আনোয়ার হোসেন রানা,গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধিঃ গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী ইউনিয়নের কুকড়াহাট গ্রামে এক হৃদয়বিদারক মানবিক বিপর্যয় সামনে উঠে এসেছে। পঙ্গু বাবার কাঁধে ক্যান্সার আক্রান্ত সাত বছরের কন্যা খাদিজার চিকিৎসার ভার এখন সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে।
২০০৫ সালে ঢাকায় কনস্ট্রাকশন কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন আনোয়ার ইসলাম। ওই দুর্ঘটনার পর তিনি পঙ্গুত্ব বরণ করেন। বর্তমানে চলাফেরা করেন একটি জরাজীর্ণ জোড়াতালি দেওয়া হুইলচেয়ারে। সেই সময় থেকেই বন্ধ হয়ে যায় পরিবারের একমাত্র উপার্জনের পথ।
বড় ছেলে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে আত্মীয়-স্বজনের সহায়তায়। এর মধ্যেই হঠাৎ এক নতুন দুর্যোগ নেমে আসে—তার ছোট মেয়ে খাদিজা আক্তার (৭) হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে।
প্রায় চার-পাঁচ মাস আগে খেলতে গিয়ে হঠাৎ পড়ে গেলে খাদিজার ডান পায়ে ব্যথা অনুভব হয়। স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করেও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তাকে ভর্তি করা হয় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা জানান—”খাদিজা ‘অস্টিওসারকোমা’ নামক হাড়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত। যা সাধারণত শিশুদের এবং অল্প বয়স্কদের মধ্যে দেখা যায়। এটি হাড়ের মধ্যে ক্যান্সারযুক্ত কোষ তৈরি হওয়ার কারণে হয়ে থাকে। অস্টিওসারকোমা শরীরের যেকোনো হাড়েই হতে পারে,তবে এটি সাধারণত লম্বা হাড়ে বেশি দেখা যায়।”
চিকিৎসকরা দ্রুত ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু চিকিৎসার খরচ প্রতিদিন প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা হওয়ায় বিপন্ন পরিবারটির পক্ষে তা বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। খাদিজার ডান পা দিন দিন ফুলে যাচ্ছে এবং জটিল রূপ নিচ্ছে।
খাদিজার মা বলেন,“ডাক্তারের কাছে যাই,পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সবাই ফেরত পাঠায়। টাকার অভাবে মেয়ের ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে পারছি না। আমার স্বামী পঙ্গু হওয়ার পর থেকে সংসার চালাতেই আমাদের অনেক কষ্ট হয়। মেয়ের মুখের দিকে তাকাতে পারি না, বুক ফেটে কান্না আসে।”
স্থানীয় শিক্ষক বাবু মিয়া বলেন,“আমরা সাধ্যমতো সহযোগিতা করেছি, কিন্তু সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারিনি। সরকারি সহায়তা পেলে পরিবারটি কিছুটা স্বস্তি পাবে। তবে দ্রুত চিকিৎসা শুরু না হলে মেয়েটির অবস্থা আরও ভয়াবহ হতে পারে।”
সুস্থ হলে ছোট্ট খাদিজা হয়তো আবার খেলার আঙিনায় ফিরতে পারবে, ফিরতে পারবে তার হাস্যজ্জল স্বাভাবিক জীবনে। তাই চিকিৎসার জন্য সমাজের বিত্তবান ও সরকারের কাছে সহায়তার আকুল আবেদন জানান ভুক্তভোগী পরিবারটি।