উত্তরায় ​কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘কেপিআর আর্ট’-এর প্রতারণার ফাঁদ!

আশরাফুল শ্রাবন : রাজধানীর উত্তরা এলাকায় ‘কেপিআর আর্ট’ বা ‘কেপিআর ইন্টারন্যাশনাল আর্ট’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের প্রতিভা বিকাশের স্বপ্ন দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটির মূল হোতা হিসেবে ইমরান মির্জা খান এবং তার দুই সহযোগী মুক্তা ও লাবনীর নাম উঠে এসেছে। একাধিক অভিভাবকের অভিযোগের ভিত্তিতে এবং প্রতিষ্ঠানটির কার্যপদ্ধতি বিশ্লেষণ করে জানা যায়, কেপিআর আর্ট মূলত এমএলএম (মাল্টি-লেভেল মার্কেটিং)-এর আদলে এক ভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে।

​প্রতারণার নতুন কৌশল: ‘ভুয়া কেপিআর আর্ট’
​অভিযোগ অনুযায়ী, এই চক্রটি পূর্বে এমএলএম-এর মতো ভিন্ন প্রকৃতির ব্যবসা চালালেও বর্তমানে ‘কেপিআর আর্ট’ নামে নিজেদের পরিচয় দিচ্ছে। তারা ফেসবুক ও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া আইডি ও পেইজ (যেমন- কেপিআর আর্ট, কেপিআর আর্ট ইন্টারন্যাশনাল আর্ট, ইমরান মির্জা খান ইত্যাদি) ব্যবহার করে প্রচার চালায়। তাদের মূল প্রতারণার কৌশল স্কুল শিক্ষকদের মাধ্যমে কমিশন ভিত্তিক অর্থ সংগ্রহ: তারা উত্তরার বিভিন্ন বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীর অ্যাকাউন্ট খোলা ও ‘এক্সামিনেশন’-এর জন্য ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা ফি নেওয়া হয়। এর ৫০% কমিশন পান স্কুল শিক্ষকরা। তারা দেশের বাইরে ‘এক্সামিনেশন’ বা পরীক্ষার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নেয়।

​প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার্থীদের ‘ক্রেস্ট’ (যেমন ‘দি টাইটেন’ ক্রেস্ট) ও ‘ক্রেস্ট সার্টিফিকেট’ দেয়। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তাদের কোনো সরকারি লাইসেন্স, নিবন্ধন বা এই ধরনের পরীক্ষা নেওয়ার বৈধ অনুমোদন নেই। ফলে তাদের দেওয়া সার্টিফিকেট বা ক্রেস্টের কোনো মূল্য বা গ্রহণযোগ্যতা নেই। প্রতিষ্ঠানটির কোনো স্থায়ী অফিস নেই। তারা কৌশল হিসেবে উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের ১৬ নম্বর রোডের ১৮ নম্বর বাড়ির তৃতীয় তলায় সাময়িকভাবে অফিস স্থাপন করেছে বলে জানা যায়। এর আগে তারা গুলশান, সাভার ডিএসএস-এ অস্থায়ীভাবে অফিস পরিচালনা করত। অভিযোগ রয়েছে, চাপ সৃষ্টি হলেই তারা দ্রুত স্থান পরিবর্তন করে লাপাত্তা হয়ে যায়, যা তাদের ব্যবসায়িক কৌশল।

অভিযোগ ও আইনগত পদক্ষেপ
​একাধিক অভিভাবক অভিযোগ করে জানিয়েছেন, শিশুদের প্রতিভা বিকাশের স্বপ্ন দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া অত্যন্ত জঘন্য কাজ। তারা প্রতারকদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।এ বিষয়ে উত্তরা পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন আমরা অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত্র সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা না হবে​।

​অভিযোগে আরও জানা যায়, প্রধান প্রতারক ইমরান মির্জা খান একসময় বিগত সরকারের বড় এক নেতার সহযোগী ছিলেন। এই যোগাযোগের সূত্র ধরেই তিনি উত্তরা এলাকার বেসরকারি স্কুলগুলোতে সহজে প্রবেশাধিকার পান এবং তার প্রতারণার ব্যবসা চালিয়ে যান বলে গার্জিয়ানদের ধারণা। অভিভাবকরা প্রশ্ন তুলেছেন, সরকারি অনুমোদন ছাড়া এবং শিক্ষকদের যোগসাজশে কীভাবে এই চক্রটি স্কুলগুলোতে ঢুকে এমন প্রতারণা চালাচ্ছে?

​সচেতন মহল এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রশাসনের কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছেন, যেন দ্রুত এই চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয় এবং কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিয়ে এমন প্রতারণা অবিলম্বে বন্ধ করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com