর তদারকিতে এবারের নির্বাচনকে ‘মডেল নির্বাচন’ হিসেবে উপস্থাপনের প্রত্যাশা করছে কমিশন। 

এই নির্বাচন পরিচালনা, নিরাপত্তা প্রস্তুতি, নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা নিয়ে জাতীয় বার্তা সংস্থা বাসসের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন।

বাসস : চাকসু নির্বাচন নিয়ে কোন ধরনের অনিরাপত্তা বা চাপ অনুভব করছেন কি না? 

মনির উদ্দিন : না, কোন ধরনের অনিরাপত্তা বা চাপ অনুভব করছি না। বরং আরও আনন্দ অনুভব করছি। আমাদের শিক্ষার্থীরা আমাদেরকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছে। আমাদের নিরাপত্তা বেষ্টনি মূলত তারাই। ৪০ বছরের শিক্ষক জীবনে আমি দেখেছি, আমাদের শিক্ষার্থীরাই আমাদের সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা। ছাত্র ছিলাম, শিক্ষক হয়েছি, বিভাগের সভাপতি ছিলাম, হলের প্রভোস্ট হয়েছি। সবসময়ই দেখেছি, শিক্ষার্থীদের যদি উদ্বুদ্ধ করা যায়, তাহলে এর চেয়ে বড় নিরাপত্তা আর কিছু নেই। এই চাকসু নির্বাচনকেও সেভাবেই দেখছি, আমাদের শিক্ষার্থীরাই সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা। 

এখনো পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আমরা ব্যবহার করিনি। যদিও তারা প্রস্তুতি আছে। কিন্তু এ পর্যন্ত তাদের প্রয়োজন হয়নি। শিক্ষার্থীরা এতটাই দায়িত্বশীল যে এ পর্যন্ত কেউ কোন বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টাও করেনি। তারা অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে তাদের প্রচার-প্রচারণা কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। এরমধ্যে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার মতো কোনো ঘটনাও ঘটেনি। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের শিক্ষার্থীরা এমন কোনো কাজ করবে না, যাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। তবে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমরা অত্যন্ত সতর্ক অবস্থায় আছি। সব ধরনের প্রস্তুতি আমরা নিয়ে রেখেছি।

বাসস : নির্বাচনী কার্যক্রমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে কমিশনের সমন্বয় কীভাবে হচ্ছে?

মনির উদ্দিন : বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। সেই সিন্ডিকেটেই আমাদের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিনকে আমাদের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যেখানে আমদের কোন সমস্যা হয় বা সহযোগিতার চাওয়ার প্রয়োজন হয়, তখন আমরা ওনার মাধ্যমে প্রশাসনের কাছে চাই। আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও চাকসু নির্বাচনকে সর্বোচ্চ প্রায়োরিটি দিয়ে তাৎক্ষণিক আমাদেরকে সেই ব্যাপারে সহযোগিতা করেন। আমরা যেটা চাই, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের সাথে সাংঘর্ষিক না হলে আমরা নিশ্চিন্তে সেটা পাই। 

এখানে একটা বিষয় আমাদের কাছে অত্যন্ত চমৎকার লেগেছে, যদিও আমাদের একমাত্র অথরিটি হলো বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য। তবুও কমিশন গঠনের পর থেকে আজ পর্যন্ত তিনি আমাদের কোন কিছুতে কখনো হস্তক্ষেপ করেননি। আমরা সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে পারছি। এটা আমাদের কাছে সবচেয়ে ইতিবাচক দিক।

বাসস : কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুললে আপনি কীভাবে জবাব দেবেন?

মনির উদ্দিন : আমি স্পষ্ট ভাষায় বলছি, কোনো ছাত্র সংগঠন বা দলের বক্তব্য আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রর্থীদের অভিযোগ। তারা কিছু বলছে কিনা। কোনো প্রার্থী যদি অভিযোগ করে, তাকে সুনির্দিষ্টভাবে বলতে হবে কী অভিযোগ। সেই অভিযোগ আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখব। 

আমরাই প্রথম একটি ছাত্র সংসদ নির্বাচন কমিশনের সকল সদস্যকে শপথ পাঠের মাধ্যমে কমিশনার হিসেবে নিয়োগ করেছি। কে কোন দল বা মতাদর্শে বিশ্বাসী, সেটা নিয়ে আমাদের কোন প্রশ্ন নেই।

কেননা, তারা এই দায়িত্ব পালনকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পক্ষেই থাকবেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বার্থের সঙ্গে নিজেদের বিশ্বাস বা দলীয় আদর্শকে সম্পৃক্ত করবেন না, এই শপথ তারা নিয়েছেন। এরপরও কেউ যদি নিয়মবহির্ভূত কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করেন, আর আমার কোনো প্রার্থী সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ করে, তাহলে আমরা তার কাছ থেকে ব্যাখ্যা চাইব এবং প্রয়োজন হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো। 

বাসস : নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে?

