জেলা প্রতিনিধি: নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় হাওরে পুরোদমে বোরো ধান কাটার উৎসব, উৎপাদনে রেকর্ড। হাওর অধ্যুষিত খাদ্য উদ্বৃত্ত জেলা নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় পুরোদমে শুরু হয়েছে বোরো ধান কাটার মৌসুম। কেন্দুয়া উপজেলার মাঠজুড়ে এখন চলছে সোনালী ফসল কাটার ব্যস্ততা। বছরের একমাত্র ফসল ঘরে তুলতে দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন কৃষকেরা। চলতি মৌসুমে অনুকূল আবহাওয়া, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি, উন্নত জাতের বীজ এবং যথাসময়ে বাঁধ মেরামতের কারণে কৃষকরা এবার ভালো ফলনের আশা করছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে- চলতি মৌসুমে নেত্রকোনা জেলায় ১লাখ ৮৫ হাজার ৪৬০হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। এর মধ্যে হাওর অঞ্চলে আবাদ হয়েছে ৪১হাজার ৭৫ হেক্টর জমি। ইতোমধ্যে হাওরের প্রায় ৪০শতাংশ জমির ধান কর্তন সম্পন্ন হয়েছে।
কেন্দুয়া উপজেলার বড়কান্দা গ্রামের কৃষক মোঃ লিটন মিয়া বলেন- “গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার ধানের ফলন ভালো। এখনো প্রাকৃতিক কোন ধরনের দুর্যোগ হয়নি, শিলাবৃষ্টিও হয়নি। ফলে ধানের ফলন অনেক ভালো হচ্ছে। সার, সেচ ও বীজের কোনো সমস্যা হয়নি।”
আরেক কৃষক আসাদুল হক বলেন- এই বছর জমির আবাদ অনেক ভালো হয়েছে। আমি গতবারের চেয়ে দ্বিগুণ ফসল উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি, প্রতি কাটায় ৮৮ ধান ৮ থেকে ৯ মন উৎপাদন করেছি, তবে আগামীতে আরও ভালো করার চেষ্টা করবো।
কেন্দুয়ার বিভিন্ন গ্রামের “হাওর অঞ্চলের কৃষকদের জীবন ও জীবিকা পুরোপুরি নির্ভর করে বোরো ফসলের ওপর,তাই তারা দিনরাত এক করে মাঠে কাজ করছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন দিলদার বলেন- “বোরো মৌসুমে কৃষকদের সার্বিক সহায়তা নিশ্চিত করতে কৃষি কর্মকর্তারা সচেষ্ট ছিল। সার, উন্নত জাতের বীজ, বিদ্যুৎ এবং সেচ সুবিধা সহজলভ্য হওয়ায় কৃষকরা এবার ভালো ফলনের মুখ দেখছেন। আমরা আশা করছি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবারের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অনেক বেশি ছাড়িয়ে যাবে।”
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ নুরুজ্জামান সংগ্রাম জানান- “গত বছর বোরো ধান উৎপাদন হয়েছিল ১২লাখ ৬২হাজার ৯৫মেট্রিক টন। এবছর লক্ষ্যমাত্রা ১২লাখ ৬৩হাজার ৪৯০মেট্রিক টন। প্রতি একরে গড় উৎপাদন ৪০কেজি বা এক মন বাড়বে বলে আমরা আশা করছি। ৩০এপ্রিলের মধ্যে হাওরের ধান কর্তন শেষ হবে।”
এদিকে আগাম বন্যার শঙ্কা মাথায় রেখে কৃষি বিভাগ কৃষকদের শতকরা ৮০ভাগ পাকা ধান দ্রুত কাটার পরামর্শ দিয়েছে।
সবমিলিয়ে, কৃষি কর্মকর্তাদের তদারকি, প্রযুক্তির সহায়তা ও কৃষকের কঠোর পরিশ্রমের সমন্বয়ে উপজেলার হাওরে এবছরের বোরো ধান কাটার মৌসুমটি হয়ে উঠেছে এক আনন্দঘন উৎসব, যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় বড় অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।