শাকিব আহমেদ, কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি : নেত্রকোণা-৩ (কেন্দুয়া-আটপাড়া) আসনের দুইবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য, কেন্দুয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক সফল চেয়ারম্যান, নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিক ও জননন্দিত ব্যক্তিত্ব ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার পিন্টু আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫। সকালবেলায় রাজধানী ঢাকার নিকুঞ্জে নিজের বাসভবনে নিঃসঙ্গ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন এই প্রবীণ রাজনীতিক। মৃত্যুর সংবাদটি প্রথম জানানো হয় তাঁর ভাগ্নে প্রবালের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের স্ট্যাটাসে। সেখান থেকেই জানা যায় জানাজার সময়সূচি। একদিনে তিনটি জানাজা — যথাক্রমে আটপাড়ার তেলিগাতী সরকারি কলেজ মাঠে, কেন্দুয়া সরকারি হাই স্কুল মাঠে এবং তাঁর নিজ গ্রাম কচন্দরায়। শেষ বিদায় জানাতে কেন্দুয়া ও আটপাড়ার সহস্রাধিক মানুষ ছুটে আসবেন তাঁর জানাজায়।
ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার পিন্টু — রাজনীতি ছিল তাঁর জীবনের অন্যতম চালিকাশক্তি, কিন্তু ক্ষমতার অহমিকা তাঁর চরিত্রে ছিল না কখনও। সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখে পাশে থাকা, অভাবীকে সাহায্য করা, নির্যাতিতের পক্ষে কথা বলা ছিল তাঁর সহজাত প্রবৃত্তি। দলীয় রাজনীতির গণ্ডির বাইরেও তিনি সকল শ্রেণিপেশার মানুষের কাছে ছিলেন আপনজন। তাঁর রাজনৈতিক জীবনে যেমন দৃঢ়তা ছিল, তেমনি ছিল সততা ও দায়িত্ববোধ।
তাঁর মৃত্যুতে কেন্দুয়া-আটপাড়া যেন হারিয়েছে এক অভিভাবককে। কচন্দরা গ্রাম যেমন হারিয়েছে তার শ্রেষ্ঠ সন্তানকে, তেমনি এই জনপদের রাজনীতি হারিয়েছে একজন ব্যতিক্রমধর্মী নেতা, যিনি ছিলেন নম্র, বিনয়ী, অথচ দৃঢ়চেতা।
ভাগ্নে তন্ময় ইউসুফ জানালেন, মৃত্যুর সঠিক সময় জানা যায়নি — কারণ তিনি একাই থাকতেন বাসায়। এই ‘একাকীত্বের মৃত্যু’ আমাদের মনে করিয়ে দেয় রাজনীতির শীর্ষে উঠেও অনেকেই জীবনের শেষ সময়গুলো কাটান নিঃসঙ্গতায়। সমাজ ও রাষ্ট্রের উচিৎ এসব মানুষদের প্রতি তাঁদের প্রাপ্য সম্মান ও যত্ন নিশ্চিত করা, বিশেষ করে তাঁরা যখন নিঃস্বার্থভাবে জীবনের বড় একটা সময় ব্যয় করেছেন জনগণের জন্য।
স্থানীয় রাজনীতিতে পিন্টু ভাইয়ের অবদান অনস্বীকার্য। সড়ক, শিক্ষা, স্বাস্থ্য কিংবা সামাজিক উন্নয়ন — সবখানে তাঁর ছোঁয়া রয়েছে। তিনি ছিলেন এমন একজন, যিনি নিজের পদের চেয়ে মানুষের কল্যাণকে বড় করে দেখতেন।
তাঁর মৃত্যুতে কেন্দুয়া-আটপাড়ার যে ক্ষতি হয়েছে, তা সহজে পূরণ হবার নয়। তাঁকে স্মরণ করতে গিয়ে অনেকেই বলছেন, “পিন্টু ভাই ভালো মানুষ ছিলেন” — এই ‘ভালো মানুষ’ হওয়ার স্বীকৃতিই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি একজন রাজনীতিকের জীবনে।
ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার পিন্টু ভাইয়ের প্রতি রইল গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। প্রার্থনা করি, আল্লাহ যেন তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউসের সর্বোচ্চ স্থানে স্থান দেন।
এই জনপদের ইতিহাসে তাঁর নাম চিরকাল শ্রদ্ধাভরে উচ্চারিত হবে। কেননা, তিনি ছিলেন শুধু একজন রাজনীতিক নয় — ছিলেন একজন ভালো মানুষ, একজন নীরব অনুকরণীয় পথপ্রদর্শক।