মনির উদ্দিন : নির্বাচনের প্রতিটি ধাপে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গাইডলাইন মেনে চলার চেষ্টা করছি। ভোটার তালিকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রণয়ন করা হয়েছে। মনোনয়ন দাখিল ও প্রার্থিতা যাচাইও নির্ধারিত নিয়মে সম্পন্ন হয়েছে। ভোটের প্রস্তুতি, আইনশৃঙ্খলা এবং জবাবদিহিতার বিষয়ে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক। ভোটের দিনে প্রত্যেক ভবনে ওই অনুষদের ডিন রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। 

শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে আমরা ভোটগ্রহণ কার্যক্রম আবাসিক হল থেকে অনুষদ ভবনে নিয়ে এসেছি। শিক্ষার্থীদের অনুরোধে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রস্তুত করেছি, যাতে জাল ভোটের সুযোগ না থাকে। ব্যালট বাক্সগুলো ট্রান্সপারেন্ট রাখা হয়েছে। ব্যক্তিগত পছন্দ বা পক্ষপাতের কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। প্রতিটি বিষয় আমরা একদম পরিষ্কারভাবে পরিচালনা করেছি। সুতরাং প্রশ্ন তোলার সুযোগই নেই।

শুধু তাই নয়, প্রতিটি ব্যালট পেপারে আলাদা নিরাপত্তা কোড থাকবে। এই কোডের মাধ্যমে আমরা যাচাই করতে পারব, ব্যালটটি আসল না নকল। কোনো বহির্ভূত কাগজ যদি ওএমআর মেশিনে আসে, আমরা সঙ্গে সঙ্গে সেটি শনাক্ত করতে পারব। ব্যালটে প্রার্থীর নাম ও ব্যালট নম্বর থাকবে। পাশে বৃত্ত থাকবে। ভোটাররা সেটি ভরাটের মাধ্যমে তার ভোট নিশ্চিত করবে। তাছাড়া, নিরাপত্তা ব্যবস্থাও বহুমাত্রিক। এত স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনি ভেঙে কেউ অনিয়ম করতে পারবে বলে আমরা মনে করি না। তবুও যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি। 

বাসস : ভোটগ্রহণ ও গণনা কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবেন কীভাবে?

মনির উদ্দিন : ভোটগ্রহণের দিন প্রতিটি ভোটকক্ষে একজন করে প্রিজাইডিং অফিসার থাকবেন। পোলিং অফিসার হিসেবে একজন শিক্ষক ও একজন কর্মকর্তা দায়িত্বে থাকবেন। এই তিনজনের সঙ্গে একজন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী ও একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী, একজন রোভার স্কাউট সদস্য এবং একজন বিএনসিসির সদস্য যুক্ত থাকবেন। এছাড়া প্রত্যেক প্রার্থী প্রতি ভোটকক্ষে একজন করে পোলিং এজেন্ট নিয়োগ দিতে পারবেন।

ভোটকক্ষে ব্যালট বাক্স পৌঁছানোর পর প্রথমেই উপস্থিত সবার সামনে বাক্সটি খুলে দেখানো হবে। এর ভেতরে কিছু আছে কি না তা যাচাই করে সেটি তালাবদ্ধ করে সিল করা হবে। এরপর ভোটাররা এসে ভোট প্রদান করবেন। প্রতিটি কেন্দ্রে যতজন ভোটার আছেন, ঠিক ততসংখ্যক ব্যালটই পাঠানো হবে। এর বেশি একটি ব্যালটও পাঠানো হবে না। ভোটগ্রহণ শেষে যদি কোনো ব্যালট অব্যবহৃত থাকে, সেগুলো প্যাকেট করে সিল করে সঙ্গে সঙ্গে ফেরত নিয়ে আসা হবে। অর্থাৎ, ব্যবহারের ব্যালট যাবে ব্যালট বাক্সে, আর অব্যবহৃত ব্যালট সিল করে আলাদাভাবে সংরক্ষণ করা হবে।

