আমরা ২৫ মার্চ রাতে স্বাধীনতার জন্য বিদ্রোহ করেছি…. জিয়াউর রহমান

বাসস : ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কাল রাত-পরবর্তী তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিয়ে ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ দৈনিক বাংলায় একটি জাতির জন্ম’ শীর্ষক নিবন্ধ লিখেছিলেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। ১৯৭৪ সালে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সাপ্তাহিক বিচিত্রা নিবন্ধটি পুনঃপ্রকাশ করে।১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কাল রাতে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী যখন নিরীহ বাঙালিদের ওপর সামরিক অভিযান চালানো শুরু করে, তখন আমি তৎকালীন অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের নেতৃত্ব দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলাম। এটি ছিল চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আমি বলেছিলাম- আমরা বিদ্রোহ করছি।

১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ দৈনিক বাংলায় প্রকাশিত একটি জাতির জন্ম’ শীর্ষক নিবন্ধে এসব কথা বলেছিলেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান।

১৯৭৪ সালে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সাপ্তাহিক বিচিত্রা নিবন্ধটি পুনঃপ্রকাশ করে। সাংবাদিক ও লেখক মাহফুজ উল্লাহ রচিত ‘প্রেসিডেন্ট জিয়া অব বাংলাদেশ এ পলিটিক্যাল বায়োগ্রাফি’ বইয়ে এই নিবন্ধের উল্লেখ রয়েছে।সাবেক সেনাপ্রধান এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম নেতা মেজর জিয়াউর রহমান তার নিবন্ধে নিজের স্কুলজীবন, পাকিস্তান আমলে সামরিক একাডেমির ক্যাডেট জীবন, পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) অস্থির পরিস্থিতি এবং মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।

জিয়াউর রহমান লিখেছেন, স্কুলজীবন থেকেই পাকিস্তানিদের মনোভাব আমাকে ব্যথিত করত। আমি জানতাম, তারা আমাদের গভীরভাবে ঘৃণা করে। আমার অনেক বন্ধুর কাছ থেকে আমি এরকম অনেক গল্প শুনেছি। তাদের পরিবারে যা আলোচনা হতো, তারা স্কুলে এসে আমাদের বলত।

তখন থেকেই আমি মনে মনে একটি স্বপ্ন লালন করতাম- যদি সুযোগ পাই, একদিন পাকিস্তানিদের অস্তিত্বের ভিত্তিমূলে আঘাত হানব। গভীর যত্ন ও ভালোবাসার সঙ্গে আমি এই চিন্তাটি লালন করতাম।

পাকিস্তানি মিডিয়া, বুদ্ধিজীবী, সরকারি কর্মচারী, সেনাবাহিনী এবং সাধারণ জনগণ কীভাবে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনকে তাদের রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হিসেবে প্রচার করেছিল তিনি সে কথাও লিখেছেন।

১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের সময়ের উল্লেখ করে জিয়া লিখেছেন, তখন আমি দ্বিতীয় পর্যায়ের ক্যাডেট ছিলাম। কিছু পাকিস্তানি ক্যাডেট আমাদের জাতীয় নেতাদের নিয়ে কটূক্তি করে। আমরা এর প্রতিবাদ করি এবং এ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়। পরে সিদ্ধান্ত হয় যে তর্কই যথেষ্ট নয় এটি বক্সিং প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সমাধান করা হবে।

আমি বাঙালিদের জন্মগত অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বক্সিং গ্লাভস পরি। পাকিস্তানিদের পক্ষ থেকে ক্যাডেট লতিফ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। সে শপথ করেছিল আমাকে শিক্ষা দেবে। কিন্তু বক্সিং প্রতিযোগিতা ৩০ সেকেন্ডও স্থায়ী হয়নি। আমার প্রতিপক্ষ মাটিতে পড়ে যায় এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানায়।

পাকিস্তানি শাসনামলের উল্লেখযোগ্য ও অস্থির ঘটনাগুলো তুলে ধরে জিয়াউর রহমান লিখেন এরপর এলো সেই কালরাত্রি- ২৫ মার্চ ও ২৬ মার্চের মধ্যবর্তী রাত। রাত ১টায় আমার কমান্ডিং অফিসার আমাকে একটি নৌবাহিনীর ট্রাকে করে চট্টগ্রাম বন্দরে গিয়ে জেনারেল আনসারির কাছে রিপোর্ট করার নির্দেশ দেন।

আমাকে জানানো হয়েছিল, নৌবাহিনীর একটি প্রহরী দল (পাকিস্তানি) আমাকে সঙ্গ দেবে এবং আমি চাইলে তিনজন লোক সঙ্গে নিতে পারব। তবে আমার ব্যাটালিয়নের একজন পাকিস্তানি অফিসার আমার প্রহরী হিসেবে থাকবে।

তিনি বলেন, আমরা বন্দরের দিকে রওনা হলাম। কিন্তু আগ্রাবাদে একটি ব্যারিকেডের কারণে থামতে হলো। হঠাৎ মেজর খালেকুজ্জামান ক্যাপ্টেন অলি আহমদের একটি বার্তা নিয়ে এলেন। তিনি আমাকে একটু দূরে নিয়ে মৃদু স্বরে বললেন, ওরা (পাকিস্তানি সেনারা) ক্যান্টনমেন্ট এবং শহরে সামরিক অভিযান শুরু করেছে। অনেক বাঙালিকে হত্যা করেছে।

এরপর জিয়াউর রহমান দৃঢ় কণ্ঠে ঘোষণা করেন, আমরা বিদ্রোহ করছি’ এবং সহযোদ্ধাদের পাকিস্তানি অফিসারদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন। এরপর তিনি নিজেই তার কমান্ডিং অফিসারের বাড়িতে গিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করেন।

জিয়াউর রহমান লিখেছেন, যখন ব্যাটালিয়নে ফিরে আসি, দেখি সব পাকিস্তানি অফিসারকে গ্রেপ্তার করে একটি ঘরে রাখা হয়েছে। আমি অফিসে যাই এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমআর চৌধুরী ও মেজর রফিকের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। কিন্তু কোনোভাবেই পারলাম না।

পরে আমি বেসামরিক বিভাগের টেলিফোন অপারেটরের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তাকে অনুরোধ করি জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, কমিশনার, ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের জানাতে যে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অষ্টম ব্যাটালিয়ন বিদ্রোহ করেছে এবং তারা দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করবে। বাসস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *