জেলা প্রতিনিধি : মানিকগঞ্জ : বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দেশে কোনো শিক্ষাব্যবস্থা ছিল না। আওয়ামী লীগের এই ১৭ বছর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে শিক্ষাব্যবস্থাকে। নৈতিকতার শিক্ষা তো মানুষকে নৈতিকভাবে উন্নত করে, মানুষের চরিত্রকে শক্তিশালী করে। কিন্তু শেখ হাসিনা এটিকে ধসিয়ে দিয়েছে। শুধু প্রশ্নপত্র ফাঁস, প্রশ্নপত্র ফাঁস। এই প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রতিযোগিতা চলেছিল।
কোনো শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল না, শুধু বাপজানের নাম, ভাই-বোনের নাম ছাড়া আর যেন কোনো ইতিহাস নেই, কোনো শিক্ষা নেই। এভাবে জোড় করে ফ্যাসিবাদের দুঃশাসনের রাষ্ট্র তৈরি করেছিল শেখ হাসিনা। রোববার (২৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টার দিকে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের এক যুগপূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভা, পুরষ্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রুহুল কবির রিজভী বলেন, যে যন্ত্রপাতি দিয়ে শেখ হাসিনা ফ্যাসিবাদ তৈরি করেছে, সেই যন্ত্রপাতি অর্থ্যাৎ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সংস্কার করতে হবে। যেই হোক না কেন কথায় কথায় যেন গুলি না করে। জনতার মিছিল, মানুষের মিছিল নানা কারণে হতে পারে, সেখানে নানা পদ্ধতি আছে। টিয়ারগ্যাস ও লাঠিচার্জ করতে পারে। এই ১৭ বছর বিএনপির কোনো মিছিল কোনো স্লোগানের শব্দ শুনলেই সেখানে আপনার শর্টগান দিয়ে গুলি আর তাতে কত মানুষ যে অন্ধ হয়েছে, কত মানুষের যে পা-হাত চলে গেছে, কেউ খোড়া হয়েছে, পঙ্গুত্ববরণ করেছে, দুই চোখ চলে যাওয়াতে অনেকে অন্ধ হয়েছে। এগুলো নিষিদ্ধ করতে হবে, নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে পুলিশ।
তাহলেই হবে সবচেয়ে বড় সংস্কার। আর সংস্কার মানুষের আহারের নিশ্চয়তা দিতে হবে এবং বিচার বিভাগের সত্যিকারের স্বাধীনতা দিতে হবে। একজন মানুষ যদি নির্যাতিত হয়, তাহলে আদালতে গিয়ে যেন ন্যায়বিচার পায়। অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, এখন নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারি। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে মাথায় রাখতে হবে, আপনার সংস্কার করুন, এমনভাবে সংস্কার করুন যাতে আর কোনো দিন ফ্যাসিবাদের উত্থান না হয়। সেই ধরণের একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন। তা না হতলে তো নানাভাবে তারা মাথা চাড়া দেবে। এখনো চালের দাম কমেনি, চালের বাজার কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। হয়তো সবজির দামটা কিছুটা কমেছে।
রিজভী বলেন, এক চালের দাম না কমার কারণে শেখ মুজিবের পাহাড় সমান জনপ্রিয়তার একেবারে ধুলায় লুটিয়ে গেল এবং ৭৫ এ পরিবারের সদস্যসহ মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু হলো। কিন্তু মানুষ তার মৃত্যুতে কেউ একবারও ইন্না লিল্লাহ বলল না। এটা আওয়ামী লীগ কখনো বিশ্লেষণ করেনি। আমার বাবার রাজত্বে বাংলাদেশ ভালো মতো চলেনি। যদি দুর্ভিক্ষে মানুষ আম ও কলাগাছের পাতা চিবিয়ে খায় আর একই সময়ে ৩২ নম্বরে ধানমন্ডির বাড়িতে সোনার মুকুট পড়ে ভাইয়ের বিয়ে হয়, এটা মানুষ ভালোভাবে নেবে না। এই বোধ শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ নেতাদের ছিল না। যদি থাকতো তাহলে দ্বিতীয়বারের মতো তারা আবারও বাংলাদেশে দ্বিতীয় বাকশাল, গণতন্ত্র হরণ করতে পারতো না।তিনি বলেন, এজন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে বলি আর যেন কোনো আয়নাঘর না হয়, আপনার এখনো সেই ব্যবস্থা নেননি কেন? চালের দামও আপনাকে কমাতে হবে, আপনি জুলাই ঘোষণার কথা বলবেন, আপনি অনেক সংস্কারের কথা বলবেন, কিন্তু মানুষের পেটে ক্ষুধা থাকবে তখন ওরা ওই ঘোষণা কিছুই শুনবে না।
আপনাকে এটাও করতে হবে, বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে, অপরাধীদেরকে ধরতে হবে, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে এবং সমাজের মধ্যে একটি শৃঙ্খলা আনতে হবে। মানুষ যাতে কমপক্ষে মোটা চাল ও মোটা কাপড় পড়ে জীবন ধারণ করতে পারে। আর এটাই জিয়াউর রহমান নিশ্চিত করেছিলেন, এটাই তার শ্রেষ্ঠ অর্জন ছিল। মানিকগঞ্জ জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের সভাপতি ডা. মো. জিয়াউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান রিতা, বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এস এ জিন্নাহ কবীর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর গোলাম হাফিজ কেনেডি প্রমুখ।