আর নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভোটকক্ষ ছাড়া বাকি সব জায়গায় সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হবে। শুধুমাত্র গোপন ভোটকক্ষে কোনো ক্যামেরা থাকবে না। এছাড়া প্রতিটি কেন্দ্রের সামনে থাকবে বড় এলইডি স্ক্রিন, যেখানে সরাসরি ভোট পরিস্থিতি দেখা যাবে। ভোটগ্রহণ থেকে ভোট গণনা পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াটি ভিডিও ডিসপ্লের মাধ্যমে সবার সামনে প্রদর্শন করা হবে, যাতে সবাই দেখতে পারেন কোথায় কী হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভ্রাট হলেও সবকিছু রেকর্ড করা হবে। কোনো কারণে যদি কোনো ডিসপ্লে বন্ধ হয়ে যায়, সেক্ষেত্রেও রেকর্ড সংরক্ষিত থাকবে। যাতে কেউ চ্যালেঞ্জ করলে আমরা প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারি।

বাসস : ভোট গণনা কীভাবে ও কোথায় হবে?

মনির উদ্দিন : ভোটগ্রহণ শেষ হলে গোপন ভোটকক্ষ থেকে ব্যালট বাক্স প্রথমেই চলে যাবে প্রিজাইডিং অফিসারের কক্ষে, যেখানে সংশ্লিষ্ট সবাই উপস্থিত থাকবেন। এরপর সব ব্যালট বাক্স রিটার্নিং অফিসারের কক্ষে জমা হবে,অর্থাৎ ডিন অফিসে। সেখানেই মূলত ভোট গণনার কাজ শুরু হবে। পাঁচটি অনুষদ ভবনের পাঁচজন ডিনের কক্ষেই ভোট গণনার কাজ সম্পন্ন হবে। 

সেখানে স্ক্যানার ও পর্যাপ্ত জনবল (ম্যানপাওয়ার) থাকবে। আমরা প্রতিটি ব্যালট দুইবার স্ক্যান করব। প্রথমবার ডিন অফিসের স্ক্যানার দিয়ে, দ্বিতীয়বার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি অফিসের স্ক্যানার দিয়ে। এই দুটি স্ক্যানিং ফলাফল যখন একেবারে মিলে যাবে, তখনই আমরা চূড়ান্তভাবে সেই ফলাফল ঘোষণা করব। যদি কোনো কারণে ফলাফলে অমিল বা ব্যত্যয় দেখা দেয়, তাহলে ব্যালটগুলো পুনরায় স্ক্যান করা হবে, যতক্ষণ না ব্যালটের ফলাফল দুইটি স্ক্যানিংয়ের সঙ্গে পুরোপুরি মিলে যায়।

বাসস : এ বছরের অন্যান্য ছাত্র সংসদ নির্বাচন থেকে এখানে কী কী পরিবর্তন বা নতুনত্ব আনা হয়েছে?

মনির উদ্দিন : ডাকসুতে এক ধরনের নির্বাচন পরিচালনা করা হয়েছে, আর জাকসুতে আরেক ধরনের। আমরা দুই জায়গা থেকে কিছু আইডিয়া নিয়েছি, আবার কিছু নিজেরাও ভেবেছি। মূলত আমরা নির্বাচন প্রক্রিয়াটিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার জায়গায় নতুনত্ব এনেছি। নির্বাচনে ডিন, প্রভোস্ট, বিভাগীয় সভাপতি ও শিক্ষকদের সরাসরি সম্পৃক্ত করা হয়েছে।

ব্যালট পেপারেও নতুনত্ব আনা হয়েছে। আমাদের ব্যালট পেপারে শুধু ব্যালট নম্বরই থাকবে না, থাকবে প্রার্থীর নামও। প্রথমে প্রার্থীর নাম, এরপর ব্যালট নম্বর, তারপর বৃত্ত থাকবে। ভোটাররা সেই বৃত্ত ভরাট করেই ভোট প্রদান করবেন।

তাছাড়া আমরা ব্যালট ছাপানোর ব্যাপারেও একদম স্বচ্ছ থাকার চেষ্টা করছি। আমাদের নিজস্ব তত্ত্বাবধানে, নিজস্ব লোকের উপস্থিতিতে এবং কমিশনের সরাসরি নজরদারিতে ব্যালট ছাপানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই পুরো প্রক্রিয়াটি সরাসরি আমার নেতৃত্বেই সম্পন্ন হচ্ছে। এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলার সুযোগই নেই। আমি না বললে কেউ জানতেও পারবে না। এমনকি যে ব্যালট তৈরি করছে, সেও না।

বাসস : নির্বাচন ঘিরে কতো স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে এবং নির্বাচন কমিশন কী ধরনের নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়েছে?

