এম এস আই জুয়েল পাঠান : গাজীপুরে টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানসহ আশপাশের তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ আইন ২০১৮ এর ৩০ ও ৩১ ধারায় পুলিশ কমিশনারকে প্রদত্ত ক্ষমতা বলে ১৮ ডিসেম্বর দুপুর ২টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিশ্ব ইজতেমা ময়দানসহ আশপাশের ৩ কিলোমিটার গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ এলাকায় নিম্নলিখিত আদেশ বলবৎ থাকবে।
১.বিশ্ব ইজতেমা মাঠে জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ।
২. পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ইজতেমা মায়দানসহ আশপাশের ৩ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে দুই বা ততোধিক ব্যক্তি একত্রে ঘোরাফেরা বা জমায়েত এবং মিছিল সমাবেশ করতে পারবে না।
৩. কোনো ধরনের অস্ত্র-শস্ত্র, ছুরি, লাঠি, বিস্ফোরক দ্রব্যাদি বা এ জাতীয় কোনো পদার্থ বহনে নিষেধাজ্ঞা।
৪. কোনো প্রকার লাউড স্পিকার বা উচ্চস্বরে শব্দ করতে পারবে না।
আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান বলেন, মেট্রোপলিটন এলাকার জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। ইজতেমা ময়দানের নিয়ন্ত্রণে সরকার, সবাইকে মাঠ ছাড়ার নির্দেশ
সংঘর্ষের ঘটনায় গাজীপুরে টঙ্গীর ইজতেমা মাঠ সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। মাওলানা জুবায়ের ও মাওলানা সাদের অনুসারীদের কেউই মাঠে প্রবেশ করতে পারবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কোনো পক্ষকে ইসলামের স্বার্থে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বানও জানানো হয়েছে।
আজ বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) তাবলিগের দুই পক্ষের হতাহতের ঘটনায় সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মঙ্গলবার গভীররাতে মাঠ দখল নিয়ে মাওলানা সাদ ও জুবায়েরপন্থি অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন।
এ বিষয়ে শুরায়ে নেজামের মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান জানান, ‘রাতের আঁধারে সাদপন্থীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে শুরায়ে নেজামের তাবলিগের সাথীদের উপর অতর্কিত হামলা করে। এতে শাতাধিক আহত ও নিহতের ঘটনা ঘটে। তারা মাঠ দখলে নিয়ে নেয়।
শুরায়ে নেজামের সাথীরা আহত অবস্থায় ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে অবস্থান করছেন। আর তাই কিছু সাথী বিশ্ব ইজতেমার মাঠ বুঝিয়ে দেয়ার দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছেন।’
নিহতের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘সাদপন্থীদের হামলায় আমাদের তিন সাথী ইন্তেকাল করেছেন।’
এদিকে সাদপন্থীদের মিডিয়া সমন্বয়ক মুহাম্মদ সায়েম বলেন, ‘বিশ্ব ইজতেমার মাঠ আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। আমাদের বেলাল হোসেন নামের এক সাথীর ইন্তিকাল হয়েছে।এর আগে, মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) রাত ৩টার দিকে টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে সাদপন্থীরা বাহির থেকে হঠাৎ হামলা চালায় বলে দাবি করে জুবায়েরপন্থীরা। এতে শতাধিক আহতের ঘটনা ঘটে। হতাহতদের ঢাকা মেডিক্যালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
নিহতরা হলেন- কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া থানার এগারসিন্দু গ্রামের বাসিন্দা বাচ্চু মিয়া (৭০) ও ঢাকার দক্ষিণখানের বেড়াইদ এলাকার বেলাল (৬০) ও বেলাল হোসেন (৫৫)।স্থানীয় সূত্র জানায়, রাত ৩টার দিকে সাদপন্থীরা তুরাগ নদীর পশ্চিম তীর থেকে কামারপাড়া ব্রিজসহ বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে ইজতেমা মাঠে প্রবেশ করতে থাকে। এ সময় মাঠের ভেতর থেকে যোবায়ের পন্থীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। জবাবে সাদপন্থীরাও পাল্টা হামলা চালায়।
একপর্যায়ে সাদপন্থীরা মাঠে প্রবেশ করলে উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে রাতে দুজন ঘটনাস্থলে ও বুধবার সকাল ৭টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একজনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় শতাধিক লোক আহত হয়েছেন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন টঙ্গী পশ্চিম থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসকন্দার হাবিব।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা দুজন নিহতের তথ্য পেয়েছি। ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে প্রশাসন।
টঙ্গী আহ্সান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সিনিয়র ব্রাদার হাফিজুল ইসলাম জানান, টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে দুপক্ষের সংঘর্ষে হতাহতদের হাসপাতালে আনা হয়। তবে অবস্থা গুরুতর হওয়ায় আহত কয়েকজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।