কলকাতা থেকে ভারতীয়দের জন্য বাংলাদেশ ভিসা সীমিত করল

অনলাইন ডেক্স: বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননা ও ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের অপপ্রচারসহ বিভিন্ন ইস্যুর কারণে দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এরই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ভারতীয়দের জন্য ভিসা প্রদানের প্রক্রিয়া সীমিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা দুই দেশের সম্পর্কের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এমন শক্ত পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

একটি সূত্র জানিয়েছে, ৫ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) গোপন একটি দাপ্তরিক চিঠির মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার কলকাতা ডেপুটি হাইকমিশনকে নির্দেশ দেয়, ভারতীয় নাগরিকদের জন্য ঢালাওভাবে ভিসা দেওয়া থেকে সরে আসতে।

এছাড়া, ৬ ডিসেম্বর (শুক্রবার) থেকে কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনে এই নির্দেশ কার্যকর হতে শুরু করেছে।

এর আগে, ২ ডিসেম্বর আগরতলার ত্রিপুরা রাজ্যে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় বাংলাদেশ সরকার সব ধরনের কার্যক্রম স্থগিত করে এবং ভারতীয় নাগরিকদের ভিসা প্রদান প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়।

এ ঘটনার সূত্রপাত গত ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান এবং বাংলাদেশে কিছু রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা নিয়ে ভারতের গণমাধ্যমে অতিরঞ্জিত প্রচারের পর থেকে। এই প্রচারের ফলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর মধ্যে ক্ষোভ বৃদ্ধি পায়, এবং বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ শুরু হয়।

এছাড়া, সাবেক ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর ভারতের গণমাধ্যমে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার আরও তীব্র হয়। এর জেরে আগরতলার বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলা চালায় হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সদস্যরা, তারা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অপমান করে এবং সাইনবোর্ডে আগুন ধরিয়ে দেয়।

বাংলাদেশ এ ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে দোষীদের বিচারের দাবি জানায় এবং ভারতের হাইকমিশনারকে তলব করে। ভারত সরকার এই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করলেও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিরাপত্তার কারণে আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের কনস্যুলার সেবা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে।

এদিকে, কলকাতার বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনে প্রতিদিন বিভিন্ন রাজনৈতিক ও হিন্দুত্ববাদী সংগঠন স্মারকলিপি জমা দিচ্ছে। ৫ ডিসেম্বরও সেখানে জাতীয় কংগ্রেস স্মারকলিপি জমা দেয়, যদিও কলকাতা পুলিশ তাদের বিক্ষোভ মিছিল মিশনের কাছাকাছি যেতে দেয়নি। রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি শুভংকর সরকারের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল মিশনে গিয়ে স্মারকলিপি জমা দেয়।

আগরতলা ঘটনার পর কলকাতায় বাংলাদেশ মিশনে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে এবং যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।