মনির উদ্দিন : নির্বাচন ঘিরে ক্যাম্পাস এবং এর আশেপাশে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। শাটল ট্রেন ও বাসের যাত্রাপথের শুরু থেকে পুরো রাস্তুয় কঠোর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা থাকবে।

এক নম্বর গেট থেকে ক্যাম্পাসের বাইরে পাঁচজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পাঁচটি মোবাইল কোর্ট বসানো হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশ সম্পূর্ণ ঘেরা থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় এমন কেউ বা যাদের শিক্ষার্থী পরিচয়পত্র কিংবা কমিশনের অনুমোদিত কার্ড নেই, তারা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে না। অর্থাৎ নির্বাচনী কর্মকর্তা-কর্মচারী, পোলিং এজেন্ট, ভোটার ও সাংবাদিক ছাড়া অন্য কেউ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে না।শুধু তাই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের পর থেকে ভোটের লাইনে দাঁড়ানো পর্যন্ত প্রত্যেককে আরও তিন ধাপে চেক করা হবে।

সামগ্রিক নিরাপত্তার জন্য থাকবে বিএনসিসি, রোভার স্কাউট, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা দপ্তর, পুলিশ, স্ট্রাইকিং ফোর্স, রিজার্ভ ফোর্স, ফায়ার সার্ভিস, র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। বিজিবি ও সেনাবাহিনীর বিষয়েও আমরা চিঠি দিয়েছি। যদি বড় কোন সমস্যা হয়, সেক্ষেত্রে তারা আসবেন। এছাড়া নির্বাচনের দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে পাঁচ ভবনে পাঁচজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। সুতরাং নিরাপত্তা নিয়ে আমরা আলাদা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। তবে, আমরা বিশ্বাস করি আমাদের শিক্ষার্থীরা এমন কোন কাজ করবে না যাতে একশনে যেতে হয়।

বাসস : ভোটারদের জন্য নির্বাচনের দিনে বিশেষ কোনো সহায়তা থাকবে?

মনির উদ্দিন : আমরা ইতোমধ্যেই ভোটার ও প্রার্থীদের সঙ্গে তিন দফায় মতবিনিময় সভা করেছি। ভোটারদের পরিবহন ব্যবস্থার জন্য রেললাইনের সক্ষমতা অনুযায়ী শাটল ট্রেনের শিডিউল বাড়ানো হয়েছে। শিডিউলের ফাঁকে যাতায়াতের সুবিধার্থে কিছু বাসের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। ভোটের দিন প্রতি দুই ঘণ্টা পরপর আমরা ঘোষণা দেবো, ভোট কেমনভাবে কাস্ট হচ্ছে, কত শতাংশ ভোট পড়েছে, সবকিছু ঠিকঠাক আছে কি না, এসব বিষয়ে সবাইকে নিয়মিতভাবে অবহিত করা হবে। এছাড়া, এম্বুল্যান্স, মেডিকেল টিম ও পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা রাখা হবে। 

বাসস : ভোটারদের প্রতি আপনার কোনো নির্দেশনা বা বার্তা আছে কি?

মনির উদ্দিন : আমরা ভোটারদের প্রতি অত্যন্ত খুশি, বিশেষ করে প্রার্থীদের ব্যাপারে। তারা এ পর্যন্ত আমাদের যে পরিমাণ সহযোগিতা করেছে, তা সত্যিই কল্পনাতীত। আমি চাই, ভোটাররা হাস্যোজ্জ্বল ও নির্বিঘ্নে ভোটকক্ষে এসে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচিত করুন। তারা একটি উৎসবমুখর নির্বাচনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে জাতি, দেশ ও বিশ্বের সামনে একটি মডেল হিসেবে উপস্থাপন করুক, এটাই আমার প্রত্যাশা।

সবচেয়ে বড় কথা হলো, এই ভোটটা আমার নয়, এই ভোট কমিশনের নয়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেরও নয়। এটি শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। এটি তাদের অধিকারের বিষয়। শিক্ষার্থীরা যদি এটাকে বুঝে এবং তাদের যোগ্য প্রার্থী নির্বাচিত করে, সেটাই হবে আমাদের প্রকৃত সাফল্য। আমরা সেই মুহূর্ত দেখার জন্যই অপেক্ষা করছি। 

বাসস :আমাদেরকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। 

মনির উদ্দিন : আপনাদেরকেও ধন্যবাদ। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com